|
|
|
|
ব্যক্তির ক্ষমতায় সুফল নেই, মোদীকে ঠুকলেন রাহুল |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
একেবারে সেয়ানে সেয়ানে! রাহুল গাঁধী বনাম নরেন্দ্র মোদী! লোকসভা ভোটের এখনও কমপক্ষে এক বছর বাকি। অথচ পারস্পরিক তাল ঠোকাঠুকি শুরু হয়ে গেল এখনই।
যে শিল্পমহলের কাছে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বরাবরের ‘ডার্লিং’, আজ তাঁদেরই মঞ্চে দাঁড়িয়ে নাম না-করে ‘মোদী মডেল’কে আক্রমণ করলেন রাহুল। বললেন, কোনও এক জনকে সর্বস্ব ক্ষমতা দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। উল্টো দিকে নীরব থাকলেন না নরেন্দ্র মোদীও। আনুষ্ঠানিক ভাবে দল তাঁকে এখনও প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরেনি ঠিকই। কিন্তু আমদাবাদে বসেই কংগ্রেসের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছেন বিজেপি-র বিকাশপুরুষ। এ দিনও ফের হুঙ্কার ছাড়লেন, “গুজরাতের ঋণ শোধ করেছি। মানুষ চাইছে, এ বার আমি ভারতমাতার ঋণ শোধ করি।”
গুজরাতে তৃতীয় বার নির্বাচনে জেতার পর থেকেই সর্বভারতীয় স্তরে নিজেকে তুলে ধরতে সক্রিয় হয়েছেন মোদী। ঘনঘন সফর করেছেন দিল্লিতে। কলেজ পড়ুয়াদের মাঝে গিয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন। জবাব দিতে রাহুলই কিছুটা সময় নিচ্ছিলেন। কংগ্রেসের দ্বিতীয় শীর্ষ পদে আনুষ্ঠানিক অভিষেকের পর গত তিন মাস সংগঠন সাজাতেই ব্যস্ত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত মুখ খোলার জন্য তিনি বেছে নিলেন এমন এক ময়দান, যেখানে এত দিন একাই বল পায়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মোদী শিল্পমহল। মোদীও অবশ্য পাল্টা জবাব দিতে আগে থেকেই তৈরি। এ সপ্তাহের শেষে দিল্লিতে এবং আগামী সপ্তাহে কলকাতায় গিয়ে ফের শিল্পমহলের সামনেই বক্তৃতা দেবেন তিনি।
‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এর মঞ্চে মোদী বরাবর উজ্জ্বল। বারবার শিল্পমহলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। আর বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁর উন্নয়ন মডেলই সেরা। আর্থিক বৃদ্ধি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে তাঁর কাছেই রয়েছে সর্বরোগহর বটিকা। আজ কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের (সিআইআই) বার্ষিক সভায় সেই ‘মোদী মিথ’টাই ভাঙতে চাইলেন রাহুল। যদিও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর নাম একবারও মুখে আনেননি তিনি। |
|
সিআইআই-এর বার্ষিক সভায় রাহুল। ছবি: রয়টার্স |
কিন্তু নিজস্ব কেতায় বললেন, “এটা ঠিকই যে, ভারতীয়দের টিপিক্যাল ভাবনা হল, কেউ এক জন ঘোড়ায় চড়ে আসবেন। পিছনে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে সূর্যের আলো। আর তিনি ১২০ কোটি মানুষের সব সমস্যা লহমায় সমাধান করে দেবেন।” রাহুলের মতে, এমন ভাবনার গোড়াতেই গলদ রয়েছে। “সমস্যার সমাধান করতে হলে, মানুষের ক্ষমতায়ন আগে জরুরি।” মানুষ মানে সারা দেশের মানুষ, সেখানে কোনও সম্প্রদায়কে দূরে ঠেলে দিলে চলবে না আবারও নাম না করে মোদীকে খোঁচা!
