রাজারহাটের নারায়ণপুর এলাকায় এক মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে নারায়ণপুরে ফ্ল্যাটের ঘর থেকে পিয়ালী মুখোপাধ্যায় (২৮)-এর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মিলেছে একটি সুইসাইড নোটও। তিনি বর্ধমানে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেত্রী ছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পিয়ালীর বাড়ি বর্ধমানের গোলাপবাগে হলেও গত তিন মাস তিনি নারায়ণপুরের একটি
|
পিয়ালী মুখোপাধ্যায় |
ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। পেশায় ছিলেন ব্যাঙ্কশাল কোর্টের আইনজীবী। সোমবার রাতে পিয়ালীর বাড়িতে তাঁর এক বান্ধবী দেখা করতে আসেন। অনেক বার বেল বাজিয়েও সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিল। তিনি পিয়ালীর প্রতিবেশীদের ডাকেন। আত্মীয়দেরও খবর দেওয়া হয়। আত্মীয়রা এসে সাড়াশব্দ না পেয়ে খবর দেয় এয়ারপোর্ট থানার পুলিশকে। পুলিশ দরজা ভেঙে দেখে পিয়ালী নিজের ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পিয়ালী বিবাহিত হলেও ওই ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। তাঁর একটি পাঁচ বছরের মেয়ে থাকলেও সে থাকত বর্ধমানে পিয়ালীর বাড়িতে। এই ঘটনার শোনার পরেই পিয়ালীর মা ও ভাই প্রীতম কলকাতায় চলে আসেন। পিয়ালীর ভাই বলেন, “আমরা একে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসাবেই দেখছি। দিদির মৃত্যুর ঘটনায় আমরা কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করিনি। তবে প্রথমে পুলিশ আমাদের সুইসাইড নোট দেখাতে না চাইলেও পরে দেখিয়েছে।”
কী লেখা ছিল সুইসাইড নোটে? পিয়ালীর ভাই প্রীতম জানিয়েছেন, তিন লাইনের সুইসাইড নোট তিনি দেখেছেন। তাতে লেখা রয়েছে, অবসাদগ্রস্ত, হতাশ ও একাকীত্বের জীবন থেকে তাঁর আর কিছু পাওয়ার ছিল না। তাই এই রাস্তা তিনি বেছে নিয়েছেন। তাঁর এই মৃত্যুর জন্য কারও প্ররোচনা নেই বা কেউ দায়ী নন। পিয়ালীর ভাই প্রীতম বলেন, “রোজই দিদির সঙ্গে ফোনে কথা হতো। ঘটনার আগের দিন বিকেলেও কথা হয়েছে। কখনও কিছু অস্বাভাবিক মনে হয়নি।” তাঁর প্রশ্ন, “কিছু টের পেলে কী দিদিকে একা থাকতে দিতাম?”
পিয়ালীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি বর্ধমানের আইন কলেজে পড়ার সময় থেকেই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এমনকী তাঁর নেতৃত্বেই ওই কলেজের আইন বিভাগে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের শাখা খোলা হয়। সেই সূত্রে তৃণমূলের বেশ কিছু প্রথম
সারির নেতার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এর পর আইন পাশ করে মাস আটেক আগে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। প্রথমে তিনি একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। পরে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। পুলিশ জানিয়েছে, পিয়ালীর প্রতিবেশী ও আবাসনের কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত চলছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। |