সমীরের জায়গায় অর্পিতা
চারুকলা কলেজে নাট্যকর্মীর মনোনয়নে প্রশ্ন
চিত্রশিল্পীর বদলে নাট্যকর্মী।
চারুকলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ইন্ডিয়ান কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড ড্রাফ্টসম্যানশিপ’-এর পরিচালন সমিতিতে নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষকে সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে রাজ্য সরকার। ওই কলেজে সরকার মনোনীত সদস্য হিসেবে এ-পর্যন্ত চারুশিল্পীরাই মনোনয়ন পেয়ে এসেছেন। সেই জায়গায় এ বার নাট্যকর্মী কেন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। রাজ্য সরকারের তরফে অবশ্য এর একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলছেন, “কোন ক্ষেত্রের মানুষকে মনোনীত করা হবে, তা তো নির্দিষ্ট করা নেই। তা ছাড়া চারুকলার সঙ্গে নাটকের (পারফর্মিং আর্টস) কোনও বিরোধ নেই! তাই আমরা অর্পিতা ঘোষের নাম বিবেচনা করেছি।” যদিও অর্পিতাদেবী জানান, কলেজে সরকার মনোনীত সদস্যা হিসেবে ঠিক কী করণীয়, তা তাঁর জানা নেই। চারুশিল্পের পঠনপাঠনের সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞ শিক্ষকদের অনেকে ওই পদে নাট্যকর্মীর মনোনয়নে বিস্মিত। তাঁরা জানান, এই বিশেষ শাখার পড়াশোনার সমস্যা একটু আলাদা। এবং চাহিদাগুলোও একটু অন্য রকমের। একমাত্র এর সঙ্গে যুক্ত মানুষেরাই সেগুলি বুঝবেন। দমদমের ওই কলেজ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত। সেখানে দৃশ্যকলা, স্থাপত্য-সহ চারুকলার বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হয়। কলেজ সূত্রের খবর, বাম জমানায় পরিচালন সমিতিতে মনোনীত হয়েছিলেন চারুশিল্পী শোভন সোম এবং নির্মাল্য নাগ। বর্তমান সরকার সদস্য করেছিল চিত্রশিল্পী সমীর আইচকে। কিন্তু জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় সমীরবাবুর। সরকার তাঁকে যে-সব দায়িত্ব দিয়েছিল, তা থেকে পদত্যাগ করেন ওই শিল্পী। তার জেরে শূন্য হয়ে যায় দ্য ইন্ডিয়ান কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড ড্রাফ্টসম্যানশিপের পরিচালন সমিতিতে সরকার মনোনীত সদস্যের পদটি। অর্পিতাদেবী সম্প্রতি সেই জায়গাতেই মনোনীত হয়েছেন।
এই মনোনয়নে চারুশিল্পের শিক্ষকেরাই শুধু বিস্মিত নন। এটা যুক্তিযুক্ত কি না, তা নিয়ে সন্দিহান নাট্যকর্মীরাও। যেমন কৌশিক সেন। তাঁর কথায়, “নাটকের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের সব বিষয়ই বোঝা উচিত। তাই ওই কলেজের সঙ্গে যুক্ত হলে অর্পিতা ঘোষের ব্যক্তিগত উপকার হতে পারে। কিন্তু কলেজের সত্যি কোনও সুবিধা হবে কি না, সেই ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে।”
আর শিক্ষাবিদদের একাংশের মতে, এই ধরনের মনোনয়ন অনুচিত। যেমন সুনন্দ সান্যাল। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বৃহদর্থে শিল্পের একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন! তাঁর মতে, সব ‘কলা’ই আসলে শিল্প। মনে হয়, তাঁর এই দর্শন মেনেই এ-সব হচ্ছে। এগুলো একেবারেই উচিত নয়।”
পরিচালন সমিতিতে সরকার মনোনীত সদস্য উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে কলেজের যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেন। তাই কলেজের সুবিধা-অসুবিধার দিকগুলি ওই সদস্যের ভাল ভাবে বোঝা দরকার। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলার এক শিক্ষকের মতে, অর্পিতাদেবীর মনোনয়ন বিস্ময়কর ও অস্বাভাবিক। তিনি বলেন, “সম্প্রতি জানলাম, আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্পী শুভাপ্রসন্নকে মনোনীত করা হয়েছে। যদিও তিনি তা গ্রহণ করেননি। আবার আর্ট কলেজে দেওয়া হচ্ছে অর্পিতা ঘোষকে। এর যে কী কারণ, সেটাই বোধগম্য নয়।” প্রতিটি বিষয়েরই নিজস্বতা রয়েছে। সেটা সরকারের মাথায় রাখা দরকার বলে মন্তব্য করেন শিল্পকলার ওই শিক্ষক।
অর্পিতাদেবী এখনও পর্যন্ত ওই কলেজের পরিচালন সমিতির কোনও বৈঠকে যোগ দেননি। তাই ওই নাট্যকর্মী নিজেও জানেন না, সেখানে তাঁর কাজটা কী! অর্পিতাদেবীর কথায়, “সরকারের চিঠি পেয়েছি। পদটা আমি গ্রহণও করেছি। কিন্তু এখনও তো যাইনি কলেজটিতে। জানিই না, সেখানে কী হয়! সরকার মনোনীত সদস্য হিসেবে কলেজে আমার ভূমিকা কী হবে, তা-ও জানা নেই। বৈঠকে যোগ দিলে এ-সব পরিষ্কার হবে।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.