শ্বাসরোধ হয়েই মারা যান বর্ধমানের তৃণমূল ছাত্রনেত্রী পিয়ালী মুখোপাধ্যায়, বলছে হাসপাতালের ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট। তবে ময়না-তদন্তের বিস্তারিত রিপোর্ট এখনও হাতে পায়নি পুলিশ। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ বলেন, “তদন্ত চলছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়না-তদন্তের বিস্তারিত রিপোর্ট পেলে যা বলার বলব।” পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে নেমে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তারা। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরে পিয়ালীর আত্মীয়-পরিজন ও ঘনিষ্ঠদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পিয়ালীর ভাই প্রীতম মুখোপাধ্যায় প্রথমে জানিয়েছিলেন দিদির মৃত্যু সংবাদ তাঁরা পান ঘটনার দিন বিকেলে কেষ্টপুরের এক তৃণমূলকর্মীর ফোনের মাধ্যমে। কিন্তু ওই তৃণমূলকর্মী কে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি পিয়ালীর পরিজনেরা। কোন তৃণমূলকর্মী সেই দিন ফোন করেছিলেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ ছাড়া, পিয়ালীর সিমকার্ড পরীক্ষা করে তৃণমূলের পাঁচ জন নেতা-মন্ত্রীর নাম পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে পিয়ালীর কী ধরনের যোগাযোগ ছিল এবং এই মৃত্যুতে কারও কোনও রকম প্ররোচনা আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি, পিয়ালীর কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক এবং ই-মেল পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। মৃতার ঘর থেকে পাওয়া সুইসাইড নোটটি তাঁরই লেখা কি না, হস্তলিপি বিশারদের মাধ্যমে যাচাই করা হচ্ছে।
বর্ধমানে পিয়ালীর স্বামী সুভাষ চক্রবর্তীকে ফোনে ধরা হলে তাঁর এক আত্মীয় বলেন, “স্ত্রীর মৃত্যুকে ঘিরে নানা রটনায় তিনি বিধ্বস্ত। কারও সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন না।” যদিও পরে ওই আত্মীয়র মাধ্যমে সুভাষবাবু জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী কাজের সূত্রে কলকাতায় থাকতেন। বিয়ের পর থেকে তাঁদের সম্পর্ক ভালই ছিল। তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও ছিল। স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনার পরে তিনি তাঁর শ্যালক প্রীতমের সঙ্গে কলকাতায় আসেন। কারও বিরুদ্ধে তাঁদের কোনও অভিযোগ নেই।
এ দিকে কংগ্রেসের তরফে পিয়ালীর মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। কোনও ভাবে এই মৃত্যুর ঘটনাকে যাতে পুলিশ ধামাচাপা না দিতে পারে, তা দেখার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছে তারা। কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “সুইসাইড নোটের হাতের লেখা যাচাই করা হোক। অন্য অনেক ঘটনা চেপে যাওয়ার চেষ্টা হয়। এই ঘটনাটি যেন চেপে না যাওয়া হয়, তার অনুরোধ করছি।”
মঙ্গলবার রাতে পিয়ালীর ঝুলন্ত দেহ রাজারহাটের নারায়ণপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পেশায় ব্যাঙ্কশাল কোর্টের আইনজীবী পিয়ালীর বাড়ি বর্ধমানে। গত কয়েক মাস ধরে কাজের সূত্রে রাজারহাটের ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন তিনি।
|