মিটার ছাড়া রাজ্যের কোথাও অটো চালানো যাবে না। অটোর ভাড়া ঠিক করে দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। অটোর সামনে যাত্রী নেওয়া যাবে না। গন্তব্যের আগে কোথাও যাত্রী তোলা বা নামানো চলবে না। অটো সংক্রান্ত দু’টি জনস্বার্থের মামলায় শুক্রবার এই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তিন মাসে এই সব নির্দেশ কার্যকর করে রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে হাইকোর্টে।
হাইকোর্টের রায় নিয়ে এ দিন সরাসরি কোনও করতে চাননি পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি বলেন, “আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। ইউনিয়নগুলির সঙ্গেও কথা করব। তার পরে হাইকোর্টকে সবিস্তার বিষয়টি জানানো হবে। পুরো পরিস্থিতি বিচার করে আদালত যেমন নির্দেশ দেবে, তা-ই আমরা মানব।”
তবে হাইকোর্টের এই নির্দেশ মানা অসম্ভব বলেই মনে করছে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু-সমর্থিত অটো ইউনিয়ন। সংগঠনের নেতা বাবুন ঘোষের কথায়, “এই নির্দেশ কার্যকর করা সম্ভব নয়। এতে বহু মানুষ সমস্যায় পড়বেন। এই পরিস্থিতিতে কী উপায় হতে পারে, তা রাজ্যকেই বার করতে হবে।” তৃণমূলের অটো ইউনিয়নের নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য মনে করছেন, এর জন্য সামগ্রিক ভাবে মানসিকতা বদলের প্রয়োজন। তিনি বলেন, “আদালতের নির্দেশ না মানার কোনও কারণ নেই। দিল্লি-সহ অনেক শহরেই তো অটো মিটারে চলে। এ ব্যাপারে আমাদের মানসিকতার বদল প্রয়োজন। সেটা সকলের সঙ্গে বসে সরকারকে ঠিক করতে হবে।” |
অটোর অত্যাচার নিয়ে কলকাতা ও অন্যান্য মফস্সল শহরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই তিতিবিরক্ত। অটোর ভাড়া ঠিক করে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, চালকদের সংগঠন বা অটো মালিকদের সংগঠন। ফলে কলকাতা-সহ রাজ্যের কোথাও অটোভাড়ায় সমতা নেই। যেখানে যে সংগঠন শক্তিশালী, তাদের মর্জি অনুযায়ী ভাড়া ঠিক হয়। একই দূরত্বে ভাড়া এক-এক রকম। বৃষ্টি হলে, উত্সবের সময়ে বা রাস্তায় যানজট থাকলে ইচ্ছে মতো সেই ভাড়া আবার বাড়িয়ে দেন চালক। অটোয় যাত্রী-সংখ্যাও চালকের ইচ্ছেমতো হয়। চালকের দু’পাশে তিন জন যাত্রীও নেওয়া হয় কোথাও কোথাও। এই সব অভিযোগ জানিয়ে অসীম দাস নামে এক ব্যক্তি ও আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার দু’টি পৃথক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন।
রমাপ্রসাদবাবু বলেন, “অটো সম্পর্কে সরকার উদাসীন। মানুষের অন্য উপায় না থাকায় অটো চড়তে হয় এবং প্রতি দিন নাকাল হয়। মহিলাদের যে ভাবে অটোতে যাতায়াত করতে হয়, তা ভাবা যায় না। রাজ্যে যে ভাবে অটো চলছে, তা অনৈতিক।” রাজ্যের পক্ষে আইনজীবী পন্টু দেবরায়ের বক্তব্য, রাজ্য সরকার ভাড়া ঠিক করে দেবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আরটিও-কে তাদের এলাকায় কত অটো চলে, কোন কোন পথে চলে ইত্যাদি সবিস্তার জানাতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, “কলকাতা ও হাওড়ার ভাড়া কিছু দিনের মধ্যে ঠিক করা গেলেও গোটা রাজ্যে চালু করতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে আইনে যা আছে এবং হাইকোর্টের নির্দেশ রাজ্য সরকার পালন করবে।”
প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, মোটর ভেহিক্লস আইনের ৭৪ নম্বর ধারায় বলা আছে মিটার ছাড়া অটো চালানো যাবে না। এই রাজ্যে যা অটো নামে পরিচিত, তার আসল নাম ‘মোটর ক্যাব’। ট্যাক্সির বিকল্প হিসেবেই তা চালু হয়। বাসস্ট্যান্ড বা স্টেশনে বাড়ি থেকে পৌঁছনোর জন্যই এই অটোর ব্যবস্থা করা হয়। অন্যা রাজ্যে মিটারেই অটো চলে। ১৯৮৯ সালে মোটরযান আইনের যে সংশোধন হয়, সেখানেও বলা রয়েছে মিটারেই চলবে অটো। তা মানা হয়নি। হাইকোর্ট আইনকে অবজ্ঞা করে মিটার ছাড়া অটো চালানোর অনুমতি দিতে পারে না। গাড়ির বাঁদিকে এই মিটার লাগাতে হবে। অটোর ভিতরে ভাড়া-তালিকা বড় হরফে লিখে টাঙিয়ে রাখতে হবে। ট্যাক্সি, বাস, লঞ্চ— যাত্রিবাহী সব যানেরই ভাড়া ঠিক করে রাজ্য। অটো ব্যতিক্রম হতে পারে না বলেই এ দিন জানায় ডিভিশন বেঞ্চ। |