ভাঙচুর, আগুন সিপিএম অফিসে
সংযত থাকার বার্তা, তবু অশান্তি চলছেই
মুখ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী থেকে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা বা বিরোধী দলনেতাসকলেই বলছেন প্ররোচনায় পা দেবেন না। প্ররোচনা দেবেন না। কেউ প্ররোচনা ছড়ালে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাস্তব বলছে, দিল্লি-কাণ্ডের জেরে গোলমাল বেড়েই চলেছে। কলকাতায় এবং জেলায় জেলায় মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত গোলমালের খবর মিলেছে। প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে পড়েছেন শাসকদলের কর্মীরা। পথ অবরোধ, রেল অবরোধ, বিক্ষোভ কর্মসূচি তো তাঁরা করছেনই। প্রশাসনের মাথাব্যথা বাড়িয়ে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে পরের পর সিপিএমের পার্টি অফিসে ভাঙচুর হচ্ছে। কোথাও লাগানো হচ্ছে আগুন। আক্রান্ত হয়েছেন সিপিএম নেতা-কর্মীরা।
শুধু কোচবিহারেই বিকেল থেকে রাতের মধ্যে সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের ২১টি পার্টি অফিসে হামলা হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত তৃণমূল। এ সবের মধ্যেই দিল্লি-কাণ্ডের প্রতিবাদে আজ, বুধবার রাজ্য জুড়ে ধিক্কার দিবস পালন করার কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। প্রতিটি ব্লকে ও এলাকায় দলীয় কর্মীরা বিক্ষোভও দেখাবেন। সব মিলিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনার পারা ক্রমেই চড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে গণ্ডগোল আরও বাড়তে পারে আঁচ করে দু’পক্ষের শীর্ষ নেতৃত্বই দলীয় কর্মীদের সংযত হওয়ার বার্তা দিয়েছেন। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “কর্মীদের বলে দিয়েছি, প্ররোচনায় পা দেবেন না। শান্তিপূর্ণ ভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানাবেন। খেয়াল রাখতে হবে আমরা রাজ্য পরিচালনার দায়িত্বে আছি।”
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “ইতিমধ্যেই আমাদের অনেক দলীয় কার্যালয় আক্রান্ত হয়েছে। নেতাদের উপরে হামলা হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে আবেদন করছি, প্ররোচনা দেবেন না। প্ররোচিত হবেন না। আমাদের কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলছি।”
লন্ডভন্ড যাদবপুরের গাঙ্গুলিবাগানের সিপিএম কার্যালয়। —নিজস্ব চিত্র
এ দিন সন্ধ্যায় ভাঙড়ের ঘটকপুকুরে তৃণমূলের প্রতিবাদ সভা থেকে রেজ্জাক মোল্লার গাড়ির সামনে বোমা ছোড়া হয় বলে সিপিএমের অভিযোগ। ঘটনার পর ঘটকপুকুর মোড়ে কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, “তৃণমূল সমর্থকেরা বারুইপুরে আমাদের জেলা অফিসে হামলা চালিয়েছে। আমাদের দলীয় পতাকা নামিয়ে তৃণমূলের পতাকা তোলার চেষ্টা করা হয়। শহিদ বেদিও ভাঙচুরের চেষ্টা হয়।” যাদবপুরের গাঙ্গুলিবাগানে সিপিএমের জোনাল অফিসেও ভাঙচুর হয়। স্থানীয় সিপিএম নেত্রী চন্দনা ঘোষ দস্তিদার বলেন, “তৃণমূল সমর্থকেরা দল বেঁধে গাঙ্গুলিবাগান, রবীন্দ্রপল্লি, পাটুলি, কেন্দুয়া এলাকায় পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালায়। পুলিশকে খবর দেওয়া সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেয়নি।”
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম রাতে বলেন, “অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটি থানা এলাকায় টহলদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব ডিভিশনাল ডেপুটি কমিশনারকে।” লালবাজারের এক কর্তা জানান, রাজনৈতিক দলগুলির কার্যালয়ে যাতে ভাঙচুর চালানো না হয়, সে দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে। এমনকী, বিরোধী দলের মিছিলের সঙ্গে শাসক দলের মিছিল যাতে মুখোমুখি না হয়, আগাম সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছে থানাগুলিকে।
