মন্ত্রী পারেন না, তাই দলের হয়ে আক্রমণে মুকুল
রাজভবনে গেলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী। সেখান থেকে ফিরে সোজা গেলেন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে। দলের সঙ্গে বৈঠক করতে তৃণমূল ভবনেও গেলেন তিনি-ই। কিন্তু সেই বৈঠক শেষ হওয়ার পরে আর সুব্রতবাবু নন, সাংবাদিকদের সামনে চলে এলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। যিনি শুধু রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকেই নয়, আক্রমণ করলেন রাজ্যপালকেও।
কিন্তু কেন মুকুল রায়? সংঘাত সরকারের সঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। অনেকেই বলছেন, সেখানে প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কেউ মুখ খুলবেন, এটাই সাধারণত হওয়ার কথা। শুধু এ দিনই নয়, গত কয়েক দিন ধরেই পঞ্চায়েতমন্ত্রী বিষয়টি সামলাচ্ছেন। এমনকী, অনেক ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন, ‘যা বলার সুব্রতদা তো বলেছে।’
সেই সুব্রতবাবু এ দিন তৃণমূল ভবনে বৈঠকের পরে আড়ালে চলে যান। আর সামনে চলে আসেন মুকুলবাবু। তখনই কিছু মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে, তিনি কেন? জবাবে মুকুলবাবু বলেছেন, “রাজ্যের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আমি সাংবাদিক সম্মেলন করেছি। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আমার দলের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেছি।”
শাসক দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সব কথা সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি বা প্রকাশ্যে বলা সম্ভব নয়। সেই কথাগুলিই দলের পক্ষ থেকে বলে দিলেন মুকুলবাবু।
দলের মঞ্চ থেকে কী কী বললেন সাধারণ সম্পাদক? রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। সংবিধানে কার কী ভূমিকা, তা ২৪৩ (কে) ধারায় বলা আছে। ভোটে কত কর্মী লাগবে, তা নিয়ে রাজ্যপালের কাছে বলতে পারে কমিশন। এর বাইরে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই।” একই সঙ্গে কমিশনের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, “রাজ্য সরকার অতি দ্রুত ভোট করতে চেয়েছে। কেন তা ব্যাহত করার চেষ্টা হয়েছে? কমিশন ভোট বিলম্বিত করছে।” কমিশন যে সমস্ত চিঠি সরকারকে দিচ্ছে, তা নিয়ে মুকুলবাবুর কটাক্ষ, যারা হেরে যাওয়ার ভয় পাচ্ছে, এমন কোনও রাজনৈতিক দলের অফিসে বসে চিঠির খসড়া হচ্ছে। তার পরেই তাঁর মন্তব্য, “সব নির্বাচন কমিশনারের কাজের মেয়াদ তিন বছর ছিল। কিন্তু ২০১০ সালে আইন সংশোধন করে কেন কমিশনারের কাজের মেয়াদ ৬ বছর করা হল? সংবিধানে কিন্তু ছিল না।” জবাবে মুকুলবাবুর ব্যাখ্যা, সেই সময়ে ২০১১-র জনাদেশ কী হবে, তার আবহ তৈরি হয়ে গিয়েছে।
মুকুলবাবু আরও বলেছেন, “রাজ্য চেয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে ভোট হোক। শীতে ভোট হলে ভোটকর্মী, রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সুবিধা হত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ফেব্রুয়ারিতে ভোট করা হল না।” মে মাসে ভোটেই তো তাঁরা সরকারে এসেছেন। তা হলে গরমে ভোটে ভয় কেন? মুকুলবাবুর সাফ জবাব, “যে কোনও সময়ে যে কোনও নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত তৃণমূল। তৃণমূল কারও দয়া-দাক্ষিণ্যে আসেনি।”
এর আগেও মুকুলবাবু অভিযোগ করেছিলেন, নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করছে প্রধান বিরোধী দল। এ দিনও তাঁর সাংবাদিক বৈঠকের পরে সেই ব্যাখ্যাই উঠে আসে। যার জবাবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর প্রতিক্রিয়া, “অবান্তর কথা। আমাদের দফতরে অনেক কাজ থাকে। খসড়া করার সময় নেই।” বছর দশেক আগে সর্বভারতীয় পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলনেই যে সারা দেশে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “মুকুল রায় সর্বভারতীয় নেতা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর ভাণ্ডারে কম তথ্য আছে।” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “রাজ্য সরকার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধং-দেহি মনোভাব নিয়েছে। রাজ্য সরকারের উচিত, নমনীয় মনোভাব নিয়ে দেশের সংবিধান ও আইন মেনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সহমতের ভিত্তিতে পঞ্চায়েত ভোট করা।”
রাজ্যের আর্থিক অনটন রয়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে অনেক টাকা লাগবে। এ প্রসঙ্গে সূর্যবাবু বলেন, “রাজ্য কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে পারে। তা ছাড়া, এই মুহূর্তে রাজ্যে বিভিন্ন কাজে অনেক কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। সেখান থেকে এক দিনের জন্য বাহিনী নিয়ে ভোট করালে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। খরচও কম পড়বে।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য গোটা ঘটনাকে ‘খুব দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেন। কমিশনের বিরুদ্ধে মুকুলবাবুর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বক্তব্য, “সংবিধান ও নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে অজ্ঞ হলে এমন মন্তব্য করে মানুষ! কমিশনে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা ড্রাফ্ট করতে পারেন না, এটা অবান্তর।” পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর থাকবে রাজ্যপালের। সেই বিজ্ঞপ্তি জারিতে কোনও রকম ত্রুটি যেন না থাকে, সে ব্যাপারে রাজ্যপালকে খেয়াল রাখারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.