কোনও হিংসা হয়নি: মমতা
পুড়ছে সিপিএমের অফিস, চলছে সংঘর্ষ
ংযত থাকার আর্জিই সার। দিল্লি-কাণ্ডের জেরে বুধবারও বল্গাহীন অশান্তি দেখলেন এ রাজ্যের মানুষ।
বদলার রাজনীতিতে উত্তর থেকে দক্ষিণ সব জায়গাতেই এ দিন তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন সিপিএম তথা বাম নেতা-কর্মীরা। দিনভর বামদলগুলির পার্টি অফিসে ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগ হয়েছে। শ্যামনগরে সিপিএম অফিসের মধ্যেই এক কর্মীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বহু পার্টি অফিস থেকে টিভি, চেয়ার, টেবিল লুঠ হয়েছে। আগুন লাগানো হয়েছে সিপিএম কর্মীদের বাড়িতেও। এ ঘটনার পরে নিচুতলার কর্মীদের উপরে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কতটা নিয়ন্ত্রণ আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে, এ দিন কিছু জায়গায় সিপিএম প্রতিরোধ গড়ে তোলায় তা রাজনৈতিক সংঘর্ষের চেহারা নেয়। শিলিগুড়ি শহরে সিপিএম ও তৃণমূলের মিছিল-সমাবেশকে ঘিরে এ দিন তুলকালাম হয়। পুলিশ গ্রেফতার করেছে অশোক ভট্টাচার্য এবং জীবেশ সরকারকে। দিনভর অবশ্য সিপিএমের উপরে হামলায় অভিযুক্ত তৃণমূলের নেতা-কর্মীর গ্রেফতার হওয়ার খবর মেলেনি। স্বাভাবিক ভাবেই সিপিএম নেতৃত্ব পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন। পুলিশ-প্রশাসনকে কার্যকরী ভূমিকা নেওয়ার আবেদন করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।

প্রহৃত বাগনানের প্রাক্তন
বিধায়ক আক্কেল আলি।

আরামবাগের বৃন্দাবনপুরে
সিপিএম অফিসে ভাঙচুর।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “কোনও হিংসা হয়নি! যেটুকু যা হয়েছে, তা সিপিএম ক্যাডাররাই করছে! তৃণমূল কর্মীরা সম্পূর্ণ ভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন। দলীয় কর্মীরা আবেগপ্রবণ হলেও তাঁরা আমার কথা শোনেন। ভুলে গেলে চলবে না যে, সিপিএমের শাসনে রাজ্যে ৫৫ হাজার মানুষ খুন হয়েছে!” দিল্লির ঘটনার নিন্দা করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। ক্ষমাও চেয়েছেন। কী ভাবে বিষয়টিকে দেখছেন? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কীসের ক্ষমা? এটা ভণ্ডামি ছাড়া আর কী? মানুষকে মারবে, তার পর ক্ষমা চাইবে!”
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “মুখে কালো কাপড় বেঁধে, বুকে কালো ব্যাজ সেঁটে শান্ত সংযত ভাবে রাজ্য জুড়ে তৃণমূল মিছিল করেছে।” দু’এক জায়গায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে উল্লেখ করলেও তার সঙ্গে দলীয় কর্মীরা যুক্ত নন বলেই তাঁর দাবি। পার্থবাবুর কটাক্ষ, “সিপিএমের কটা পার্টি অফিস ছিল, যে ভাঙবে!” একটু অন্য সুর শোনা গিয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের বক্তব্যে। তাঁর কথায়, “কিছু ঘটেনি, এটা মিথ্যা বলা হবে। তবে কোথাও কোনও অগ্নিসংযোগ হয়নি। রক্তপাত হয়নি। যা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াবশত হয়েছে।”
নানুর থেকে খানাকুল, কোচবিহার থেকে বর্ধমানসিপিএমের পুড়ে যাওয়া, ভেঙে যাওয়া অসংখ্য পার্টি অফিস কিন্তু অন্য কথা বলছে। লিলুয়ার বেলগাছিয়ায় ছুরিবিদ্ধ হয়ে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষ বেধে যায়। অভিযোগ, ছোটু চক্রবর্তী নামে সিপিএমের এক সমর্থক বুধবার রাতে স্থানীয় বালক সঙ্ঘের মাঠে বাপন দাস নামে এক তৃণমূল-সমর্থককে ছুরি মেরে পালায়। হাসপাতালে মৃত্যু হয় বাপনের। ক্ষিপ্ত জনতা ছোটুর বাড়িতে এবং একটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাণ্ডব চালানো হয় কয়েকটি বাড়িতে। র্যাফ নামানো হয়।
রাতেই শ্যামনগরে আগুন লাগানো হয় সিপিএমের জগদ্দল গ্রামীণ আঞ্চলিক কমিটির কার্যালয়ে। সিপিএমের অভিযোগ, দীনদয়াল চক্রবর্তী নামে এক বৃদ্ধ সমর্থক ভিতরে থাকা অবস্থাতেই তৃণমূলের লোকজন বাইরে থেকে আগুন লাগিয়ে দেয়। দীনদয়ালবাবুর মাথায় লাঠি মারা হয়। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
হুগলির খানাকুলের পাতুল গ্রামে সশস্ত্র তৃণমূল কর্মীরা এ দিন ব্যাপক বোমাবাজির পাশাপাশি নির্বিচারে ভাঙচুর ও লুঠপাট চালায় বলে সিপিএমের অভিযোগ। সিপিএম সমর্থকদের অন্তত ৪০টি বাড়িতে ভাঙচুর হয়। ১৫টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শূন্যে গুলিও চালানো হয়। পুড়ে মারা যায় বেশ কিছু গরু-ছাগল। কয়েক জন মহিলাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার চেষ্টাও করা হয় বলে সিপিএমের অভিযোগ। বহু পুরুষ গ্রামছাড়া। বীরভূমের নানুরের সাকুলিপুরেও সিপিএম অফিসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কীর্ণাহার বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া সিটুর কার্যালয়, স্থানীয় আরএসপির শ্রমিক সংগঠনের অফিস এবং সিপিএমের কীর্ণাহার লোকাল কমিটির অফিসও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বোলপুরে কোপাই লোকাল কমিটির অফিসও পোড়ানো হয়।
এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠকের পরে বিমান বসু বলেন, “আমরা অমিত মিত্র হেনস্থার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছি। যা ঘটেছে, তা বামপন্থীদের সংস্কৃতি নয়, তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছি। কিন্তু, তার পর জেলায় জেলায় যা হচ্ছে, তা ভয়ঙ্কর। পার্টি ও গণ সংগঠনের এক হাজারের উপরে অফিসে হামলা, ভাঙচুর হয়েছে। ফ্রন্টের সব শরিক দলের অফিসই ভাঙচুর করা হয়েছে। জেলায় জেলায় শতাধিক নেতা-কর্মী আক্রান্ত, ঘরছাড়া।
আমরা এর ইতি চাই।”

