দশ বছরের ধর্ষিতা নাবালিকাকে লক আপে বন্দি করার ঘটনায় নিজে থেকেই হস্তক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার উত্তরপ্রদেশ সরকারকে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে আসা ওই নাবালিকাকে কেন লক আপে রাখা হল, সে বিষয়ে সোমবারের মধ্যে জবাবদিহি দাখিল করতে হবে। তার পর শুরু হবে মামলার শুনানি। এই মর্মে রাজ্যকে বিজ্ঞপ্তিও পাঠিয়েছে প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে মিরপুর গ্রামের একটি চাষের খেতে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে ছিল ওই নাবালিকা। সেই রাতেই মেয়েকে নিয়ে বুলন্দসহরের মহিলা থানায় ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে যান মেয়েটির মা। তাঁর দাবি ছিল, স্থানীয় এক দুষ্কৃতীই ধর্ষণ করেছে মেয়েকে। অভিযোগ নেওয়ার পরে মা-মেয়েকে স্থানীয় হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেন পুলিশকর্মীরা। সোমবার ফের ওই থানায় যান মা ও মেয়ে। আর তখনই মাকে জোর করে থানা থেকে বার করে দিয়ে নাবালিকাকে লক আপে ঢুকিয়ে দেন কর্তব্যরত কর্মীরা।
সোমবার বিকেলে এসএসপি গুলাব সিংহ বিষয়টি জানতে পারলে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার গায়শ্রী চৌহান এবং সাব-ইনস্পেক্টর সরিতা দ্বিবেদীকে তড়িঘড়ি বদলির নির্দেশ দেন। দু’জন কনস্টেবলকে সাসপেন্ডও করা হয়। তত ক্ষণে স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে ছেড়ে দেওয়া হয় নাবালিকাকে। গোটা ঘটনায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্টের ওই বেঞ্চ। তাঁদের প্রশ্ন, “কোন যুক্তিতে দশ বছরের একটি মেয়েকে আটক করা হয়?”
জাতীয় তফসিল জাতি কমিশনের ডেপুটি ডিরেক্টর কৌশলেন্দ্র কুমার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেখা করেন মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে সুপারিশ করা হবে কমিশনের পক্ষ থেকে। ঘটনার সময় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শও দেন তিনি।
ইতিমধ্যে, নাবালিকার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ২৪ বছরের এক স্থানীয় যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত যুবকের অবশ্য দাবি, মেয়েটি চুরি করছিল। চুরি করতে বাধা দেওয়ায় মেয়েটির মা মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন তার নামে। কিন্তু মেয়েটির মা জানিয়েছেন, অপরাধী তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে ভয় দেখাচ্ছে। জেল থেকে ছাড়া পেলেই তাঁকে হত্যা করা হবে এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে দাবি অভিযোগকারিণী মায়ের। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বাড়ির বাইরে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অন্য দিকে পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষার যে প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে, তাতে মেয়েটির শরীরে কোনও আঘাত নেই বলে জানা গিয়েছে। তবে বিস্তারিত এবং চূড়ান্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
|