অবসাদে আত্মহত্যার চেষ্টা এবিজি-র কাজহারা শ্রমিকের
মাস ছয়েক আগেও কাজ ছিল যখন, বেতন মিলত হাজার পনেরো। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পণ্য খালাসকারী সংস্থা এবিজি হলদিয়া বন্দর থেকে পাততাড়ি গোটানোয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেই উপার্জন। হলদিয়ার বাসুলিয়া গ্রামের বছর পয়তাল্লিশের সৈয়দ আমজেদ আলি তাই বাধ্য হয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন। সামনে মেয়ের বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তা এতটাই বেড়েছিল, যে মঙ্গলবার সকালে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। তবে, এই দফায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। তমলুকের নার্সিংহোমে আপাতত বিপন্মুক্ত আমজেদ আলি।
বিক্ষিপ্ত কোনও ঘটনা নয়। সংসারের জাঁতাকলে আমজেদ আলির মতোই কোণঠাসা তাঁর একদা সহকর্মীরা। শাসকদল তৃণমূল তথা তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে মাস ছ’য়েক আগে এবিজি বন্দর ছাড়ার পরেই অথৈ জলে পড়েছেন সংস্থার ৬৩০ জন শ্রমিক। তৃণমূলের সঙ্গে ছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে অনেকেই সাংসদের আনুকূল্যে এদিক-ওদিক কাজ পেয়েছেন। বাকিরা নিজেরাই খুঁজে-পেতে কেউ দিনমজুরি করছেন, কেউ রঙের মিস্ত্রি। কেউ সম্পূর্ণ বেকার। ব্যঙ্কে জমা পড়া সামান্য ক্ষতিপূরণ ফুরিয়েছে কবে।
তমলুকের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সৈয়দ আমজেদ আলি। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস
এমনই এক জন আমজেদ। তিন মেয়ে, এক ছেলে, স্ত্রী ও মা-কে নিয়ে পরিবার। বড় ছেলে মুনির হোসেন হলদিয়ার একটি ঠিকাসংস্থায় গাড়ি চালাতেন। আমজেদ কাজ হারানোর পরে তাঁরও চাকরি যায়। মুনিরের অভিযোগ, ‘‘বাবা আন্দোলন করতেন বলে কয়েকমাস আগে কাজ থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হয়।” মেজ ছেলে মোক্তার হোসেন সদ্য ব্যবসা শুরু করেছেন। ছোট ছেলে পলিটেকনিক কলেজে পড়েন, মেয়ে কলেজে। নার্সিংহোমে মোক্তার বলেন, “কাজ যাওয়ার আগেই বোনের বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ কাজ চলে যাওয়ায় আমরা অথৈ জলে পড়ি। তার উপর বোনের বিয়ের দিন ক্রমশ এগিয়ে আসায় টাকা-পয়সা জোগাড় নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছিল বাবার। আর কোনও কাজ না পেয়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে বাবা রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেন।” মোক্তারের কথায়, “এই কাজ নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগছিলেন বাবা। মঙ্গলবার সকলের অলক্ষ্যে কীটনাশক খান।” নার্সিংহোমের বিছানায় শুয়ে আমজেদ বলেন, ‘‘তিন ছেলের মধ্যে দু’জন বেকার। সামনে মেয়ের বিয়ে। চাপ নিতে না পেরে বিষ খেয়েছিলাম।”
“এমনটাই হওয়ার ছিল”, আক্ষেপ করে বলেন আমজেদের একদা সহকর্মী, সুতাহাটার প্রত্যন্ত গ্রাম মনোহরপুরের বনমালী ভুঁইয়া। চাকরি চেয়ে মাঝে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে জেল হয়েছিল তাঁর। একচিলতে টালির পাকা ঘরে বনমালী আক্ষেপ ভরে বলে ওঠেন, “আমি রঙের কাজ করছি এখন। কোথা থেকে কোথায় এলাম।” দেভোগ গ্রাম পঞ্চায়েতের চাউলখোলা গ্রামের নবকুমার মান্না একশো দিনের কাজে অনেক কষ্টে নাম নথিভুক্ত করাতে পারলেও কার্ড হাতে পাননি। তিনি বলেন, “সাংসদ মেনু বলে দেবেন বলেছিলেন। ভাতই জুটছে না।” কাজহারা শেখ জাহিদুল, নূর আলম, মহম্মদ জাফর আলিরাও বলে ওঠেন, “এত কষ্ট সহ্য করা যায় না। আমাদের সকলকে আত্মহত্যা করতে হবে।”

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.