|
|
|
|
প্রসঙ্গ প্রধানমন্ত্রিত্ব |
হ্যাঁ নয়, আবার না-ও নয়, ধাঁধা রেখেই দিলেন মনমোহন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বণিকসভার মঞ্চে রাহুল গাঁধীর বক্তৃতার ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। তারই রেশ ধরে আজ ফের প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে প্রশ্নের সামনে পড়ে গেলেন মনমোহন সিংহ। এবং এ দিন জবাব দিতে গিয়ে তিনি যেমন এই প্রসঙ্গে ‘হ্যাঁ’ বললেন না, তেমনই ‘না’-ও বললেন না। পাশাপাশি রাহুলের বক্তৃতার ভূয়সী প্রশংসা করেন অর্থনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেন, “ক্ষমতার দ্বৈত কেন্দ্র নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তা একেবারেই মনগড়া। এবং তা সংবাদমাধ্যমের সৃষ্টি।”
বণিকসভার মঞ্চে গত কাল রাহুলের বক্তৃতার রেশ আজ দিনভর ছড়িয়েছিল রাজনীতির অলিন্দে। প্রধানমন্ত্রীর পদ তাঁর কাছে অপ্রাসঙ্গিক জানিয়ে দিলেও রাহুল প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুত। গরিব ও পিছিয়ে পড়াদের ক্ষমতায়নের জন্য তাঁর যেমন স্বপ্ন রয়েছে, তেমনই উন্নয়নের জন্য বিকল্প মডেলও রয়েছে। এই অচেনা রাহুল এবং তাঁর মত ও পথ জাতীয় রাজনীতির বিভিন্ন শিবির থেকে সমালোচনা ও সমাদর দুই-ই পেয়েছে। তার পরেই আজ অবধারিত প্রশ্ন ওঠে মনমোহনের সামনে।
রাষ্ট্রপতি ভবনে পদ্ম-সম্মান দেওয়ার অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কি তৃতীয় বারের জন্য এই পদ গ্রহণ করতে প্রস্তুত? জবাবে মনমোহন বলেন, “এটা নিতান্তই কাল্পনিক প্রশ্ন।” তা হলে কি সেই সম্ভাবনা আপনি উড়িয়ে দিচ্ছেন? জবাবে দৃশ্যতই নির্বিকার মনমোহন বলেন, “সম্ভাবনা যেমন উড়িয়ে দিচ্ছি না, তেমনই হ্যাঁ-ও বলছি না।” পর মুহূর্তেই সাংবাদিকরা জানতে চান, পরিস্থিতি এলে তিনি কি রাহুলকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে প্রস্তুত? প্রশ্ন শেষ না হতেই মনমোহন বলেন, “ও হ্যাঁ, যে কোনও দিন!”
