ভরদুপুরে ভবানীপুরের এক সোনার দোকানে ঢুকে বৃদ্ধ ব্যবসায়ীর কাছে আংটির ‘ক্যাটালগ’ দেখতে চাইল এক যুবক। খদ্দেরের হাতে ‘ক্যাটালগ’ দিয়ে ওই ব্যবসায়ী হালখাতার কাজ করছিলেন। আচমকাই ওই যুবক ধারালো অস্ত্র বার করে বৃদ্ধের মাথায় আঘাত করে। রক্তে ভেসে যেতে থাকে তাঁর মুখ। তাতেও না দমে ওই যুবকের পরের আঘাতগুলি প্রতিরোধ করলেন তিনি। যুবকের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে ছিটকে পড়ে গেল ধারালো অস্ত্রটি। বৃদ্ধের চিৎকারে দোকানের উপরতলা থেকে তাঁর ছেলে নেমে আসতেই দৌড়ে পালাল দুষ্কৃতী।
|
শনিবার দুপুর পৌনে একটা নাগাদ ওই ঘটনা ঘটে। চেতলার বাসিন্দা গৌরচাঁদ দে (৮২) নামে ওই ব্যবসায়ীর ছেলে পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই দুষ্কৃতী দোকান থেকে কোনও গয়না লুঠ করতে পারেনি। দোকানে লাগানো সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে ভবানীপুর থানার পুলিশ এবং লালবাজারের গোয়েন্দারা বছর কুড়ি বয়সী ওই যুবকের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি। গৌরচাঁদবাবুর মাথায় ও হাতে চোট লেগেছে। তাঁকে বালিগঞ্জের নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে।
গৌরচাঁদবাবুর ছেলে কমল দে জানান, ভবানীপুরে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের ধারে যে দোকানটিতে এ দিন ওই দুষ্কৃতী চড়াও হয়েছিল, সেটি বহু দিনের পুরনো। শহরেই তাঁদের আরও দু’টি দোকান রয়েছে। ভবানীপুরের ওই দোকানটি তাঁর বাবা দেখাশোনা করেন। কমলবাবু এ দিন দুপুরে দোকানের উপরে দেড়তলায় কম্পিউটারে বসে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, “ওই যুবক বাবার মাথায় ভোজালির কোপ মারার পরেও কিছু বুঝতে পারিনি। ধস্তাধস্তির শব্দও টের পাইনি। আচমকা বাবার চিৎকারে ছুটে নীচে নামি। তত ক্ষণে ওই যুবক পালিয়ে গিয়েছে।” |
পুলিশ জানায়, সিসিটিভি-র ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, হলুদ রঙের জামা পরে ওই দুষ্কৃতী দোকানে ঢুকেছিল। গৌরচাঁদবাবুকে সে তিন বার কোপ মারার চেষ্টা করে। প্রথম কোপটি লাগে বৃদ্ধের মাথায়। পরের দু’বার প্রতিরোধ করতে গিয়ে বাঁ হাতের আঙুলে চোট পান ওই ব্যবসায়ী। মিনিট দশেক দোকানের ভিতরে ছিল ওই যুবক।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, গৌরচাঁদবাবু যে দোকানের একতলায় দুপুরে একা থাকেন, দুষ্কৃতীর কাছে সেই খবর ছিল। কিন্তু সে ভাবতে পারেনি যে, ৮২ বছরের ওই বৃদ্ধ রুখে দাঁড়াবেন। ধস্তাধস্তিতে অস্ত্র পড়ে যাওয়ার পরে গৌরচাঁদবাবু চিৎকার করায় আরও ঘাবড়ে যায় ওই দুষ্কৃতী। বেগতিক দেখে তাই পালায় সে।
তবে বৃদ্ধ ওই দোকান-মালিককে ব্যবসায়িক শত্রুতার কারণে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে জখম করা হয়েছে কি না, পুলিশ তা-ও খতিয়ে দেখছে।
|