জিটিএ-র প্রধান সচিবের পদে নিয়োগ নিয়ে ফের হোঁচট খেল রাজ্য সরকারের সঙ্গে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সম্পর্ক।
মোর্চার দাবি মেনেই ওই পদ থেকে দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে রাজ্য সরকার। বর্তমানে প্রাণিসম্পদ দফতরের অতিরিক্ত প্রধান সচিব ও জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহকে সৌমিত্র মোহনের জায়গায় বসানোর প্রস্তাব দিয়েছিল রাজ্য। জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গের কাছে সেই প্রস্তাব পাঠানো হয়। শুক্রবার ওই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন জিটিএ-র ক্ষমতাসীন দল মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্ব। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “জিটিএ চুক্তি মতোই প্রধান সচিব পদে এক অফিসারের নাম প্রস্তাব করেছে রাজ্য। কিন্তু প্রধান সচিব পদে কারও নাম রাজ্যের তরফে আমাদের কাছে পাঠানোর আগে জিটিএ-এ চিফের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। সেটা এ ক্ষেত্রে হয়নি। তা হলে আর স্বশাসনের মানে কী?” তিনি জানান, তা ছাড়া তাঁরা প্রধান সচিব পদে পূর্ণ সময়ের জন্য অতিরিক্ত মুখ্য সচিব পর্যায়ের অফিসার চান। রোশনের কথায়, “তাই আমরা রাজ্যের প্রস্তাব মানতে পারব না। সেটা যথাস্থানে জানিয়ে দেওয়া হবে।” রাজ্য সরকার কিন্তু ইঙ্গিত দিয়েছে, মোর্চার এই চাপ তারা ভাল ভাবে মেনে নিচ্ছে না। |
মোর্চার অন্দরের খবর, সৌমিত্র মোহনকে সরানোর আর্জি রাজ্য সরকার মেনে নিলেও কাকে নিয়োগ করা হবে, সেই ব্যাপারে আগেভাগে তাঁর সঙ্গে আলোচনা না-করায় দলের প্রধান বিমল গুরুঙ্গ অসন্তুষ্ট। কারণ, অতীতে সুবাস ঘিসিংয়ের জমানায় পার্বত্য পরিষদের প্রধান সচিব পদে তাঁর পছন্দসই কাউকে নিয়োগ করাই ছিল প্রথা। একদা ঘিসিং ঘনিষ্ঠ গুরুঙ্গ দলীয় সতীর্থদের সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সেই প্রথা মেনেই এখন গুরুঙ্গের মত নিয়ে প্রধান সচিব পদে নিয়োগ করা উচিত বলে মনে করছে মোর্চা নেতৃত্ব।
মোর্চার এ হেন মনোভাবের কথা পৌঁছেছে মহাকরণেও। এ দিন দিনভর মহাকরণের শীর্ষ কর্তারা পঞ্চায়েত ভোট নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। এরই মধ্যে বিষয়টি জানতে পেরে স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, অমরেন্দ্রবাবুকে নিয়োগ করার আগে সেই বিষয়ে মোর্চার মতামত জানতেই তো গুরুঙ্গদের প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে। এর পরেও মোর্চা বিষয়টি নিয়ে দর কষাকষি করতে শুরু করলে রাজ্য যে ফের ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ মনোভাব নিয়ে পদক্ষেপ করতে পারে, সেটাও গুরুঙ্গদের মাথায় রাখা উচিত বলে স্বরাষ্ট্র দফতরের ওই কর্তা জানান। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের কথায়, “আগে কী ভাবে নিয়োগ হয়েছে, তা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। এই সরকারের নিয়োগ নিয়ে একটি নির্দিষ্ট নীতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনও চাপ অনভিপ্রেত।” সদ্য তৃণমূলে যোগ দিয়ে এই দিন কালচিনিতে পৌঁছেছেন স্থানীয় বিধায়ক উইলসন চম্পামারি। মোর্চার সমর্থনেই তিনি বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন। কয়েকশো তৃণমূল সমর্থক তাঁকে নিয়ে এই দিন সেখানে বাইক র্যালি করেছেন। উইলসন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুত তরাই-ডুয়ার্স উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার উপরে জোর দিয়েছেন। আমাদের আশ্বাসও দিয়েছেন।” সেই সঙ্গেই মোর্চা নেতৃত্বকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তাঁর বক্তব্য, “আমাকে যদি কালো পতাকা দেখানো হয়, তা হলে গুরুঙ্গ, রোশনদেরও ডুয়ার্স-তরাইয়ে ঢুকলে কালো পতাকা দেখানো হবে।”
|