পঞ্চায়েতে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা কমাতে চায় তৃণমূল সরকার। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে যে খসড়া নির্বাচনী ইস্তাহার তৈরি করা হয়েছে, তাতেই এই অভিযোগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টের বৈঠকে ওই খসড়া ইস্তাহার শরিকদের দেওয়া হয়েছে। খসড়া ইস্তাহারে মূলত রাজনীতির কথাই বলা হয়েছে। শরিকরা নোট দেওয়ার পরে সোমবার পুনরায় ইস্তাহার নিয়ে বামফ্রন্ট বৈঠকে বসবে। সেখানেই কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে।
খসড়া ইস্তাহারে বলা হয়েছে, বামফ্রন্টের আমলে প্রথমে কমপক্ষে ৩৩% আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়। ফলে পঞ্চায়েতে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা আরও বাড়ত। সে উদ্দেশ্যেই বাম আমলে আইন সংশোধন করে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা কমপক্ষে ৫০% করা হয়। বামেদের সংরক্ষণ মেনে ভোট করলে পঞ্চায়েতে ৫০%-এর বেশি মহিলা প্রতিনিধি নির্বাচিত হতেন। যাতে পঞ্চায়েতে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা ৫০%-র বেশি না হয়, তাই তৃণমূল সরকার আইন সংশোধন করেছে বলে বামেদের অভিযোগ।
বামেদের যুক্তি, নতুন আইনে ৫০% পর্যন্ত মহিলা সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এতে পঞ্চায়েতে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা কমবে। তৃণমূল সরকারের আমলে যখন মহিলা সংরক্ষণ বিল এসেছিল, তখনও বামেরা একই অভিযোগ তুলে আপত্তি করেছিল। খসড়া ইস্তাহারে তারই প্রতিফলন রয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, মহিলা সংরক্ষণ থেকে আরম্ভ করে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার সব ইতিবাচক কৃতিত্বের পথ প্রদর্শক বামেরাই। বাম আমলে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ২৩% এবং পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ২৩% মুসলিম জনপ্রতিনিধি ছিলেন, এ কথা দাবি করে ইস্তাহারের খসড়ায় বলা হয়েছে, বামেদের দেখানো পথেই পঞ্চায়েতে ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) সংরক্ষণ করেছে তৃণমূল সরকার। এর ফলে মুসলিম প্রতিনিধির সংখ্যা আরও বাড়বে।
রাজীব গাঁধী তাঁদের দেখানো পথেই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করেছিলেন বলে বামেরা দাবি করে থাকেন। এ বারও খসড়া ইস্তাহারে সে কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি এ বার খসড়া ইস্তাহারে বামেদের নতুন দাবি, রাজ্যে ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে যে ভাবে বামফ্রন্ট পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা চালু করেছিল, সেই মডেলেই ভেনেজুয়েলার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট উগো চাভেসও তাঁর দেশে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।
খসড়া ইস্তাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ২২ মাসের তৃণমূল সরকার পঞ্চায়েত ব্যবস্থা খর্ব করে বিডিও-দের হাতে ক্ষমতা দিয়েছে। বহু ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ ভেঙে জেলাশাসকদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছে। ’৭৮ সাল থেকে পাঁচ বছর অন্তর পঞ্চায়েত ভোট করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও আমলাতন্ত্রের পরিবর্তে জনগণের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া চালু হয়, তৃণমূল সরকার তা ধ্বংস করে আমলাদের হাতে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দিতে চাইছে।
অপারেশন বর্গার মাধ্যমে ৭০ লক্ষ ভূমিহীন মানুষের হাতে জমি তুলে দেওয়ার কৃতিত্ব দাবি করে বামেদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তৃণমূলের হাতে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। নির্বাচিত পঞ্চায়েতকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী জোর করে নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা কেড়ে নিতে চাইছে। তোলাবাজ ও ‘প্রতিক্রিয়াশীল’রা জমি কেড়ে নিতে চাইছে বলেও অভিযোগ। বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘বেনজির’ আখ্যা দিয়ে তৃণমূল-কংগ্রেস-বিজেপির বিরুদ্ধে সব বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট হতে ডাক দেওয়া হয়েছে। |