মাঠপুকুর-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত, ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শম্ভু কাও এখনও ‘ফেরার’। এ দিকে, তাঁর পরিবারের লোকজনের উপরে পুলিশি হেনস্থা হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ দায়ের করলেন শম্ভু কাওয়ের মা গৌরীদেবী। আদালতে বৃদ্ধার আবেদন, তিনি বা তাঁর পরিবারের অন্যেরা অভিযুক্ত নন। ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগও নেই। শম্ভু যদি অপরাধ করে থাকেন, পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে তদন্ত করুক। তাঁর বিচার হোক। কিন্তু তিনি কেন এই বয়সে (৭৫), অসুস্থ শরীরে পুলিশি হেনস্থার শিকার হবেন? বৃদ্ধার আইনজীবী হয়েছেন সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
গৌরীদেবীর আরও অভিযোগ, রাতে যখন-তখন বাড়িতে পুলিশ আসছে। সকলকে ঘুম থেকে তোলা হচ্ছে। পরিবারের মেয়ে-বৌ এবং ছোটরাও রেহাই পাচ্ছে না। কোনও রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছেন না তাঁরা। যখন-তখন বাড়ির সদস্যদের থানায় ডাকা হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা থানায় বসিয়ে রাখা হচ্ছে তাঁদের।
এ দিকে, নিজের দলের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গ ছেড়ে দক্ষিণ শহরতলির দাগি দুষ্কৃতীদের ডেরায় শম্ভু কাও আশ্রয় নিচ্ছেন বলে পুলিশ খবর পাচ্ছে। তারা এখন সে সব ডেরাতেই নজর রাখছে বলে সূত্রের খবর। যদিও দফায় দফায় হানা দিয়েও নাকি তাঁর টিকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ কোথাও পৌঁছনোর আগেই সেখান থেকে বেপাত্তা হয়ে যাচ্ছেন অভিযুক্ত ওই কাউন্সিলর। এটা নিছকই পুলিশি ব্যর্থতা, না কি এর পিছনেও কাজ করছে পুলিশের ভিতরের কোনও ‘চক্র’, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।
পুলিশ সূত্রের দাবি, দোলের দিন সকালেও দক্ষিণ শহরতলির একটি ডেরায় শম্ভু আছেন বলে খবর পাওয়া যায়। রাতে সেখানে যৌথ অভিযান চালায় রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ। কিন্তু তার কিছুক্ষণ আগেই অভিযুক্ত সেখান থেকে পালিয়ে যান বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর।
প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের অনুমান, পুলিশি হানার খবর আগেই পৌঁছে যাচ্ছে শম্ভুর কাছে। তাই গা ঢাকা দিতে সুবিধা হচ্ছে তাঁর। পুলিশ জেনেছে, ওই এলাকায় শম্ভুর কয়েক জন ঘনিষ্ঠ নানা অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শম্ভুর হদিস পেতে চাইছে পুলিশ। তাদের গতিবিধির উপরে নজরদারিও চালানো হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার রাত থেকে আশ্রয় নেওয়ার পন্থা বদলেছেন অভিযুক্ত কাউন্সিলর। কয়েক দিন আগেও স্থানীয় কয়েক জন তৃণমূল নেতার বাড়িতে যাতায়াত করছিলেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার রাতের পর থেকে পরিচিত দুষ্কৃতীদের ডেরাতেই থাকার চেষ্টা করছেন। ই এম বাইপাস সংলগ্ন কয়েকটি ভেড়িতেও তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে পুলিশ জেনেছে। বুধবার সকালে তেমনই এক ভেড়ি এলাকায় লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরা অবস্থায় তাঁকে দেখাও যায়। গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলছে, নিজের অবস্থান গোপন রাখতেই পরিচিতদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করছেন না ওই কাউন্সিলর। |