খানাকুলে সিপিএম সমর্থকদের ৪০টি বাড়িতে হামলা, আগুন
লের শীর্ষ নেতৃত্ব শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু দিল্লিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে নিগ্রহের প্রতিবাদে বুধবার খানাকুলের পাতুল গ্রামে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ উঠল সশস্ত্র তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ব্যাপক বোমাবাজির পাশাপাশি নির্বিচারে ভাঙচুর ও লুঠপাট চালানো হল সিপিএম সমর্থকদের অন্তত ৪০টি বাড়িতে। তার মধ্যে ১৫টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শূন্যে গুলিও চালানো হয় বলে গ্রামবাসীদের দাবি। আগুনে পুড়ে মারা যায় বেশ কিছু গরু-ছাগল। কয়েক জন মহিলাকে পুড়িয়ে মারারও চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। এক কথায় নিঃস্ব করে দেওয়া হয় বহু গ্রামবাসীকে।
সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “একটি নিন্দনীয় ঘটনার প্রতিক্রিয়া যে ভাবে দেখানো হচ্ছে সেটাও নিন্দনীয়। আমরা চাই দোষীদের গ্রেফতার করা হোক। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।” অভিযোগ প্রসঙ্গে দলের তরফে খানাকুলের দায়িত্বে থাকা তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, “মনে হয় না আমাদের কেউ ওই ঘটনায় জড়িত। তবু, দলীয় স্তরে তদন্ত করে দেখা হবে। কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সংগঠনগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও অবস্থাতেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না।”
হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “ওই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও যারা জড়িত, তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলাশাসক মনমীত নন্দা জানিয়েছেন, ব্লক অফিসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের ত্রাণ বিলি করা হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ হাতকামান, দেশি বন্দুক, মাস্কেট-সহ নানা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল করে পাতুল গ্রামে ঢোকে অন্তত দেড়শো জন হামলাকারী। তাদের অনেকের হাতে তৃণমূলের দলীয় পতাকা ছিল এবং তারা শূন্যে গুলিও চালাচ্ছিল বলে গ্রামবাসীদের দাবি। মিছিল থামে মাঝপাড়ায়। শুরু হয় বোমাবাজি।
পোড়া গেরস্থালির সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার। ছবি: মোহন দাস।
গ্রামটিতে সিপিএমের প্রভাব বেশি। গ্রামবাসীরা বেশির ভাগই দিনমজুরি করে সংসার চালান। ভয়ে পুরুষদের বেশির ভাগই বাড়িঘর ছেড়ে পালান। বিনা বাধায় চলে ভাঙচুর, লুঠপাট ও অগ্নিসংযোগ। প্রায় এক ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে হামলাকারীরা চলে যায়। ঘটনার জেরে পাতুল হাইস্কুলে এ দিন সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন স্কুল কর্তৃপক্ষ। আরামবাগ থেকে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। কাঁটাপুকুর, গণেশবাজার এবং নাঙ্গুলপাড়া এলাকা থেকে হামলাকারীরা আসে বলে জানান গ্রামবাসী।
ওই গ্রামের বাসিন্দা শ্রীকান্ত মাঝি বলেন, “সিপিএম করি বলেই এ ভাবে হামলা হল। ওরা শূন্যে গুলি চালাচ্ছিল। বোমাবাজিও করছিল। আগুনে আমাদের গরু-ছাগলও পুড়ে মারা গিয়েছে। আমরা নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি।” লক্ষ্মী মাঝি নামে এক গৃহবধূ বলেন, “বাড়িতে আগুন না লাগানোর জন্য ওদের হাতেপায়ে ধরলাম। ওরা মেয়েদের টেনে নিয়ে আগুনে ফেলতে যাচ্ছিল। অনেক চেষ্টা করে থামিয়েছি। আর কিছু বলার সাহস হয়নি।”
দুপুর ১২টা নাগাদ গ্রামে পৌঁছে দেখা গেল, তখনও কয়েকটি বাড়ি দাউ দাউ করে জ্বলছে। সর্বস্ব খুইয়ে অনেকেই কাঁদছেন। সন্ধ্যা সাথিক নামে এক মহিলা বালতি করে জল এনে বাড়ির আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। তাঁর কথায়, “জমানো ধান যা ছিল, সব পুড়ে গিয়েছে। কী ভাবে খাবারের ব্যবস্থা করব জানি না। মেয়ের বিয়ের জন্য বাসন জমিয়েছিলাম। সে সবও পুড়ে ছাই।”
পুলিশ গ্রামে পৌঁছলে দেরিতে আসার অভিযোগ তুলে গ্রামবাসীরা পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতেই তৃণমূলের লোকজন হুমকি দিয়ে গিয়েছিল।
সে কথা পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সুকুমার সাথিক নামে এক গ্রামবাসী বলেন, “মঙ্গলবার বিকেলে ওই হুমকির পরে গ্রামে পুলিশ পিকেট বসানো হলে এমন হত না। পুলিশের সামনে দিয়েই তো হামলাকারীরা পালাল।” পুলিশ অবশ্য দেরিতে আসার অভিযোগ মানতে চায়নি।
সকল গৃহ হারাল যার...। খানাকুলে প্রকাশ পালের তোলা ছবি।
এ দিন পাতুলে ওই ঘটনা ছাড়াও হিংসার সাক্ষী থেকেছে আরামবাগ মহকুমার আরও কয়েকটি এলাকা। আরামবাগের বৃন্দাবনপুর, গোঘাটের মদিনা এবং বাজুয়াতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। বাজুয়ার কার্যালয়ে আগুনও লাগানো হয়। পুড়শুড়ার হরিহর গ্রামে কাশী আদক নামে এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতে হামলা হয়। পরে তাঁর বাড়িতে বোমা আছে, এই অভিযোগে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কাল রাতে আরামবাগের গোবরা গ্রামে মহিমা পণ্ডিত নামে এক শিক্ষক তথা সিপিএম কর্মীকে মারধর করা হয়। তিনি প্রহৃত হন। তাঁকে পাঠানো হয়েছে কলকাতার হাসপাতালে।

সহ প্রতিবেদন: পীযূষ নন্দী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.