রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীর নাম করে জালিয়াতি
রামকৃষ্ণ মিশনের সদর দফতরে হাজির এক যুবক। তাঁর দাবি, যে ভাবেই হোক রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করতেই হবে তাঁকে। কিন্তু কেন?
ওই যুবক জানালেন, মিশনের স্কুলে শিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক নাকি তাঁকে নিজে ফোন করে দেখা করতে বলেছেন। আর এর পরে তিনি যা জানালেন, তাতে সন্ন্যাসীদের চক্ষু চড়কগাছ!
যুবক দাবি করলেন, চাকরি পাওয়ার জন্য টাকা নিয়ে তাঁকে বেলুড় মঠের গেটের বাইরে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও কেউ না আসায় তিনি ভিতরে চলে এসেছেন মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে। বিষয়টি যে মিথ্যা, এ কথা বলে অনেক বুঝিয়ে ওই যুবককে বাড়ি পাঠিয়ে দেন সন্ন্যাসীরা।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ার দিকের এই ঘটনার পরে বেশ বিস্মিতই হয়ে পড়েছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সন্ন্যাসীরা। যদিও তত দিনে কোচবিহার রামকৃষ্ণ মিশন থেকে বেলুড়ে মিশনের সদর দফতরে একটি ই-মেল করে ওই একই বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এর পরেই ৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ। তদন্ত শুরু করে বালি থানার পুলিশ ও হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা। প্রায় দেড় মাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানোর পরে নিমতা থেকে অশোক চট্টোপাধ্যায় (৫২) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। তিনি দমদমের ঘুঘুডাঙার বাসিন্দা। জেরায় তিনি এই প্রতারণার কথা স্বীকারও করেছেন।
রামকৃষ্ণ মিশন সূত্রের খবর, গত ২ ফেব্রুয়ারি কোচবিহার রামকৃষ্ণ মঠ থেকে স্বামী সুহিতানন্দের কাছে একটি ই-মেল পাঠানো হয়। তাতে জানানো হয়, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের স্কুলে এক লক্ষ টাকা দানের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া যাবে বলে কোচবিহার, দিনহাটা, মাথাভাঙা, জলপাইগুড়ির ‘বিবেকানন্দ যুব মহা মণ্ডল’-এর বেশ কিছু সদস্যের কাছে ফোন করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ‘আমি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ বলছি। নতুন রাজ্য সরকারের তরফে আমাদের স্কুলগুলিতে স্বশাসিত ব্যবস্থা চালু করার অনুমতি মিলেছে। তাই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এক লক্ষ টাকা ডোনেশনের মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ করব। দরকার থাকলে যোগাযোগ কর। তবে এই কথাবার্তা অন্য কাউকে কিংবা স্থানীয় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে জানানো যাবে না।’
রামকৃষ্ণ মিশনের তরফে স্বামী শুভকরানন্দ জানান, ওই ই-মেল পাওয়ার কয়েক দিন পরেই বেলুড় মঠে এসে হাজির হয় আর এক যুবক। এ ছাড়াও, সুন্দরবন, গোলপার্ক-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এই একই অভিযোগ আসতে শুরু করে বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মিশনে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বর থেকেই ফোন করা হয়েছে। তবে ফোন করার পরেই মোবাইলটি সুইচ অফ করে দেওয়া হত।
গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ফেব্রুয়ারি মাসেই গোলপার্ক মিশনের সামনে একটি রেস্তোরাঁয় এক যুবকের সঙ্গে দেখা করে নিজেকে মিশনের লোক পরিচয় দিয়ে সাধারণ সম্পাদক মহারাজের নাম করে পঁচিশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে অভিযুক্তের একটি ছবিও আঁকানো হয়। গোলপার্কের ওই যুবককে দিয়ে সেই ছবিও শনাক্ত করানো হয়। ইতিমধ্যে পুলিশ জানতে পারে, গত সেপ্টেম্বর মাসে বর্ধমানের মঙ্গলকোটের বাসিন্দা পলাশ হাজরা নামে এক যুবক বালি থানায় একই রকম একটি প্রতারণার অভিযোগ করেছেন।
এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, “সবই একে একে দুই হতে থাকে। তখনই আমরা বুঝতে পারি, এই কাজ এক জন লোকই করছে।” তখন মোবাইলের সূত্র ধরেই খোঁজ মেলে অশোকের। তাকে অনুসরণ করা শুরু হয়। শেষে মঙ্গলবার রাতে সে নিমতার বাড়িতে এসেছে খবর পেয়েই গ্রেফতার করা হয়। হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার নিশাত পারভেজ বলেন, “পলাশ-সহ আরও পাঁচ জনের থেকে ওই লোকটি কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়েছে। শনাক্তকরণের জন্য ওকে হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.