মিটছে মোর্চার দাবি
জিটিএ থেকে সৌমিত্র মোহনকে সরানোর ইঙ্গিত
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির প্রায় দু’মাসের মাথায় সুর কিছুটা নরম করল রাজ্য সরকার। মোর্চার দাবি মেনে জিটিএ-র প্রধান সচিবের পদ থেকে দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকে সরানো হবে, এমনই ইঙ্গিত মিলল সরকারি সূত্রে। মোর্চার দাবি অগ্রাহ্য করে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠন ও পাহাড়ে সিআরপি মোতায়েন করেছিল রাজ্য সরকার। তার পরে এই প্রথম দেখা গেল, ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ মমতা সরকার তাদের কোনও একটি দাবির প্রতি অন্তত নরম হচ্ছে।
সৌমিত্র মোহন
সরকারি সূত্রের খবর, আলোচনার রাস্তায় হাঁটলে জিটিএ-র চাহিদা পূরণে সব রকম চেষ্টা করা হবে বলেই বার্তা দিয়েছে রাজ্য সরকার। ওই সূত্রের খবর, সম্প্রতি জিটিএ-এর তরফে বিনয় তামাংয়ের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল মহাকরণে গেলে তাঁদের মাধ্যমে ওই বার্তা পাঠানো হয়। সেই আলোচনাতেই বিনয়বাবুরা জিটিএ-এর প্রধান সচিব পদ থেকে সৌমিত্র মোহনকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় একজন ‘সিনিয়র’ আইএএস অফিসারকে বসানোর আর্জি ফের জানান। তখনই তা মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দেয় রাজ্য।
দার্জিলিঙের ম্যালে ২৯ জানুয়ারি উত্তরবঙ্গ উৎসবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে স্লোগান শুরু হয়। মমতা তখন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের সামনেই ধমকে বলেন, ‘আমি কিন্তু রাফ অ্যান্ড টাফ’। তারপর থেকেই মমতা-মোর্চা সম্পর্কের দ্রুত অবনতি শুরু হয়। গুরুঙ্গ অভিযোগ করেন, জিটিএ-র প্রধান সচিব সৌমিত্র মোহন নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মোর্চা ও জিটিএ-র পদাধিকারীদের এড়িয়ে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে উত্তরবঙ্গ উৎসবের আয়োজন থেকে সরকারি সাহায্যপ্রাপকদের তালিকা প্রস্তুতি। মোর্চা দাবি করে, সৌমিত্র মোহনকে অবিলম্বে জিটিএ প্রধান সচিবের পদ থেকে সরাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য তখন সে দাবি অগ্রাহ্য করেননি। মোর্চাও সেই সময়ে রাজ্যের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও কংগ্রেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে।
তবে কেন্দ্র চাপ দিয়েছে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের উপরেই। সেই বৈঠকের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতেই মোর্চা রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে হুমকির পথ থেকে সরে দাঁড়িয়ে আলোচনার পথে যেতে পা বাড়ায়। মহাকরণে তাদের প্রতিনিধি দলও আসে। রাজ্যও সেই প্রক্রিয়ায় পা মিলিয়েছে। তাই মার্চের শেষে এসে মোর্চার অন্তত একটি দাবি শুনে সৌমিত্র মোহনকে সরিয়ে দিতেই চায় বলে পাহাড়ের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বৃহস্পতিবার বলেছেন, “প্রধান সচিব পদে নতুন কাউকে নিয়োগের দাবি দীর্ঘ দিনের। সেই দাবি পূরণের চেষ্টা ফলপ্রসূ হলে তা অবশ্যই স্বাগত জানানো হবে।” ইতিমধ্যেই অবশ্য সৌমিত্র মোহনকে সরানোর ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্টে মামলার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল তারা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব জানান, জিটিএ যাতে সফল হয়, সে জন্য কেন্দ্র, রাজ্য ও মোর্চা তিন পক্ষকেই চেষ্টা করতে হবে। তাঁর কথায়, “হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরদাস্ত করবেন না। কিন্তু শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্যার কথা জানিয়ে সাহায্য চাইলে মুখ্যমন্ত্রী একটু বেশিই দেবেন।”
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, জিটিএ চুক্তি অনুযায়ী তার প্রধান সচিব পদে রাজ্যের প্রধান সচিব কিংবা সচিব পদমর্যাদার কোনও অফিসারকে বসাতে হবে। ভোটের পরে জিটিএ গঠন হলে সেখানকার সচিব পদে নিযুক্ত হন দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। ওই সময়ে জিটিএ-এর প্রধান সচিব পদে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। ৪ অগস্ট জিটিএ গঠনের পরে জয়ী মোর্চা প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে দার্জিলিঙের জেলাশাসককেই বাড়তি দায়িত্ব জিটিএ-এর প্রধান সচিবের দায়িত্ব পালনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য।
প্রথম তিন মাস নির্বিঘ্নে চললেও নভেম্বর থেকেই সৌমিত্র মোহনের প্রতি বিরূপ হ’ন গুরুঙ্গেরা। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সরকারি ক্রয়, নিয়োগ কিংবা সরকারি অনুদান বিলি নিয়ে যাতে অভিযোগ না-ওঠে, সে জন্য রীতিমত কড়াকড়ি করেন সৌমিত্রমোহন। এর পরেই শুরু হয় তাঁকে ওই পদ থেকে সরানোর জন্য মোর্চার চাপ। যদিও মোর্চার জনপ্রতিনিধিদের যুক্তি, ‘সিনিয়র’ আইএএস অফিসার না-থাকায় মহাকরণ ও নয়াদিল্লিতে যোগাযোগের সময়ে নানা সমস্যা হচ্ছে।
এই অবস্থায় রাজ্য এ বার কাকে ওই পদে পাঠায়, তার দিকেই নজর থাকছে পাহাড়ের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.