খানাকুলে পোড়া ঘরবাড়ি।

সিউড়িতে সিপিএমের অফিসে ভাঙচুর।
বিমানবাবু জানান, সমস্ত জেলায় বামফ্রন্টের সভা ডেকে বাস্তব পরিস্থিতি মাথায় রেখে প্রতিবাদ মিছিল করা হবে। আক্রমণকারীদের শাস্তির দাবিতে জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
অর্থমন্ত্রীর উপর হামলার প্রতিবাদে তৃণমূল যে ভাবে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাচ্ছে, তা ‘জিঘাংসার রাজনীতি’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “এই অশান্তি বন্ধে মুখ্যমন্ত্রী কঠোর হাতে ব্যবস্থা নিন। গৃহযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করবেন না।” কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সিও বলেন, ‘‘ধৈর্য হারিয়ে কেন তৃণমূল বদলার রাজনীতিতে নামছে? এই অশান্তি থামানোর দায়িত্ব রাজ্য সরকারেরই!” রাজ্যের অশান্ত পরিস্থিতির কথা রাজ্যপালকে শীঘ্রই জানাবে প্রদেশ কংগ্রেস।
এ দিনই সকালে দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মানবেশ চৌধুরী, প্রাক্তন মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাস এবং জেলা ও রাজ্য নেত্রী মিনতি ঘোষকে নিগ্রহ করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। তাঁরা বালুরঘাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কোচবিহারে বামেদের তো বটেই কংগ্রেস ও বিজেপির একাধিক অফিস ভাঙচুর হয়েছে। সব মিলিয়ে কোচবিহারে মঙ্গল থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত ১১৫টি পার্টি অফিসে হামলা হয়।
বাঁকুড়ার সারেঙ্গায় সিপিএমের লোকাল কমিটি এবং পুরুলিয়ার কাশীপুরে কৃষক সভার অফিসে আগুন লাগানো হয়। বলরামপুরে সিটুর অফিস দখল করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বর্ধমান শহরের আট থেকে দশটি অফিসে ভাঙচুর হয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম কর্মচারী ইউনিয়নের অফিসে এ দিন তৃণমূলের কর্মচারী সংগঠন ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। হাওড়ার বাগনানে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক আক্কেল আলি খানকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গুলিও চালানো হয়।
বিকেলে সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে মিছিল করে গিয়ে সিআইটিইউর অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের। সুকান্তনগর থেকে খাসমহল এলাকায় সিপিএমের ছ’টি কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এক স্থানীয় বাসিন্দা তৃণমূলের হামলায় গুরুতর আহত।

পুরনো খবর:
— নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.