জলীয় বাষ্পেরই কেরামতি
ঘাম-আর্দ্রতা-অস্বস্তিতে চেনা মুখ গরমের
গ্ধে দগ্ধে মারছিল। কিন্তু সেই দহনকে, সেই গরমকে যেন অচেনা ঠেকছিল এত দিন। এ বার তার দাপটের মধ্যে কীসের যেন একটা ঘাটতি মালুম হচ্ছিল। অভাবটা ছিল ঘামের। প্যাচপেচে আর্দ্রতার। অবশেষে বুধবার চেনা গরম ফিরে এল কলকাতায়। সঙ্গী ঘাম। সঙ্গী অস্বস্তিকর আর্দ্রতাও।
এর মূলে আছে জলীয় বাষ্পের খেলা। গত কয়েক দিন ধরে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল কম। তাই দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের শুকনো গরম চেপে ধরেছিল বাংলাকে। কিন্তু ছিল না ঘাম। মঙ্গলবার রাত থেকেই ভোল পাল্টে ফেলেছে আবহাওয়া। বাতাসে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। বাড়ছে আর্দ্রতা। ঝরতে শুরু করেছে ঘাম। কষ্ট না-কমুক, চেনা যাচ্ছে এ সময়ের স্বাভাবিক গরমকে।
ভোলবদল ঘটল কী ভাবে? হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখার জেরে বঙ্গোপসাগর থেকে কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। তার প্রভাবেই এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের গোড়ায় উত্তর ভারতীয় শুকনো গরম কাটিয়ে কলকাতা ফিরছে কলকাতাতেই।মহানগরে যখন প্যাচপেচে গরমের ইঙ্গিত মিলছে, তখন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র হয়েছে তাপপ্রবাহ। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ডিগ্রি বেশি হয়ে গেলেই সেটাকে তাপপ্রবাহ বলে আবহবিজ্ঞান। শুধু তা-ই নয়, বাঁকুড়া-বীরভূমের গরম এ বার হেলায় হারিয়ে দিচ্ছে পটনা, রাঁচিকে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, রাঁচিতে বুধবার যেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাঁকুড়ায় তা উঠে গিয়েছে ৪৪ ডিগ্রিতে। স্বাভাবিকের থেকে সাত ডিগ্রি বেশি। প্রায় একই অবস্থা পুরুলিয়া, বীরভূমেও। পাঁচ ডিগ্রি বেড়ে পুরুলিয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৪২। শ্রীনিকেতনেও তা-ই। আজ, বৃহস্পতিবারেও বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম-সহ কয়েকটি জেলায় তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি চলবে। তবে বিকেলের দিকে বজ্রগর্ভ মেঘ এবং হাল্কা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কাল, শুক্রবার থেকে ওই সব জেলায় তাপমাত্রা কমতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
পারদ-প্রতাপ
স্থান সর্বোচ্চ তাপমাত্রা*
বাঁকুড়া ৪৪.০ (+৭)
শ্রীনিকেতন ৪২.০ (+৫)
পুরুলিয়া ৪২.০ (+৫)
কলকাতা ৩৮.৬ (+৩)
পটনা ৪১.৫ (+৫)
রাঁচি ৩৮.৪ (+৪)
*ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বুধবার
জলীয় বাষ্প ঢোকার পাশাপাশি গত দু’দিনের তুলনায় কিছুটা হলেও গরম কমেছে মহানগরে। এ দিন কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৬ ডিগ্রি। স্বাভাবিকের তুলনায় তিন ডিগ্রি বেশি।
এ বার এপ্রিলের গোড়া থেকেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় গরমের ছবিটা বদলাতে শুরু করেছিল। প্যাচপেচে গরমের বদলে গায়ে জ্বালা ধরানো শুকনো আবহাওয়া মালুম হচ্ছিল। এই ধরনের গরম দেখা যায় উত্তর ভারতে। এ রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলির ক্ষেত্রে কিছুটা শুকনো গরম মালুম হলেও সমুদ্রের নিকটবর্তী কলকাতায় তা বিরল। এ বার বঙ্গোপসাগর থেকে যথেষ্ট জলীয় বাষ্প বাংলার পরিমণ্ডলে ঢুকছিল না। এক আবহবিদের কথায়, “সাগর থেকে যেটুকু জলীয় বাষ্প ঢুকছিল, তা টেনে নিচ্ছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি ঘূর্ণাবর্ত। ফলে দক্ষিণবঙ্গে ঝড়বৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় মেঘ তৈরি হতে পারছিল না।” গত ২৪ ঘণ্টায় সেই ছবির কিছুটা বদল ঘটেছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে উপকূলীয় ওড়িশা পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে। তার জেরেই জলীয় বাষ্প ঢুকছে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায়। বাড়ছে আর্দ্রতাও।” বুধবার মহানগরী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় সর্বাপেক্ষা আর্দ্রতা ছিল ৯২%। এ বার কি গরম থেকে রেহাই মিলবে?
আর্দ্রতা বাড়লেও মহানগর এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছেন না আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, গরম থেকে সাময়িক স্বস্তি মেলার জন্য দরকার কালবৈশাখীর। কিন্তু এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তেমন কোনও আশা দিতে পারেনি হাওয়া অফিস। কেন?
আবহবিদদের মতে, কালবৈশাখীর জন্য পরিমণ্ডলে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প ঢুকতে হবে এবং তা ঘনীভূত হয়ে উল্লম্ব মেঘ তৈরি করতে হবে। তার জেরেই কালবৈশাখী আছড়ে পড়ে দক্ষিণবঙ্গে। এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই পরিস্থিতি নজরে পড়েনি বিজ্ঞানীদের।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.