মোদীর মাঠে রাহুলের ব্যাটিং কেমন হয়, দেখতে স্বভাবতই মুখিয়েছিলেন রাজনীতির কারবারিরা। রাহুলের কথা পড়তে না পড়তেই আজ প্রতিক্রিয়া জানাতে নেমে পড়ে বিজেপি। তাঁদের দাবি, মোদীকে ভয় পাচ্ছেন রাহুল। বিজেপি-র বর্ষীয়ান নেতা যশবন্ত সিনহার বক্তব্য, “এ হল এক বিভ্রান্ত যুবকের বিভ্রান্তিকর মতাদর্শ। গত ৬০ বছরে মাত্র ছ’বছর ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। এত দিনে মানুষের ক্ষমতায়ন হয়নি কেন? আর ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতির প্রবক্তা তো কংগ্রেসই!”
রাহুল জানতেন, প্রশ্নটা আজ না-হয় কাল উঠবেই। তাই আজ বিজেপি মুখ খোলার আগে কৌশলে নিজেই প্রসঙ্গ তুলেছেন। বলেছেন, “ঘটনাচক্রে আমি একটা পরিবারে এসে পড়েছি। তাঁদের ডিএনএ বহন করছি। এবং আমাকে বলা হয়েছে, তোমাকে এটা করতে হবে। কিন্তু আমিই বলছি, এ ভাবে চলতে পারে না। এর থেকে এগোতে হবে, মানুষের ক্ষমতায়ন করতে হবে।” অর্থাৎ বণিকসভাতেও রাহুল বাজি ধরলেন আম আদমিকে নিয়েই। সেটাও মোদীর সঙ্গে তাঁর তফাৎ গড়ে দিল।
এতেও থামেননি রাহুল। বরং প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে নরেন্দ্র মোদীর অসহিষ্ণুতা যখন প্রতি মুহূর্তে প্রকাশ পাচ্ছে, তখন রাহুল দেখাতে চেয়েছেন পদের জন্য তিনি লুব্ধ নন। বরং তাঁর আসল লক্ষ্য, সার্বিক ব্যবস্থার সংস্কার। তাঁর কথায়, “সাংবাদিকরা আখছার বলেন, রাহুল প্রধানমন্ত্রী হবেন! কেউ বলেন, হবেন না! কেউ বলেন, হতেও পারেন। এ সব অপ্রাসঙ্গিক কথা। ধোঁয়া হয়ে উবে যাবে। আসল প্রশ্ন হল, কী ভাবে আমরা মানুষের ক্ষমতায়ন করব।”
আম আদমির ক্ষমতায়নের বিকল্প মডেল ইউপিএ-ই দেখিয়েছে বলে দাবি করেছেন রাহুল। বলেছেন, কাজের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, তথ্যের অধিকার মানুষের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার এই ধারাকে ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখতে চায় কংগ্রেস। বলেছেন, এ দেশের যুবশক্তির অভাব নেই। অভাব দক্ষ শ্রমিকের। তার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাতে যেমন কর্মসংস্থান হবে। শিল্পমহলও উপকৃত হবে। ভারতকে মৌচাকের সঙ্গে তুলনা করে এক অতুল সম্পদ ও সম্ভাবনার ভাণ্ডার হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
রাহুলের কথা শুনে আজ প্রশংসাই করেছে বণিকসভা। সুনীল মিত্তল, রাহুল বজাজ, আদি গোদরেজের মতো শিল্পপতিরা বলেছেন, রাহুল সমস্যা সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সূত্র দিয়েছেন। তাঁর কথার মধ্যে সুনির্দিষ্ট দিগনির্দেশ ও গভীরতা ছিল। তবে বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহার বক্তব্য, এ সব মেকি প্রশংসা। রাহুলের মন রাখতেই ওঁরা এ সব বলেছেন।
মোদীর জবাব রাহুল আজ দিলেন। পাল্টা জবাবে মোদী কী বলেন, সেটাই এখন দেখার। |
|
|
|
|
|