বছরখানেক আগে পেশ করা সরকারি কমিটির রিপোর্ট ঠান্ডা ঘরে পড়ে রয়েছে। এখন প্রাক্তন কোনও বিচারপতির নেতৃত্বে আবার একটি কমিটি তৈরি করার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। অটোয় শৃঙ্খলা ফেরাতে বারবার কমিটি গড়ে নতুন সরকার ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে বলে মনে করছে পরিবহণ দফতরেরই একাংশ।
রাজ্যের কোথাও মিটার ছাড়া অটো চালানো যাবে না বলে গত ৮ মার্চ নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশ ছিল, মিটারে কী হারে ভাড়া নেওয়া হবে, তা-ও ঠিক করে দিতে হবে সরকারকেই। এই কাজের জন্য রাজ্য সরকারকে আট সপ্তাহ সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিল আদালত। তার পরে এক মাস গেলেও পরিবহণ দফতর আতান্তরে পড়ে রয়েছে। দফতরের এক কর্তা বলেন, “আমরা গত সপ্তাহেই হাইকোর্টের নির্দেশ হাতে পেয়েছি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। হাইকোর্টের নির্দেশ মানতেই হবে।”
কিন্তু ট্যাক্সির মতো আদৌ অটোয় মিটার বসানো সম্ভব কি না, তার ভাড়া কত হবে, নতুন ব্যবস্থায় নিয়মকানুনই বা কী হবে তা নিয়ে বহু প্রশ্ন রয়েছে সরকারের মধ্যেই। এ দিকে, এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নতুন সরকার গঠনের এক বছরের মধ্যেই পরিবহণ দফতরের কর্তা আশিস ঠাকুরের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করেছিল রাজ্য। সেই কমিটি ২০১২ সালের জুন মাসে তাদের রিপোর্টও জমা দেয়। কিন্তু সেই রিপোর্ট এখন ঠান্ডা ঘরে। এখন হাইকোর্টের নির্দেশ পেয়ে অটো-জট ছাড়াতে ফের একটি কমিটি তৈরির পথে হাঁটতে চলেছে রাজ্য।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, জুন মাসে পেশ করা কমিটির রিপোর্টে যে সব সুপারিশ করা হয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশের সঙ্গে তার ফারাক রয়েছে। ওই রিপোর্টে দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো কলকাতাতেও অটোয় মিটার বসানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য জুড়ে সেই কাজ এক সঙ্গে করা সম্ভব নয় বলে আপাতত রুট-নির্ভর অটো ব্যবস্থা রাখার পক্ষেই মত দেয় কমিটি। তাদের সুপারিশ ছিল, অটোয় মিটার বসানোর কাজ ধাপে ধাপে করতে হবে। এ জন্য বিশেষত কলকাতায় অটো-এলাকাকে ছ’টি ভাগে ভাগ করা প্রয়োজন। তবে কমিটির সুপারিশেও অটোর ভাড়া ঠিক করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে হবে বলে সুপারিশ করা হয়।
কলকাতা হাইকোর্ট মাঝামাঝি কোনও পথ রাখতে চায় না। তাদের নির্দেশ, মিটারেই অটো চালাতে হবে। এবং দেড় মাসের মধ্যে সরকারকে তা চূড়ান্ত করতে হবে।
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের মতে, দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো কলকাতাতেও অটো মিটারে চলা উচিত। কিন্তু মহানগরে চালু বর্তমান অটো-ব্যবস্থায় কয়েকটি সুবিধে আছে। এক কর্তার কথায়, “চটজলদি মিটার চালু করতে গেলে একটা নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সরকারকে সেই দিকটি খেয়ালে রাখতে হচ্ছে।” এই সাত-পাঁচ কারণেই কলকাতার অটো-এলাকাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। সে ক্ষেত্রে কলকাতার কয়েকটি রাস্তায় সাময়িক ভাবে অটো চলাচল নিষিদ্ধ করা হতে পারে বলে ওই কর্তা জানান। তাঁর মন্তব্য, “ঠিক কোন পথে হাঁটা হবে, তা এখনও চূড়ান্ত নয় বলেই ফের কমিটি গড়ে ‘ধীরে চলো’ নীতি নেওয়া হয়েছে।”
রাজ্যে অটোর সংখ্যা ঠিক কত, তা নিয়ে সরকারের কাছে স্পষ্ট হিসেব নেই। তবে পরিবহণ দফতরের ধারণা, সংখ্যাটা লক্ষাধিক হবেই। এর মধ্যে অন্তত ৩০-৪০ শতাংশ বেআইনি। ওই কর্তা জানান, এই বিরাট সংখ্যক অটো নিয়ে চটজলদি কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। তবে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে অটোয় মিটার দিতে গেলে রাজ্যে বৈধ অটোর সংখ্যা জানা যাবে। |