আপত্তি জানিয়েছিলেন খোদ শিল্পমন্ত্রী। তাই আলিপুরে টাটা গোষ্ঠীর পাঁচতারা হোটেলের কর্মী ইউনিয়নের দখল নেওয়ার পরেও রাতারাতি হাত গুটিয়ে নিয়েছিল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি। তার ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় সেই ইউনিয়নেরই দখল নিল কংগ্রেসের আইএনটিইউসি। এ বার তাতে সমর্থনই জানালেন প্রদেশ কংগ্রেস তথা আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য।
দলের শীর্ষ স্তরে কোনও রকম আলোচনা না করেই গত রবিবার ওই হোটেলের স্থায়ী কর্মীদের নিয়ে নতুন ইউনিট তৈরি করেছিল আইএনটিটিইউসি। হোটেল চত্বরে সে দিন তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে সভা করেছিলেন স্থানীয় নেতারা। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ওই ইউনিয়ন গুটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। তাঁর সাফ কথা ছিল, পর্যটন ব্যবসায় এই ভাবে ঝান্ডা তুলে দলীয় রাজনীতি করা যাবে না। ওই গোষ্ঠীর হোটেলগুলিতে যে রীতি চালু আছে, তা মেনে চলতে হবে। মালিক অথবা কর্মীদের কোনও সমস্যা হলে আলোচনা করেই তা মেটাতে হবে। হোটেল কর্তৃপক্ষকে শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু আশ্বাস দিয়েছিলেন, ব্যবসায় যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তা তিনি দেখবেন।
কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপবাবু ওই হোটেলে তাঁদের সংগঠনের ইউনিয়ন তৈরির খবর শুনে আপত্তি তো জানানইনি, উল্টে বলেছেন, “স্থানীয় স্তরে হয়েছে। আমাকে হয়তো পরে জানাবে।” |
দেশের শিল্প মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গ যখন পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে, যখন গত দু’বছরে নামমাত্র নতুন বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে রাজ্যে, এমনকী স্বয়ং শিল্পমন্ত্রী যখন পর্যটন ব্যবসায় ইউনিয়নের নামে রাজনীতির বিরোধী তখন পাঁচতারা হোটেলের মতো জায়গায় ইউনিয়ন তৈরিতে কি বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে না? সরাসরি জবাব এড়িয়ে প্রদীপবাবুর উত্তর, “ভারতের অনেক হোটেলেই আমাদের ইউনিয়ন রয়েছে।” আইএনটিইউসি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জমান কামারের দাবি, “এই শহরেই কয়েকটি পাঁচতারা-সহ বিভিন্ন হোটেলে আমাদের ইউনিয়ন আছে। হোটেলের অতিথি পরিষেবা ব্যাহত না করেই ইউনিয়ন চালানো হয়। এখনও পর্যন্ত কোথাও ইউনিয়নের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই।”
এ দিন দুপুরে হোটেলের স্থায়ী কর্মীরা এক বিশেষ সভায় মিলিত হন। সেখান থেকেই আইএনটিইউসি-র অধীনে নতুন কমিটি তৈরি হয়। সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন রাকেশ সিংহ এবং আমির পারভেজ। সম্পাদক অভিজিৎ বসু। তিনি আইএনটিটিইউসি-র কমিটিতেও সম্পাদকের পদে ছিলেন। রাকেশবাবু রাজ্য যুব আইএনটিইউসি-র কার্যকরী সভাপতি। বিকেলে তাঁর নেতৃত্বেই হোটেলের মূল প্রবেশপথের সামনে পথসভা করেন হোটেলের স্থায়ী কর্মীরা।” রাকেশবাবুর দাবি, “হোটেলে শান্তিপূর্ণ ভাবে শ্রমিক সংগঠন করা হবে। কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না। হোটেলের অতিথিরা কোনও ভাবেই যাতে বিরক্ত না হন, সে দিকে লক্ষ্য রাখা হবে।” সভায় উপস্থিত কামরুজ্জমান বলেন, “শৃঙ্খলার মাধ্যমে দাবি পেশ করা হবে। তবে শ্রমিক স্বার্থ বিঘ্নিত হতে দেওয়া যাবে না।” সম্পাদক অভিজিৎ বসুর বক্তব্য, “হোটেলের কিছু বিষয় নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সমস্যা সমাধান করার
আশ্বাস দিয়ে তৃণমূল নেতারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। এখন আর তাঁরা আমাদের পাশে নেই।” তবে নতুন ইউনিয়ন এখনও আইএনটিইউসি-র কেন্দ্রীয় সংগঠনের অনুমোদন পায়নি। রাকেশ সিংহের অবশ্য
দাবি, “অনুমোদনের জন্য দিল্লিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া, এই হোটেলে আইএনটিইউসি-র পতাকার নীচে ঠিকা শ্রমিকদের ইউনিয়ন রয়েছে। ওই ইউনিয়নের সঙ্গে মালিক পক্ষের সুসম্পর্ক রয়েছে।”
নতুন ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যা ১৭১। হোটেলের আরও স্থায়ী কর্মী এই ইউনিয়নে যোগ দেবেন বলে আশাবাদী রাকেশবাবু। ইউনিয়নের কয়েক জন বলেন, “পার্থবাবুর নির্দেশের পরে হোটেল থেকে ঝান্ডা তুলে নিয়েছিলেন স্থানীয় আইএনটিটিইউসি নেতৃবৃন্দ। সেই কারণেই আমরা আইএনটিইউসি-তে যোগ দিয়েছি।”
শুক্রবার বিকেলে রাশি রাশি ঝান্ডা উড়েছে হোটেলের মূল প্রবেশপথের সামনে। তবে আইএনটিইউসি-র।
|