রাজনীতির কুশীলবদের অনেকের মতে, আসলে কংগ্রেস ফের ক্ষমতায় এলে কোন পরিস্থিতিতে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সে বিষয়ে সনিয়া-মনমোহনের সুষ্ঠু বোঝাপড়া রয়েছে। কৌশলে তাঁরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, ভবিষ্যতের জন্য সব সম্ভাবনার দরজা খোলা রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, সনিয়া-মনমোহনের মধ্যে যদি সমঝোতাই থাকে তা হলে দিগ্বিজয় কেন দ্বৈত ক্ষমতার কেন্দ্র প্রসঙ্গ তুলে বিতর্ক বাড়ালেন? কেন না, এই বিতর্ক প্রধানমন্ত্রীকে শুধু অস্বস্তিতে ফেলেনি, বিরোধীদের হাতেও অস্ত্র তুলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের খবর, দিগ্বিজয়ের মন্তব্যে দুঃখ পেয়েছেন মনমোহন। সে কথা তিনি সনিয়াকেও জানিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সনিয়ার নির্দেশে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদী বিবৃতি দিয়ে দিগ্বিজয়ের মত খারিজ করেছিলেন।
কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতা আজ বলেন, এমন নয় যে দিগ্বিজয় আলটপকা কোনও মন্তব্য করেছিলেন। হাইকম্যান্ডের সবুজ সঙ্কেত পেয়েই তিনি মুখ খুলেছিলেন। কিন্তু মুশকিল হল, সেই বার্তা দিতে গিয়ে দিগ্বিজয় একটু বেশি বলে ফেলেছেন। ভাষার মারপ্যাঁচে যে বার্তা দেওয়ার ছিল, তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
কংগ্রেসের ওই নেতা জানান, দিগ্বিজয়ের মন্তব্যের দু’টি উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে কংগ্রেসের মধ্যে রেষারেষি আছে- এই আলোচনায় জল ঢালা। কেন না, সম্প্রতি একাধিক বার রাহুল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়া তাঁর একমাত্র লক্ষ্য নয়। রাহুলের সেই মন্তব্যের পরে কংগ্রেসের অনেকে ভাবছিলেন, ভবিষ্যতেও হয়তো সনিয়া-মনমোহনের মতো দ্বৈত ক্ষমতার মডেল অব্যাহত থাকবে। এমনকী, পি চিদম্বরমকে প্রধানমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার হিসেবে ধরে নিয়ে জল্পনাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই জল্পনা প্রথম থেকেই খারিজ করতে চাইছিল হাইকম্যান্ড। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস নেতৃত্বের অনেকে এ-ও মনে করছেন, মনমোহনকে সামনে রেখে এ বার অন্তত ভোটে জেতা যাবে না। বরং রাহুলই ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী হবেন এই বার্তা দিলে নিচু তলার কর্মী-সমর্থকদের মনোবল বাড়ানো যাবে। কিন্তু এ জন্য দিগ্বিজয়ের যে ভাবে বলা উচিত ছিল, তা তিনি করতে পারেননি। এখন দ্বৈত ক্ষমতার কেন্দ্র নিয়ে সমালোচনার অর্থ, ইউপিএ শাসনে গত ৯ বছরের ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা তোলা। দিগ্বিজয়ের মত খারিজ করতে গিয়ে জনার্দন স্পষ্টই বলেন, ইউপিএ জমানায় ক্ষমতার দ্বৈত কেন্দ্র কার্যকরী ছিল। ভবিষ্যতেও এই মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে।
কংগ্রেসের একাংশ কিন্তু মনে করছে, দলের প্রকৃত অবস্থান ব্যাখ্যা করতে এটাই বলা উচিত ছিল যে প্রধানমন্ত্রী পদে মনমোহনকে মনোনীত করেছে কংগ্রেস। তিনি কংগ্রেসের কর্মসূচি রূপায়ণ করছেন। তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। সনিয়া নেতৃত্ব দিয়েছেন দলকে। তাঁরা দু’জনে সমন্বয় করে চলেছেন। এ কারণেই, ক্ষমতার দ্বৈত কেন্দ্র নিয়ে বিতর্ককে মনগড়া বলতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে এর পরেও প্রশ্ন থেকে যায়। তা হল কংগ্রেস ফের ক্ষমতায় এলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন? জবাবে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্য জানান, এর সুনির্দিষ্ট উত্তর একমাত্র সনিয়া, রাহুল এবং মনমোহনই জানেন। তবে আপাতত এটুকু বলা যায়, স্বস্তিজনক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে দল রাহুলকেই প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে চাইবে। আসন কমলে বা শরিকি নির্ভরশীলতা বেশি হলে হয়তো রাহুলই প্রধানমন্ত্রী হতে চাইবেন না। তখন ফের তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন মনমোহন।
|
পুরনো খবর: বণিকসভায় রাহুল-উদয়, চেনা খোলস ছেড়ে স্বপ্নের সওদাগর |
|
|
|
|
|