আঠা শুঁকে বেহুঁশ পথশিশুরা, খবরই রাখে না প্রশাসন
“কাকু, পঁচিশ দাও একটা।’’
ভরদুপুর। চৈত্রের সূর্য তখন আগুন ঢালছে। আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডে প্রায় বেঁহুশ অবস্থায় বসে রয়েছে বছর বারোর দুই অর্ধনগ্ন বালক। বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটি দোকানে এসে এই কথাই বলল বছর দশেকের বালক। জামা কাপড়ে স্পষ্ট দারিদ্রের ছাপ। কথা না বাড়িয়ে দোকানদার এগিয়ে দিলেন একটি আঠার টিউব। সেটি পকেটে পুরে পাশের গলিতে অদৃশ্য হয়ে গেল ছেলেটি। স্থানীয় দোকানদারেরা জানান, এদের বেশিরভাগ পথে বা ঝুপড়িতে থাকে।
বোঝা গেল, ‘পঁচিশ’ খুবই পরিচিত শব্দ।
ভালমানের এই আঠা এখন নেশার অন্যতম উপাদান। এই দ্রব্যটি অনেক জায়গাতেই কমবয়সীদের কাছে নেশার সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন নামী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও এই নেশায় আসক্ত।
আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রায় প্রতিটি দোকানেই দিনে গড়ে ২০ থেকে ২৫টি নানা মাপের আঠার টিউব বিক্রি হয়। যার সিংহভাগই ব্যবহৃত হয় নেশার কাজে। দশ থেকে চোদ্দো বছরের বালকদের কাছে এই আঠার চাহিদা তুঙ্গে। বিক্রি করতে না চাইলে তারা হাতে পায়েও ধরে। তাতেও কাজ না হলে দোকানে হামলা চালায়। ন্যাকড়ায় আঠা ঢেলে সেটি শুঁকে করা হয় এই নেশা। অপেক্ষাকৃত কম দামের এই নেশায় আসক্তদের মধ্যে বেশি হল পথশিশুদের সংখ্যা। এদের মধ্যে অনেকেই স্কুলছুট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কিশোর বলল, ‘‘বাবাকে দেখেছি মদ খেয়ে দু’ঘণ্টা আনন্দ করে। কিন্তু আমি তার থেকে কম টাকায় নেশা করে দশ ঘণ্টা আনন্দে থাকি।”
পল্লিশ্রী, নওপাড়া প্রভৃতি এলাকা থেকে পথশিশু-সহ অন্যান্য বালক ও যুবকেরা আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডে আসে আঠার নেশার টানে। এদের অনেকে সকালে ভিক্ষে করে। দুপুরে কিংবা বিকেলে ভিক্ষের টাকায় আঠা কেনে।
পুরো বিষয়টি সর্ম্পকেই অবহিত স্থানীয় প্রশাসন। যদিও এই বিষয়ে কী করণীয় তা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি তারা। মহকুমাশাসক (আরামবাগ) অরিন্দম রায় বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। নাগরিক সমাজ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও প্রশাসন মিলে কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না ভেবে দেখা হচ্ছে।”
আরামবাগের চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট অফিসার মৃত্যুঞ্জয় বর্মণ বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। পুরসভা, পুলিশ ও প্রশাসন এক সঙ্গে কাজ করলে হয়তো সাফল্য পাওয়া যাবে। আরামবাগ থানার আইসি সুকমল দাসের বক্তব্য, “ওই আঠা নিষিদ্ধ বস্তু নয়। কেউ কিনলে তাকে আমরা আটকাব কী করে? ”
ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন প্রজ্ঞাপারমিতা রায় বলেন, “আমরা এখনও এই সমস্যা নিয়ে কিছু করে উঠতে পারিনি। সাধারণ নেশার ওষুধ থেকে মুক্তির যে পদ্ধতি রয়েছে, হয়তো আমাদের এ ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করতে হবে। সবার আগে দরকার শিশুদের ঠিকমতো খাওয়া, স্নান, খেলাধুলোর ব্যবস্থা। তার জন্য দরকার হলে অনেকগুলি ‘ওপেন শেল্টার’ করতে হবে, যেখানে পথ-শিশুরাও নিয়মিত এসে থাকতে পারে।” শিক্ষার অধিকার ও জীবনে ব্রাত্য পথশিশুরা মুক্তি খুঁজছে কয়েক ঘণ্টার তূরীয় অবাস্তবে।

এই সংক্রান্ত অন্য খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.