প্রাণিসম্পদ বিকাশের ক্ষেত্রে পরিষেবার মান উন্নত করার লক্ষ্যে ‘প্রাণী মিত্রা’ হিসেবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে রাজ্যের নানা পঞ্চায়েতে। আর সেই কাজে হুগলি জেলাকেই দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরছে গ্রামোন্নয়ন দফতর এবং প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর। কেননা, প্রাণীদের টিকাকরণ, অসুখের তদারকি, প্রাণী-পালকদের সচেতনতা বাড়ানো ইত্যাদি কাজে হুগলি জেলার ‘প্রাণী মিত্রা’রা যেমন সন্তোষজনক কাজ করছেন, তেমনই তাঁরা নিজেদের উপার্জনও বাড়াতে পারছেন বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা।
প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের রাজ্য অধিকর্তা কমলাকান্ত সাহা বলেন, “হুগলির দৃষ্টান্ত তুলে ধরে রাজ্যের সব জেলাতেই প্রকল্পটি চালু করার প্রচেষ্টা চলছে। প্রকল্পটি গ্রামোন্নয়ন এবং প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর যৌথ ভাবে চালাবে।” জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের উপ-অধিকর্তা সোমনাথ মাইতি বলেন, “প্রাণী মিত্রাদের সক্রিয়তায় প্রাণীদের টিকাকরণের হার বেড়েছে। প্রাণীস্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে সাফল্য মিলেছে। প্রাণী-পালকদের সচেতনতাও বাড়ানো হচ্ছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের মধ্যে হুগলি জেলাতেই ‘প্রাণী মিত্রা’ প্রকল্পটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হয় ২০১১ সালের গোড়ার দিকে। তাতে সাফল্য মেলায় গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রকল্পটিতে যৌথ ভাবে সামিল হয় প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর। প্রকল্পে স্থির হয়, প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমিক পাশ দু’জন মহিলাকে নেওয়া হবে। প্রাণীদের টিকাকরণ, তাদের স্বাস্থ্যের তদারকির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহিলারা স্বনির্ভরও হতে পারবেন। বেতন বা উৎসাহ-ভাতা তাঁরা পাবেন না। কিন্তু প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর থেকে নামমাত্র মূল্যে বা নিখরচায় টিকা বা ওষুধ নিয়ে গ্রামের ঘরে ঘরে তা বাজার-দরে বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করতে পারবেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গোঘাট-২, সিঙ্গুর, হরিপাল ইত্যাদি কয়েকটি ব্লকে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন ‘প্রাণী-মিত্রা’রা। তাঁদের সক্রিয়তায় বিভিন্ন ব্লকে ১০ থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত গরু-ছাগল-মুরগির টিকাকরণ সম্ভব হয়েছে। গোঘাট-২ ব্লকের প্রাণিসম্পদ বিকাশ আধিকারিক শুভেন্দু হালদারের দাবি, “গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি মিলিয়ে এখানে ‘প্রাণী মিত্রা’রা ৪০ হাজারেরও বেশি টিকাকরণ করেছেন। যা জেলায় সবচেয়ে বেশি।”
বাড়তি উপার্জনের সুবিধা থাকায় প্রাণী-মিত্রা’রাও খুশি। যেমন, গোঘাট-২ ব্লকের কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েতের ‘প্রাণী মিত্রা’ নাজমা বেগম বলেন, “এখানে বহু গ্রামবাসীই হাঁস-মুরগি-গরু প্রতিপালন করেন। টিকাকরণ ছাড়াও প্রাণীস্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রচারগুলি আমরা করছি। অন্য কাজের মাঝে মাসে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা সহজেই উপার্জন হচ্ছে।” আর এক ‘প্রাণী মিত্রা’ কাকলি পাল বলেন, “স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজে গ্রামের নানা জায়গায় ঘুরতে হয়। তার মধ্যেই সময়-সুযোগ মতো এ কাজটাও করছি। কোনও অসুবিধা নেই।” একই বক্তব্য আরও অনেক ‘প্রাণী মিত্রা’রই। হুগলিতে ‘প্রাণী মিত্রা’দের কার্যকর ভূমিকার জন্য তাঁদের পুরস্কৃতও করা হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। সম্প্রতি পোলবা-দাদপুরে একটি প্রশাসনিক সভায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার ‘সেরা প্রাণী মিত্রা’দের সাইকেল দানের সূচনা করেন। দিন কয়েক আগে গোঘাট-২ ব্লকের পাঁচ জন ‘প্রাণী মিত্রা’র হাতে সাইকেল তুলে দেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের উপ-অধিকর্তা সোমনাথ মাইতি। তাঁর আশ্বাস, কাজের নিরিখে পর্যায় ক্রমে অন্য ব্লকের ‘প্রাণী মিত্রা’দেরও সাইকেল দেওয়া হবে। |