টানা ছুটির মাঝে কাজের একটা দিনও প্রায় ছুটিরই আমেজে কাটাল কলকাতা হাইকোর্ট। আইনজীবীদের একাংশের গরহাজিরার প্রবণতার সঙ্গে এ বার নজরে এল বিচারপতিদের অনেকের অনুপস্থিতি। সব মিলিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে প্রধান বিচারপতি যে প্রয়াস শুরু করেছেন, তা যেন কিছুটা ধাক্কা খেল।
বুধবার দোলের জন্য কলকাতা হাইকোর্ট ছুটি ছিল। আজ, শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত আবার টানা তিন দিন ছুটি। মাঝে ছিল শুধু একটা কাজের দিন বৃহস্পতিবার। কিন্তু এ দিন আদালত সরকারি ভাবে খোলা থাকলেও কার্যত ছুটিরই হাওয়া মালুম হয়েছে। কর্মী-অফিসারদের হাজিরা প্রায় স্বাভাবিক থাকলেও আইনজীবীদের বড় অংশ আসেননি। আসেননি ১৪ জন বিচারপতি। এমনকী, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়ও গরহাজির। ফলে কাজকর্মের স্বাভাবিক গতি কিছুটা হলেও বিঘ্নিত হয়েছে।
এমনটা যে হতে পারে, দু’দিন আগেই তার একটা আভাস মিলেছিল। হাইকোর্টের বার অ্যাসেসিয়েশন মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্রকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, দোলের পর দিন অনেকে হোলি পালন করবেন। তাই অনেক আইনজীবী হয়তো আসতে পারবেন না। উপরন্তু দোলের পর দিন রাস্তায় যানবাহনও কম থাকে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কোনও মামলায় দু’পক্ষের কৌঁসুলি হাজির না-থাকলে শুনানি স্থগিত রাখতে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করা হয়। প্রধান বিচারপতি সে দিন এ ব্যাপারে কোনও মতামত দেননি। তবে এই ব্যবস্থায় তাঁর যে বিশেষ সায় নেই, আবেদনকারীরা তেমন আঁচ পেয়ে গিয়েছিলেন বলে কোর্ট-সূত্রের খবর।
কিন্তু অ্যাসোসিয়েশনের ওই আবেদনের পরে কোনও কোনও মহলে আশঙ্কা জেগেছিল যে, বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে কোনও কাজই হবে না। এ দিন অবশ্য আদালত বসার পরে দেখা যায়, কর্মী-অফিসারদের হাজিরা মোটামুটি স্বাভাবিক, আইনজীবীদেরও একাংশ উপস্থিত। অ্যাডভোকেট জেনারেল না-এলেও জিপি আশোক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সরকারি আইনজীবীদের অধিকাংশই হাজির। যদিও কৌঁসুলিদের একটি বড় অংশ এবং ১৪ জন বিচারপতি আসেননি। তাই কয়েকটি মামলার শুনানি হলেও বিচার-প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ছন্দ পেতে পারেনি। বিশেষত সাম্প্রতিক অতীতে যেখানে নানা সময়ে কৌঁসুলিরা অনুপস্থিত থাকলেও বিচারপতিরা তাঁদের মঞ্চে নিয়মিত আসীন হয়েছেন, সেখানে এ দিন এক সঙ্গে এত জন বিচারপতির গরহাজিরা সব পক্ষের নজরে এসেছে।
কলকাতা হাইকোর্টে এই মুহূর্তে বিচারপতির সংখ্যা ৪০। এঁদের দু’জন রয়েছেন আন্দামান বেঞ্চে। অর্থাৎ, এ দিন ৩৮ জন বিচারপতির হাজির থাকার কথা ছিল। ছিলেন সাকুল্যে ২৪ জন। তাঁরা কেন এলেন না?
হাইকোর্ট-সূত্রের খবর: প্রধান বিচারপতি নিজে ক’দিন ধরে অসুস্থ (তবে মঙ্গলবারও তিনি আসেন)। বিচারপতি রঘুনাথ ভট্টাচার্য অসুস্থ। বিচারপতি তপেন সেনের পুত্র অসুস্থ। বাকিরা কেন আসেননি, হাইকোর্টের তরফে তা কেউ জানাতে পারেননি।
বিচারপতি অরুণ মিশ্র কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আদালতের কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছেন। ‘কথায় কথায় ছুটি’র প্রবণতা সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রসঙ্গে তিনি অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। এমনকী এ-ও বলেছেন, হাইকোর্ট ‘নির্দেশ’ দিয়ে এই মানসিকতা বদলাতে পারবে না, এ জন্য দরকার অন্তরের তাগিদ। ইদানীং আইনজীবীদের মধ্যে প্রধান বিচারপতির এই মনোভাবের ইতিবাচক প্রতিফলন লক্ষ্য করা গিয়েছে। যেমন, দু’-একটা ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটলেও সম্প্রতি কোনও আইনজীবীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশের জন্য হাইকোর্ট মুলতবি হয়েছে বেলা সাড়ে তিনটের পরে, অর্থাৎ কাজের সময়ের প্রায় অন্তিম লগ্নে। ওই সব ক্ষেত্রে এত দিন কাজ বন্ধ রাখাটাই ছিল মোটামুটি দস্তুর।
এ দিনের ঘটনায় ফের পুরনো প্রবণতার ছায়া দেখছেন আইনি মহলের কেউ কেউ। |