মাওবাদী শীর্ষনেতা মুপল্লা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতির খোঁজ দিলে ১৫ লক্ষ টাকা ইনাম দেবে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। বুধবার প্রেস বিবৃতিতে এই ঘোষণা করেছে সংস্থাটি। গণপতি ছাড়াও নামবালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ, তিপ্পিরি তিরুপতি ওরফে দেওজি, বালমুরি নারায়ণ রাও ওরফে প্রভাকরের ১০ লক্ষ টাকা করে মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে। সোমাজি ওরফে সহদেবের জন্য দেওয়া হবে ৫ লক্ষ টাকা।
গত বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতা থেকে মাওবাদীদের সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান সদুলা রামকৃষ্ণ-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে এনআইএ। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র থেকেও কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের জেরা করে বেশ কিছু তথ্য পায় এনআইএ। তদন্তে জানা যায়, কম খরচে রকেট লঞ্চার তৈরির চেষ্টা করছে মাওবাদীরা। প্রায় পাঁচ কোটি টাকার সেই ‘প্রজেক্ট’ রূপায়ণ করেছে মাওবাদীদের টেকনিক্যাল রিসার্চ আর্মস ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট (ট্রাম)। ২০০৫-এ কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-এর সাধারণ সম্পাদক গণপতির উপস্থিতিতে এই ইউনিট তৈরি হয়েছিল। বাসবরাজ, দেওজি ও প্রভাকরেরা প্রত্যক্ষ ভাবে এই ‘প্রজেক্ট’-এর সঙ্গে যুক্ত।
১৯৯৪ সালে তৎকালীন সিপিআই (এমএল) জনযুদ্ধ গোষ্ঠী তৈরি করেছিল টেকনিক্যাল ডেভলপমেন্ট কমিটি (টিডিসি)। সংগঠনে টিডিসি-র মর্যাদা ছিল রিজিওনাল কমিটির মাপের। সদুলা রামকৃষ্ণ সেই সময়ে ওই কমিটি তৈরিতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন। বিভিন্ন বিস্ফোরক তৈরি-সহ নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই কমিটির। সমন্বয়ের অভাবে টিডিসি খুব সফল হয়নি। এর পরে টিডিসি ভেঙে দিয়ে ২০০১ সালের জুলাই মাসে রাজ্য কমিটির সমান মর্যাদা দিয়ে তৈরি হয় সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল কমিটি। সেই কমিটি ২০০৫ সালে নামে পাল্টে হয় ট্রাম ইউনিট। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সদুলার হাতেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন গণপতি। কিন্তু গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, সদুলা কলকাতায় গ্রেফতার হওয়ার পরে গণপতি নিজেই ট্রামের কাজ দেখাশোনা করছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, ২০০৭ সালে ভোপাল ও রৌরকেল্লায় মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময়ে কিছু তথ্য হাতে আসে। সেই সূত্র ধরে তদন্তে নেমে রায়পুরে ৬৯টি বড় কাঠের বাক্স উদ্ধার হয়। সেগুলিতে রকেট লঞ্চার ও হেলিকপ্টার-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। এর পরে তদন্ত ও নিয়মিত অভিযান চলে। গত বছর কলকাতায় ধরা পড়েন সদুলা ও তাঁর ৪ সহযোগী। জানুয়ারি মাসে কয়েকটি পেন ড্রাইভ-সহ গ্রেফতার হন এক মাওবাদী কর্মী অসীম ভট্টাচার্য। তার পরেই তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে। পেন ড্রাইভে মেলে বায়ুসেনা ও সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর কয়েকটি ভিডিও। বায়ুসেনা ঘাঁটির কয়েকটি স্কেচও পাওয়া যায়। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, রকেট লঞ্চার দিয়ে বায়ুসেনার ঘাঁটিতে হামলারই ছক কষছিল মাওবাদীরা। এর আগে তামিল জঙ্গি সংগঠন এলটিটিই এই ধরনের হামলায় শ্রীলঙ্কা বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটির ব্যাপক ক্ষতি করেছিল। এই হামলার পরে এলটিটিই শক্তি সম্পর্কে গোটা বিশ্বেই সমীহ জন্মায়। গোয়েন্দাদের ধারণা, সম্ভবত সেই একই উদ্দেশ্য নিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র কমর্সূচিতে গুরুত্ব দিয়েছে মাওবাদীরা। শীর্ষনেতা গণপতি নিজে ট্রামের রাশ হাতে তুলে নিয়েছেন। তার পরেই নতুন করে গণপতির খোঁজ শুরু করেছে এনআইএ। |