মহানন্দার পরে মাছের মড়ক এ বার মূর্তি নদীতে
হানন্দার পরে এ বার মূর্তি। রবিবার সকালে ময়নাগুড়ির রামসাই সংলগ্ন এলাকায় পাহাড়ি নদী মূর্তিতে ভেসে উঠল অসংখ্য মৃত-অর্ধমৃত কুচো মাছ। বেমালুম সে সব উধাও হয়েও গেল। কিছু বিক্রি হয়ে গিয়েছে, কিছু কোঁচড়ে ভরে নিয়ে গিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ। তবে বন দফতর কিছু মৃত মাছ নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করেছে।
দু’দিন আগেই শিলিগুড়ির কাছে মহানন্দা ক্যানালে এ ভাবে মাছ ভেসে থাকতে দেখা যায়। এর আগে তিস্তা ও করলা নদীতেও একই ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক ভাবে মৎস্য দফতরের কর্তাদের সন্দেহ নদীতে কীটনাশক অথবা গেঁজে ওঠা হাঁড়িয়া ছড়িয়েই মাছ মারার চেষ্টা হয়েছে। রামসাই বাজার এলাকার বাসিন্দারাই এই দিন সকালে জলে বোরোলি, খোকসা, ল্যাঠা, গচির মতো অসংখ্য কুচো মাছ ভেসে যেতে দেখে হইচই শুরু করেন। বনকর্মীরাই সব থেকে আগে পৌঁছন সেখানে। তারপরে যান মৎস্যজীবী সংগঠন ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্তারা।
মূর্তি নদীতে মাছের খোঁজ। —নিজস্ব চিত্র।
কেন বারবার এমন কাণ্ড হচ্ছে? মৎস্যজীবীদের সংগঠনের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক শিবেন পইতের ধারণা, দ্রুত লাভ করার জন্যই কিছু অসাধু মৎস্যজীবী এই কাজ করছেন। বোরোলির মতো মাছ এখন আড়াইশো গ্রাম ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারেও। তাঁর কথায়, “বাজারে ছোট মাছের দর এই ক’বছরে দ্রুত বেড়েছে। শীত থেকে গ্রীষ্ম এই সময়টুকুতে নদীতে হাঁটু জল থাকে। তখন জাল ফেলে কুচো মাছ ধরার চেয়ে বিষ ছড়িয়ে মাছ মেরে ফেলা অনেক সহজ। সেটাই হচ্ছে।” এখন নদীতে হাঁটু জলও নেই। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মৎস্য বিশেষজ্ঞ সুদীপ বরাট জানান, নদীর তীরে বসতি বাড়ছে। চা বাগানও বেড়েছে। সেই চা বাগানগুলির ঢালও নদীর দিকেই। তাঁর ধারণা, “বাগানে কীটনাশক দেওয়া হলে তা নদীতে গিয়েই পড়ছে। তাতেও মাছের মৃত্যু হচ্ছে।” পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাফের অনিমেষ বসুর কথায়, “এত বারবার মাছের মৃত্যু হচ্ছে, কিন্তু কেউই ঠিক কারণটা কেন বলতে পারছেন না? প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে এই রহস্য ভেদ করা।”
প্রশাসন কী করছে? জলপাইগুড়ি জেলা মৎস্য আধিকারিক পার্থসারথি দাস বলেন, “নজরদারি বাড়িয়ে নদীর জলে দূষণ রোখা খুব শক্ত। এর জন্য প্রয়োজন স্থানীয় স্তরে সচেতনতা বাড়ানো।” জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্র এ দিন জানান, কেন ওই নদীতে মাছ ভেসে উঠেছে তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন। তারপরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু বারবার এমন কাণ্ড ঘটায় নদীর বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হতে বসেছে বলে উদ্বিগ্ন প্রাণিবিদ্যা বিশেষজ্ঞেরা। সুদীপবাবু বলেন, “মাছের বিভিন্ন প্রজাতি বিলুপ্ত হচ্ছে।” মূর্তি নদী গরুমারা জঙ্গল ছুঁয়ে গিয়েছে। পাড়ে সংরক্ষিত বনভূমি। নদীর জল খায় গন্ডার, হরিণ, হাতি-সহ বিভিন্ন প্রাণী। জলপাইগুড়ির ডিএফও (বন্যপ্রাণ) সুমিতা ঘটক বলেন, “ঘটনাটা ঘটেছে জঙ্গলের অনেকটা বাইরে। তবু পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে।”
মহানন্দায় মাছের মৃত্যুর জন্য দেশি মদ কারখানার বর্জ্যই দায়ী বলে বাসিন্দারা মৎস্য দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর তিমিরবরণ মণ্ডলের কাছে অভিযোগ করেছেন। শুক্রবার পশ্চিম ধনতলায় নদীর যে অংশে মাছ ভেসে উঠেছিল তিমিরবাবু এ দিন সেখানে যান। তিনি জানান, বাসিন্দারা বলেছেন, ওই কারখানা বেশ কয়েক মাস ধরে বন্ধ। কিন্তু, ওই এলাকায় নদীর চরে প্রচুর আর্বজনা ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, “এত বড় নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ মারা সম্ভব নয়। দূষণ থেকেই ওই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে।”

পুরনো সংস্করণ:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.