রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ পাঁচ বছর করা নিয়ে তোপ দেগেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তাঁর ইঙ্গিত, ২০১০-এ তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মীরা পাণ্ডেকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচন কমিশনার করে বসিয়েছিল। কিন্তু সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, কমিশনারের মেয়াদ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতিরাজ মন্ত্রকের নির্দেশে। পশ্চিমবঙ্গের আগেই দেশের বেশ ক’টি রাজ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। এখন দেশের প্রায় সমস্ত রাজ্যেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হন পাঁচ বছরের জন্যই।
রাজ্যের পঞ্চায়েত-কর্তারা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রে প্রথম ইউপিএ সরকার গঠিত হওয়ার পরে পঞ্চায়েতিরাজ মন্ত্রী হয়েছিলেন মণিশঙ্কর আইয়ার। পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সংস্কারের প্রশ্নে দেশের নানা জায়গায় সাতটি গোলটেবিল বৈঠক করেছিলেন তিনি। প্রথমটি হয় কলকাতাতে। বৈঠকগুলোয় নানা প্রস্তাব সম্পর্কে বিভিন্ন রাজ্য মতামত দিয়েছিল। এক-এক রাজ্যে নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ ছিল এক-এক রকম। তাই সমস্ত রাজ্য একসঙ্গে বসে স্থির করে, কমিশনারের মেয়াদ হবে পাঁচ
বছর। প্রশাসনিক মহলের দাবি, সেই প্রস্তাবমতোই ২০১০-এ মীরা পাণ্ডেকে পাঁচ বছরের জন্য রাজ্য
নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করা হয়েছিল।
সরকারি সূত্রের খবর: রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনার পরবর্তী পর্যায়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাঠামো কী হওয়া উচিত, তা খতিয়ে দেখতে ২০১১-র ১৮ মার্চ হৃষিকেশ পণ্ডার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টাস্ক ফোর্স গড়ে পঞ্চায়েতিরাজ মন্ত্রক। টাস্ক ফোর্স ২০১১-র ১৪ অক্টোবর রিপোর্ট পেশ করে। সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটি ওই বছরেরই ৯ ডিসেম্বর টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ গ্রহণ করে। দেশের সব রাজ্যকে তা কার্যকর করতে বলা হয়। অধিকাংশ রাজ্য ইতিমধ্যে সুপারিশ গ্রহণ করলেও পশ্চিমবঙ্গে এখনও তা কার্যকর হয়নি।
কী রয়েছে টাস্ক ফোর্সের সুপারিশে?
তাতে বলা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচন কমিশন যেমন স্বাধীন ভাবে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের দিন ঘোষণা করে, সে ভাবে পুর-পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার অধিকার দেওয়া হোক রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে পঞ্চায়েত ভোট সংগঠনের পক্ষেও সওয়াল করেছে টাস্ক ফোর্স। ফোর্সের যুক্তি: পঞ্চায়েত নির্বাচনে হামেশা আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দেয়। তাই লোকসভা-বিধানসভা নির্বাচনের মতো পঞ্চায়েত ভোটেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা উচিত। এবং কত বাহিনী মোতায়েন হবে, প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানের ভিত্তিতে তা স্থির করা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত বছর রাজ্য নির্বাচন কমিশনারদের সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন মুখ্যসচিব সমর ঘোষও জানিয়েছিলেন, কমিশনের পরিকাঠামো আরও বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের স্বার্থে জাতীয় কমিশনের মতো রাজ্য কমিশনেরও কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার অধিকার থাকা দরকার।
টাস্ক ফোর্সের সুপারিশে এ-ও বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের টাকা মঞ্জুরির ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত হওয়া উচিত, কোনও অবস্থাতেই গণহারে পুরসভা বা পঞ্চায়েত ভেঙে দেওয়া যাবে না।
বিশেষ পরিস্থিতিতে তা করতে হলেও বড়জোর ছ’মাস পর্যন্ত অর্থ সাহায্য চালানো যেতে পারে। তার পরে সংশ্লিষ্ট পুরসভা বা পঞ্চায়েতকে কোনও ভাবেই অর্থ মঞ্জুর করা যাবে না বলে সুপারিশে বলেছে হৃষিকেশ পণ্ডার টাস্ক ফোর্স। |