বয়স মাত্র ১৭। ভবানীপুরের রাস্তায় যাতায়াতের পথে গয়নার দোকানে একা বৃদ্ধকে দেখেই তার মাথায় এসেছিল লুঠের ভাবনা। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। কিন্তু একটা ছোট্ট ভুলই ধরিয়ে দিল একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রকে। পুলিশকে সে জানিয়েছে, তার টাকার দরকার ছিল। বেশ কিছু টাকা ধারও হয়েছিল।
লুঠ করতে এসে একটি ব্যাগ ফেলে গিয়েছিল ওই কিশোর। তার মধ্যে থেকে পুলিশ উদ্ধার করে ভিজিটিং কার্ড ও ব্যাঙ্কের কাগজ। সেই ভিজিটিং কার্ডের সূত্র ধরেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভবানীপুরের সোনার দোকানে লুঠের চেষ্টার ঘটনার কিনারা করল পুলিশ। ওই ঘটনায় রবিবার ভোরে ভবানীপুর থানার পুলিশ বর্ধমানের আউশগ্রাম থেকে ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে আমরা কিছু সূত্র পেয়েছিলাম। তার ভিত্তিতেই আমরা ছেলেটিকে গ্রেফতার করেছি।” তাঁর দাবি, ওই দোকানের সিসিটিভির ফুটেজ পুলিশকে তদন্তে সাহায্য করেছে। |
ভবানীপুরের সেই সোনার দোকান। —নিজস্ব চিত্র |
শনিবার দুপুরে ভবানীপুরের শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের একটি সোনার দোকানে হানা দেয় এক দুষ্কৃতী। ৮২ বছরের বৃদ্ধ দোকানদারকে ধারালো অস্ত্রের কোপ মারে সে। কিন্তু চেতলার বাসিন্দা গৌরচাঁদ দে নামে ওই ব্যবসায়ী তাকে প্রতিরোধ করলে ওই দুষ্কৃতী দোকান থেকে কিছু না নিয়েই পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্যাগ ও একটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। আহত গৌরচাঁদবাবু বালিগঞ্জের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন।
কী ভাবে ধরা গেল ওই কিশোর-দুষ্কৃতীকে?
পুলিশ জানায়, দোকানের সিসিটিভির ফুটেজে শনিবারের পুরো ঘটনাটি রয়েছে। তাতে ছেলেটিকে দেখা যাচ্ছে। দোকানের ভিতরে সে প্রায় ১০ মিনিট ছিল। পুলিশের দাবি, বৃদ্ধের প্রতিরোধে ঘাবড়ে গিয়ে ব্যাগ নিয়ে পালাতে পারেনি সে। পরে দোকান থেকে ব্যাগটি উদ্ধার করা হয়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই ব্যাগের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় বেশ কয়েকটি কার্ড।
এক পুলিশকর্তা বলেন, “দোকানের ভিতরে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ দুষ্কৃতীকে ধরার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। ভিজিটিং কার্ডের মালিককে সিসিটিভির ফুটেজ দেখালে তিনি ওই ছেলেটিকে শনাক্ত করেন।” পরে আউশগ্রামের পূর্ব শান্তিপাড়ার বাড়ি থেকেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, জেরায় ওই কিশোর জানিয়েছে, কলকাতায় যে কোনও ভাবে প্রতিষ্ঠা পেতে চেয়েছিল সে। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জেনেছেন, সিনেমায় অভিনয় করা ছিল ছেলেটির লক্ষ্য।
লুঠের কথা মাথায় এল কী ভাবে? পুলিশ বলে, ছেলেটি জানিয়েছে, ভবানীপুরের ওই রাস্তা দিয়ে আগে দু’তিন বার যাতায়াত করে সে দেখেছিল দুপুরে বৃদ্ধ একাই দোকানে থাকেন। তার পরেই সে ঠিক করে, ওই দোকানে হানা দেবে। তবে ৮২ বছরের ওই বৃদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন, তা ছেলেটি ভাবেনি বলে পুলিশ জানায়।
তদন্তকারীরা জানান, ঘটনার পরেই ওই কিশোর হাওড়া স্টেশন থেকে সোজা ট্রেনে চেপে আউশগ্রামের বাড়িতে চলে যায়। বাড়িতে না জানালেও পুলিশের কাছে ঘটনার কথা ছেলেটি স্বীকার করেছে বলে পুলিশের দাবি। ছেলেটির পরিবার সব রকম সাহায্য করছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
|