শেষ পর্যন্ত মানবাধিকার সংগঠন ও নিহতদের পরিবারের অভিযোগই সত্যি প্রমাণিত হল। গত কাল মণিপুরে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যা’ সংক্রান্ত ৬টি মামলার বিচারবিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছিল। তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন বিচারপতি এন সন্তোষ হেগড়ে। রিপোর্টে সাফ বলা হয়েছে, ছ’টি ক্ষেত্রেই পুলিশ ঘটনাগুলি দেখিয়েছিল জঙ্গি সংঘর্ষ বলে। কিন্তু আসলে সেগুলি ভুয়ো সংঘর্ষ ছিল। ফলে, ‘আফস্পা’ বিরোধী আন্দোলনের পক্ষে আরও একটি হাতিয়ার যোগ হল।
মণিপুরের দু’টি মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, ১৯৭৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আফস্পা আইনের আড়ালে নিরাপত্তা বাহিনী ১৫২৮ জন নিরপরাধের প্রাণ নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নিহতদের পরিবার পুলিশ ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাচ্ছে। সত্য উন্মোচনের জন্য দু’টি সংগঠন মিলিত ভাবে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। তার জেরেই চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট হেগড়ে, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন মুখ্য কমিশনার জে এম লিংডো ও কর্নাটকের প্রাক্তন ডিজি অজয়কুমার সিংহকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি বানায়। প্রাথমিক ভাবে ছ’টি ঘটনাকে তদন্তের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। মণিপুরে এসে তথ্য প্রমাণ বিচার করে, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পরে, গত কাল সুপ্রিম কোর্টে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। তদন্তকারীরা জানান, সন্ত্রাস দমনের নামে ওই ছ’টি ঘটনায় মহম্মদ আজাদ খান (১৪), খুংবোমমাজুম ওরসঞ্জিৎ (১৯), নামেইরাকপাম নব (২৭), নামেইরাকপাম গোবিন্দ (২৫), এলাংবাম কিরণজিৎ (২২), চোংথাম উমাকান্ত (২৪), আকৌইজাম প্রিয়ব্রতকে (২৫) হত্যা করে ‘জঙ্গি’ হিসেবে দেখানো হয়েছে, অথচ নিহতদের সঙ্গে কোনও জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগই প্রমাণিত নয়। কমিশনের ক্ষোভ, সুপ্রিম কোর্ট নিয়মিত ভুয়ো সংঘর্ষ ঠেকাবার জন্য রাজ্যকে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়। কিন্তু রাজ্য পুলিশ তাতে আমল না দিয়ে হত্যালীলা চালাচ্ছে। নিরীহদের হত্যার পরে, ঘটনাগুলিকে ‘সাজানো সংঘর্ষ’ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
রিপোর্টের প্রতিলিপি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, মণিপুর সরকার ও অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল পরশ কুহদের কাছে পাঠিয়ে বিষয়টি নিয়ে তাদের বক্তব্যও জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ৯ এপ্রিল পরবর্তী শুনানি।
|