পরে উদ্ধার ৮
শিশু কোলে হোমের চালে লাফিয়ে উধাও ১৪ তরুণী
মুম্বইয়ের নিষিদ্ধ পল্লি থেকে উদ্ধারের পরে কলকাতায় হোমের জীবন পছন্দ হচ্ছিল না তাঁদের। তাই কোলের শিশুটিকে আঁকড়েই দোতলার বারান্দা টপকে পালালেন এক দল বাংলাদেশি তরুণী। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে এলিয়ট রোডের একটি হোমে।
মাসখানেক আগেই উত্তরপাড়ায় মহিলাদের হোম থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন কয়েক জন আবাসিক। সেই ঘটনার পরে খুবই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিল রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতর। প্রশ্ন ওঠে, উদ্ধার করে হোমে আনার পরেও তরুণীরা পালাচ্ছেন কেন? হোমে অত্যাচারের অভিযোগও ওঠে। নিষিদ্ধ পল্লির অবাধ জীবন ছেড়ে হোমের শৃঙ্খলায় মেয়েরা টিকতে চায় না বলে সেই সময় আক্ষেপ করেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র।
এ বারেও হোমের মেয়েদের ঘরের ফেরানোর প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও সরকারি পুনর্বাসন কার্যক্রমের গলদই বাংলাদেশের তরুণীদের পালানোর কারণ বলে সংশ্লিষ্ট কর্তারা ঠারেঠোরে মেনে নিয়েছেন। হোম থেকে পলাতক ১৪ জন তরুণীর মধ্যে একটি শিশু-সহ আট জনকে হাওড়া স্টেশনে উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ২১ নম্বর ফ্ল্যাটফর্মে মুম্বইগামী গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস ছাড়ার ঠিক আগে তাঁদের ধরা হয়। ফের মুম্বইয়ের পুরনো ঠিকানায় পালানোর চেষ্টায় ছিলেন ওই মেয়েরা।
এই হোম থেকেই পালিয়ে যান এক দল আবাসিক। —নিজস্ব চিত্র
নিষিদ্ধ পল্লিতে মেয়েরা দিনে কয়েক হাজার টাকা রোজগার করেন। স্বাধীন জীবনযাপন করেন। শখের জিনিস কেনেন। সিনেমা দেখতে যেতে পারেন! এ-সবের প্রলোভনও হোমের জীবনের প্রতি মেয়েদের অনীহার সৃষ্টি করে বলে এ দিন মন্তব্য করেন সমাজকল্যাণ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা। তাঁর কথায়, “এই ধরনের মেয়েরা হোমে কিছু দিন থাকার পরেই হাঁপিয়ে ওঠেন। স্বাধীনতা নেই, সিনেমা নেই, সাজগোজ নেই। বাড়িতে ফিরে মানিয়ে নিতে পারা নিয়েও সংশয় থাকে। তাই হোম থেকে পালিয়ে নিষিদ্ধ পল্লিতে ফিরে যাওয়ারই চেষ্টা চালান তাঁরা।”
এই মরিয়া চেষ্টারই নমুনা মিলেছে এলিয়ট রোডের ‘অল বেঙ্গল উইমেন্স ইউনিয়ন’-এর হোমে। সেখানে দোতলার লোহার গ্রিলে স্ক্রু আটকানো ছিল। চুপিসারে স্ক্রু ঢিলে করার কাজটা আগেই শুরু করেছিলেন মেয়েরা। এ দিন কাকভোরে গ্রিল সরিয়ে শিশুকে কোলে নিয়েই পাশের টিনের চালে লাফিয়ে পড়েন তাঁরা। সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, পাঁচ মাস আগে ওই হোমে মেয়েগুলিকে রাখা হয়েছিল। তাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। ওই মেয়েদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে কথাও চলছিল। কিন্তু মেয়েরা অধৈর্য হয়ে উঠেছিলেন। পুলিশি সূত্রের খবর, মুক্তির আশায় ওই মেয়েরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হোমে ভাঙচুর করেন। পার্ক স্ট্রিট থানায় সেই ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এখন ফের উদ্ধারের পরে আট মহিলাকে কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে পুলিশ-প্রশাসন।
হোমে কেমন ছিলেন ওই মেয়েরা? অধৈর্য হয়ে ওঠার বা ভাঙচুরের কারণটাই বা কী?
ওই মেয়েদের অভিযোগ, পাঁচ মাস ধরে কলকাতার হোমে তাঁদের উপরে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করা হচ্ছিল। ঠিকঠাক খেতে বা বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হত না। সমাজকল্যাণ দফতর অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। বরং এলিয়ট রোডের হোমটি রাজ্যের অন্যতম সেরা হোম বলে শংসাপত্র দিয়েছেন ওই দফতরের প্রতিনিধিরা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.