কাজিয়া ২
কারাটকে ফোন ক্ষুব্ধ আলিমুদ্দিনের
লিমুদ্দিনের পাশে দাঁড়ানোর আন্দোলনের জেরে তাদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েই ফেললেন প্রকাশ কারাট। মঙ্গলবার দিল্লিতে যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে হেনস্থা করা হয়েছে, তাতে বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা ক্ষুব্ধ। সেই ক্ষোভের কথা দলের সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েও দিয়েছেন তাঁরা।
গত কাল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দফতর থেকে কারাটকে ফোন করেন বিমানবাবু। বুদ্ধবাবু তখন তাঁর পাশেই ছিলেন। সম্পাদকমণ্ডলীর বাকি সদস্যদের ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। সিপিএম সূত্রের খবর, বিমানবাবু কারাটকে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর আগে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কেন আলোচনা করা হল না! দিল্লি রাজ্য কমিটি এই কর্মসূচি নিয়েছিল। তাতে সায় দেওয়ার আগে কারাট কেন আলিমুদ্দিনের সঙ্গে এক বার কথা বলে নিলেন না, সেই প্রশ্নও ওঠে। বিমান-বুদ্ধের অভিযোগ, মমতার বিরুদ্ধে জঙ্গি আন্দোলন, এ রাজ্যে সিপিএম-কে আরও এক বার কোণঠাসা করে ফেলেছে। নানা ঘটনায় তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষের কারণে পায়ের তলায় যেটুকু জমি জোগাড় করা গিয়েছিল, এই ঘটনায় তা-ও খোয়া যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
কিন্তু আলিমুদ্দিন যে ভাবে দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চাইছে, জঙ্গি আন্দোলন না-করে নতুন সিপিএম তৈরি করার কথা বলছে, সেটা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকেরই না-পসন্দ। এই কট্টরবাদী নেতাদের মতে, কেরলে যেমন কংগ্রেস সরকার শপথ নেওয়ার পরের দিন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি আন্দোলন শুরু হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গেও সেই কৌশল নেওয়া দরকার। তৃণমূলের মারের বিরুদ্ধে পাল্টা মারের রাস্তায় যাওয়ার পক্ষপাতী এই নেতারা।
বিমান-বুদ্ধরা এই প্রবণতায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁদের যুক্তি, কেরল ও পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। কেরলে পাঁচ বছর অন্তর ক্ষমতা বদল হয়। কিন্তু এ রাজ্যে ৩৪ বছর পরে বাম জমানার অবসান হয়েছে। সেখানে গোড়া থেকেই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে জঙ্গি আন্দোলন এই বার্তা দিতে পারে যে, ক্ষমতা হারাতেই সিপিএমের ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে। যেনতেনপ্রকারে ক্ষমতা দখল করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। ভোটারদের মনে এই ধারণা ঢুকে গেলে আখেরে দলেরই ক্ষতি হবে বলে আলিমুদ্দিনের মত।
কারাট গত কাল বিমান-বুদ্ধকে বলেছেন, তিনি রাজ্যের ব্যাপারে নাক গলাচ্ছেন না। কিন্তু প্রচ্ছন্ন ভাবে তিনি দলের কট্টরপন্থীদেরই মদত দিচ্ছেন বলে আলিমুদ্দিনের অনেক নেতার মত। তিনিও চাইছেন, মমতার সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন হোক। তাতেই সংগঠনে প্রাণ ফিরে আসবে। সিপিএমের কট্টরপন্থীদেরও বক্তব্য, দিল্লির ঘটনায় রাজ্যের নেতারা যে ভাবে দুঃখপ্রকাশ করেছেন, অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক মনোভাব নিয়েছেন, তাতে মমতারই সুবিধা হচ্ছে।
সেই মনোভাবেরই প্রতিফলন দেখিয়ে যোজনা কমিশনের সামনে সে দিন তাঁরা ঠিক কাজই করেছিলেন বলে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে দাবি করেছেন দিল্লি রাজ্য কমিটির সম্পাদক পুষ্পেন্দ্র গ্রেওয়াল। দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারার অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্য কমিটির মত, এই বিক্ষোভ আসলে তাদের সাফল্য। ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই হওয়ার ফলে দলীয় সংগঠন চাঙ্গাই হয়েছে। যা আলিমুদ্দিনের মতের সম্পূর্ণ বিপরীত।
আলিমুদ্দিন-একেজি ভবনের এই মতবিরোধে জড়িয়ে গিয়েছে এসএফআই-ও। দিল্লির ঘটনায় সংগঠনের দুই নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শতরূপ ঘোষের নাম জড়ালেও আলিমুদ্দিনের দাবি, তাঁরা কোনও ভাবেই দায়ী নন। যাবতীয় দায় দিল্লি রাজ্য কমিটির। ঋতব্রতও আজ সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছেন, অমিত মিত্রকে হেনস্থার ঘটনায় এসএফআই-এর কেউ জড়িত ছিল না। তাঁর কথায়, “আমি স্লোগান দিচ্ছিলাম। কিন্তু কারও উপরে শারীরিক নিগ্রহ করিনি। অমিতবাবুকে যে হেনস্থা করা হয়েছে, সেটাও দেখিনি।”
তা হলে কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে? দিল্লি রাজ্য কমিটির দিকে ইঙ্গিত করে ঋতব্রতর জবাব, “এসএফআই-এর কেউ অমিতবাবুকে হেনস্থা করেননি। অন্য গণ সংগঠনের কথা বলতে পারব না। এসএফআইয়ের পাশাপাশি অন্য বাম গণ সংগঠনও এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। এসএফআই এই আন্দোলনের নেতৃত্বও দেয়নি।”
দিল্লি রাজ্য কমিটির তরফে কিন্তু ঋতব্রতর দাবি উড়িয়ে বলা হচ্ছে, সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর পর এসএফআই-ই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, মমতা যেখানেই যাবেন, সেখানেই বিক্ষোভ হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই যোজনা কমিশনের সামনে বিক্ষোভের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু দিল্লি এসএফআই-তে কিছু দিন আগেই ভাঙন ধরেছে। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিট ভেঙে গিয়েছে। সেখানকার এসএফআই কর্মীরা নতুন দল গড়েছেন। ফলে সংগঠনের অবস্থা দুর্বল। সেই কারণেই বিক্ষোভে ভিড় বাড়াতে দিল্লি রাজ্য কমিটিকে সক্রিয় হতে হয়েছিল।
এই চাপানউতোরের মধ্যে একটি বিষয়ে অবশ্য একেজি ভবন এবং আলিমুদ্দিন এক মত। যোজনা কমিশনের সামনে যা-ই হয়ে থাক, এসএফআই নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। বরং রাজনৈতিক ভাবে এর মোকাবিলা করা হবে। সেই কারণেই আজ ঋতব্রতকে সাংবাদিক সম্মেলন করে গোটা ঘটনায় দায় ঝেড়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর পাশাপাশি সিপিএমের পরিকল্পনা হল, বুধবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে তৃণমূলকে দায়ী করে পাল্টা আক্রমণে যাওয়া।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.