এ দিন বিকেলে কয়েকশো তৃণমূল সমর্থক হুগলির শ্রীরামপুরে সিপিএমের জেলা পার্টি অফিস ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর গাড়িতেও ইট মারা হয়। পুলিশ গিয়ে পার্টি অফিস ঘিরে রেখে আটকে পড়া সিপিএম নেতাদের উদ্ধার করে। জাঙ্গিপাড়ায় রাতে সিপিএমের জোনাল অফিসের বারান্দায় আগুন লাগানো হয়। মেদিনীপুর শহরে এ দিন সিপিএমের জেলা পার্টি অফিসে ঢিল-পাটকেল ছোড়া ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দুর্গাপুর শহরেও সিপিএমের জোনাল কমিটি-সহ অনেকগুলি পার্টি অফিসে হামলা হয়। বাদ যায়নি সিটু কার্যালয়ও। এমনকী আইএনটিইউসি-র একটি অফিসেও ভাঙচুর হয়। রানিগঞ্জের সিপিএম পুরপ্রধান ও বর্ধমানের গলসির জোনাল সম্পাদক তৃণমূলের হাতে মার খেয়েছেন। পুরুলিয়াতেও জেলা অফিসে হামলা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, শিলিগুড়ি, আঠারোখাই, ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট, ফালাকাটা সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় অন্তত ৩২টি সিপিএম অফিসে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে তৃণমূল প্রতিবাদ মিছিল করার সময়ে বড় ধরনের গণ্ডগোল হয়। সিপিএম এক মহিলা তৃণমূল কর্মীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। গোটা উত্তরবঙ্গে পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন আইজি (উত্তরবঙ্গ) অনুজ শর্মা।
ঘটনার রেশ ছড়িয়েছে নিমতা এলাকাতেও। তৃণমূল কর্মীরা দলবদ্ধ হয়ে অথবা মিছিল করে গিয়ে নিমতার উত্তর প্রতাপগড়, গোলবাগান ও নিমতা থানার কাছে সিপিএমের একাধিক কার্যালয় ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। এ দিন সন্ধ্যায় সল্টলেকের শান্তিনগর, ত্রিনাথ পল্লি ও নাওভাঙাতেও সিপিএমের তিনটি পার্টি অফিসে তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ব্যারাকপুরে স্টেশন চত্বরে এ দিন বিকেলে ডিওয়াইএফের সভা করার কথা ছিল। সভা শুরুর আগেই সেখানে তৃণমূলের লোকজন সভার মঞ্চ, চেয়ার, টেবিল ভেঙে দেয়, ফ্লেক্স পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় বটতলা, লালকুঠি ও পানপাড়ায় সিপিএমের কার্যালয়ে আগুনও লাগানো হয়। পার্টি অফিসে অগ্নিসংযোগের খবর মিলেছে নৈহাটি থেকেও। বরাহনগরে সিপিএমের অভিযোগ, প্রতিবাদের নামে তৃণমূল বকুলতলা বাজার ও ২-এর পল্লি এলাকায় পার্টি অফিস ভাঙচুর করে বোমাবাজি করেছে। হাওড়ার সালকিয়াতেও সিপিএমের দু’টি লোকাল অফিসে ভাঙচুর হয়।
এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় দলীয় সভা সেরে ফেরার পথে নামখানা ঘাটের কাছে কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সির গাড়ি আটকান শ’খানেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। দিল্লি পুলিশ কী ভূমিকা নিচ্ছে, তা নিয়ে শোরগোল তোলেন বিক্ষোভকারীরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কাকদ্বীপ বাসস্ট্যান্ডের কাছেও গাড়ি আটকানোর চেষ্টা হয়েছিল। তবে পুলিশ তা রুখে দেয়।
দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন জেলায় জেলায় প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিল তৃণমূল। হাইকোর্টে তৃণমূল প্রভাবিত আইনজীবীদের সংগঠন বিক্ষোভ দেখায়। মহাকরণে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল প্রভাবিত সরকারি কর্মী সংগঠনগুলিও।
কৃষ্ণনগরের কাছে কালিরহাটে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক প্রায় ৪৫ মিনিট অবরোধ করে রাখেন তৃণমূল কর্মীরা। বর্ধমান শহরে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল। তার জেরে শহরে বিকেল থেকেই প্রবল যানজট হয়। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন “দিল্লির সরকার আমাদের রাজ্যের প্রশাসন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। অথচ ওখানকার পুলিশের সামনেই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে নিগ্রহ করা হল। আর পুলিশ নীরব রইল। দলীয় কর্মীরা তাই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.