বামেরা বিরোধী। তৃণমূলও সমর্থন প্রত্যাহার করেছে। তবুও নানা ‘যদি’র উপরে ভরসা করে শিলিগুড়ি পুরবোর্ড চালানো যাবে বলে দাবি করছে পুরসভায় সংখ্যালঘু কংগ্রেস।
কংগ্রেসের দাবি, শহরের স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে সব কাউন্সিলর ‘যদি’ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তা হলে পুর পরিষেবা নির্বিঘ্নই থাকবে। কিন্তু তাতে শহরের মানুষ নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না। সেই ২০০৯ সালে এই পুরবোর্ড গঠন হওয়ার পর থেকে কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বামেদের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক বারবার বদলেছে। এখন কোন দল কাকে কেন কতটা সাহায্য করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এবং সে ক্ষেত্রে বর্তমান পুরবোর্ড যথেষ্ট সাহায্য না পেলে পুর পরিষেবা, উন্নয়নের কাজ স্তব্ধ হওয়ার আশঙ্কা প্রতি পদে। উন্নয়ন, পরিষেবা অচল হলে পুর কর্তৃপক্ষের কৈফিয়ত তলব করতে পারে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। সে ক্ষেত্রে পুরবোর্ড ভেঙে প্রশাসক নিয়োগের আশঙ্কা নিয়ে পুরসভার অন্দরে চলছে নানা আলোচনা। সব মিলিয়ে নতুন বাংলা বছরের মুখে দৈনন্দিন নাগরিক পরিষেবা ঠিকঠাক মিলবে কী ভাবে সেই প্রশ্নে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিলিগুড়ি শহরবাসী।
কেন এই দুশ্চিন্তা? কারণ, সুষ্ঠু পরিষেবা দিতে গেলে ফি মাসে মেয়র পারিষদ বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেমন কোন রাস্তা সারানো হবে, কোথায় জল, আলো বিষয়ক সমস্যা মেটাতে টাকা খরচ হবে ইত্যাদি। পরে পুরসভার বোর্ড মিটিঙে ওই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু ৪৭ আসনের পুরসভায় কংগ্রেসের কাউন্সিলর সংখ্যা মাত্র ১৪। তাই বোর্ড মিটিঙে ‘যদি’ তৃণমূল কিংবা বামেরা সমর্থন না-করে, তা হলে কোনও সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হবে না। উল্লেখ্য, বামেদের সদস্য সংখ্যা ১৭, তৃণমূলের ১৫। তা ছাড়া ১ জন তৃণমূল কাউন্সিলর আগেই ব্যক্তিগত কারণে ইস্তফা দিয়েছেন।
অর্থাত্, কংগ্রেসের মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তকে পুরবোর্ড চালাতে নির্ভর করতে হবে তৃণমূল এবং বামেদের উপরেই। তৃণমূল কদিন আগেই চিঠি দিয়ে মেয়রের উপর থেকে সমর্থন তুলেছে। তা হলে তাঁরা বোর্ড মিটিঙে কংগ্রেসের মেয়রের সিদ্ধান্ত সমর্থন করবেন? তৃণমূলের অন্দরের খবর, আপাতত কেউই মেয়রের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের কথা ভাবছেন না। তবে, ‘যদি’ মেয়রের তরফে তেমন কোনও প্রস্তাব কিংবা সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যা কি না শিলিগুড়ি শহরবাসীর স্বার্থে জরুরি, সে ক্ষেত্রে সমর্থন দেওয়া হতেও পারে বলে তৃণমূলের কাউন্সির অরিন্দম মিত্র জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা হবে না। যদি জনস্বার্থের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তাব আসে, তা হলে ভাবা হতে পারে।” |
বামেরা কী করবেন? অতীতে বামেদের সমর্থনে প্রায় ২০ মাস কংগ্রেসের বর্তমান মেয়রই পুরবোর্ড চালিয়েছেন। পরে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ায় মেয়র পদত্যাগ করে পুনর্নিবার্চিত হন। গত সপ্তাহে মেয়রের উপর থেকে লিখিত ভাবে সমর্থন তুলে নেয় তৃণমূল। কারণ তার আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানকারী নান্টু পালকে চেয়ারম্যান করা নিয়ে দুই জোট শরিকের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। নান্টুবাবুকে বেআইনি ভাবে চেয়ারম্যান পদে বসানোর অভিযোগ তোলার পরে কংগ্রেসের মেয়র কয়েক ঘন্টার মধ্যে তৃণমূলের ডেপুটি মেয়র ও মেয়র পারিষদের অপসারিত করেন। এর পরে বাজেট পেশ হলেও তা অনুমোদন হয়েছে কি না, তা নিয়ে সব মহলে বিতর্ক চলছে।
এই অবস্থায় কংগ্রেস একক ভাবে ফের ডেপুটি মেয়র, মেয়র পারিষদ দখল করে বোর্ড চালানোর কথা ভাবছে। সে ক্ষেত্রে বামেরা যদি বোর্ড মিটিঙে কংগ্রেসের সব সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে, তা হলে বর্তমান মেয়রের পক্ষে কোনও কাজই করা বাস্তবে সম্ভব হবে না। এমন হতে পারে, বোর্ড মিটিঙে কংগ্রেসের তরফে পেশ করার প্রস্তাব, সিদ্ধান্তের একযোগে বিরোধিতা করল তৃণমূল ও বামেরা। যদি তেমন হয়, তা হলে কংগ্রেসের বোর্ডের পক্ষে কোনও সিদ্ধান্ত অনুমোদন করানো সম্ভব হবে না। ‘যদি’ তৃণমূলের সঙ্গে বামেরা একযোগে হাঁটতে রাজি না হন, তা হলেই কংগ্রেসের পক্ষে সুবিধা হবে। যে প্রশ্নে বামেদের তরফে পুরসভার বিরোধী দল নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা এখনই কিছু বলছি না। দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে আলোচনা করে তার পরেই সকলে মিলে গঠনমূলক কোনও সিদ্ধান্ত নেব।”
যদিও কংগ্রেসের তরফে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত হাল ছাড়তে রাজি নন। তিনি বলেন, “আমরা বোর্ড মিটিঙে সব কাউন্সিলরদের কাছেই আর্জি জানাব। আশা করব, সকলে শহরবাসীর স্বার্থে পুরবোর্ড সঠিক ভাবে চালাতে সাহায্য করবেন।” অর্থাত্ যদি দলমত নির্বিশেষে সব কাউন্সিলর সাহায্য করেন, তা হলে বোর্ড চলতে পারে, না হলে নয়। স্বভাবতই শেষ পর্যন্ত পুর পরিষেবার হাল কী হবে সেই প্রশ্নে উদ্বেগে রয়েছেন গোটা শহরবাসী।
|