বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপাল
ভাষণে নেই আইনশৃঙ্খলা, নেই তাপসও
টপুজো, সবেবরাত বা করমপূজায় সরকারি কর্মচারীদের একাংশকে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা আছে। বিভিন্ন মনীষীদের জন্মদিন পালনের কথা আছে। ‘মাটি উৎসবে’র কথা আছে। উল্লেখ আছে কৃষি মেলারও। কিন্তু বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপালের প্রারম্ভিক ভাষণে রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে নেই একটা শব্দও!
আবার বাল কেশব ঠাকরে থেকে বাউল গৌর খ্যাপা পর্যন্ত গোটা দেশে প্রয়াত অজস্র ব্যক্তিত্বের জন্য শোকপ্রকাশের কথা আছে। সূর্য সেন স্ট্রিটের বাজারে অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন আছে। এমনকী, অধিবেশন শুরুর মাত্র কয়েক দিন আগে প্রয়াত কলিমুদ্দিন শামসের কথাও যথাবিহিত উল্লেখ আছে। কিন্তু কতর্ব্য পালন করতে গিয়ে দুষ্কৃতীর গুলিতে নিহত পুলিশ অফিসার তাপস চৌধুরীর জন্য কোনও শোকের কথা নেই রাজ্যপালের বক্তৃতায়!
গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার গ্রেফতারি নিয়ে বাইরে যখন হইচই, শুক্রবার বিধানসভায় তখন বিতর্ক বাধল রাজ্যপালের ভাষণে এই দুই অনুল্লেখের ঘটনা নিয়ে। এবং দুই অনুল্লেখের সঙ্গে জড়িয়ে গার্ডেনরিচের নাম। হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সংঘর্ষের জেরে দুষ্কৃতীর গুলিতে প্রাণ গিয়েছিল সাব ইনস্পেক্টর তাপসবাবুর। যে ঘটনাকে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সূচক হিসাবেই ধরা হচ্ছিল। মুখ খুলেছিলেন স্বয়ং রাজ্যপালও। নিহত তাপসবাবুর বাড়িতেও মুখ্যমন্ত্রীর আগেই পৌঁছেছিলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। অথচ বিধানসভায় সেই রাজ্যপালের জন্য তৈরি করে দেওয়া বক্তৃতায় সাধারণ আইনশৃঙ্খলা এবং তাপসবাবুর প্রসঙ্গ বেমালুম বাদই রেখে দিল রাজ্য সরকার! এক কংগ্রেস বিধায়ক যাতে কটাক্ষ করেছেন, “আইনশৃঙ্খলা নেই-ই তো বলবে কী?”
প্রত্যাশিত ভাবেই বিরোধীরা রাজ্যপালের ভাষণে এই অনুল্লেখ নিয়ে সরব হয়েছে। কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবের প্রতিক্রিয়া, “হতাশ হলাম যে, রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপালের দীর্ঘ বক্তৃতায় কোনও কথা নেই! রাজ্যপাল বাইরে বলেছিলেন, গুন্ডারাজ চলছে। অথচ মহিলাদের উপরে অত্যাচার, নেতা-মন্ত্রীদের তরফে দুষ্কৃতীদের আড়াল করা, সে সব নিয়ে ভাষণে কোনও কথা নেই। রাজ্য তো জঙ্গলের রাজত্বের দিকে যাচ্ছে!” কংগ্রেসেরই বর্ষীয়ান বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার মন্তব্য, “তাপস চৌধুরীর কথা বললেন না। খুব দুর্ভাগ্যজনক!” মানসবাবুর আরও দাবি, “আমি ১৯৮২ সাল থেকে বিধানসভায় আছি। কিন্তু এমন অসহায় ভাবে রাজ্যপালকে ভাষণ পাঠ করতে কখনও দেখিনি!”
রীতিমাফিক, রাজ্যপালের ভাষণ তৈরি করে দেয় রাজ্য মন্ত্রিসভা। তাঁর ভাষণে কোনও উল্লেখ বা অনুল্লেখের জন্য রাজ্য সরকারকেই তাই দায়ী করে থাকে বিরোধীরা। তার ব্যতিক্রম হয়নি এ দিনও। রাজ্যপালের ভাষণ নিয়ে বিতর্কের সময় অধিবেশন কক্ষে তাঁরা যা বলার বলবেন বলে জানালেও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র প্রশ্ন তুলেছেন, “নিহত পুলিশকর্মীকে নিয়ে শোক-দুঃখ কিছুই তো দেখলাম না!” রাজ্যপালের ভাষণের সময় বাম বিধায়কেরা এ দিন সভায় ঢুকেছিলেন গার্ডেনরিচ-সহ সাম্প্রতিক নানা ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন সংবলিত অ্যাপ্রন গায়ে জড়িয়ে। রাজ্যপালের বক্তৃতায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনও কথা না-থাকা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সূর্যবাবু ওই বাম বিধায়কদেরই দেখিয়ে বলেছেন, “আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আমরা যে দেখছি, ইংরেজি-বাংলায় লিখে এনেছি! আমরা রীতিনীতি মেনে চলি। বাকি যা বলার, ভিতরে বিতর্কের সময় বলব।”
রাজ্যপাল এ দিন যখন লিখিত ভাষণ পাঠ করছিলেন, বিধায়কদের হাতে-থাকা প্রতিলিপির সঙ্গে তা মিলছিল না। হইচই হচ্ছে দেখে রাজ্যপাল মাঝপথে তাঁর ভাষণের কপি বদলে বিলি হওয়া একটি বই চেয়ে নিয়ে পাঠ করতে থাকেন। বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের যে বই বিলি হয়েছে, তাতে ইংরেজির পৃষ্ঠাসংখ্যা ২৯, আবার বাংলা পুস্তিকায় পাতার সংখ্যা ১৯! ভাষণ শেষ হওয়ার পরে কংগ্রেস বিধায়ক অজয় দে প্রথম উঠে দাঁড়িয়ে আইনশৃঙ্খলার উল্লেখ না-থাকার প্রসঙ্গ তোলেন। আর সূর্যবাবু পরে মন্তব্য করেন, “রাজ্যপালকে দিয়ে সরকার ভাষণ পড়াবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ওই ভাষণে এত অসত্য কথা লেখা হয়েছে যে, রাজ্যপালকেও মাঝেমধ্যে আটকে যেতে হয়েছে! রাজ্যপালকে এক রকম বক্তৃতা পড়তে দেওয়া হয়েছে আর আমাদের বই আলাদা! এ রকম কিছু আগে কখনও হয়নি!”
বিরোধীদের অভিযোগের পরে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, “রাজ্যপালের ভাষণ সত্যনিষ্ঠ ও তথ্যনিষ্ঠ।” জঙ্গলমহল ও পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসার যে কথা রাজ্যপালের ভাষণে আছে, তাকেই আইনশৃঙ্খলার শংসাপত্র হিসাবে দেখাতে চেয়েছেন পার্থবাবু। তাঁর ব্যাখ্যা, “জঙ্গলমহল এবং পাহাড়ও তো আইনশৃঙ্খলার মধ্যে। রাজ্যপাল দুঁদে প্রশাসক ছিলেন। তিনি তো দু’টো সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশংসাই করেছেন!” আর তাপসবাবুর নাম বাদ? পরিষদীয় মন্ত্রীর সাফাই, “দুর্ঘটনা-সহ নানা ঘটনায় মৃতদের কথা আছে। সকলের নাম তো আলাদা করে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। আর ওই ঘটনাটা এখন বিচারাধীন বিষয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.