বয়স সবেমাত্র এক বছর। গোড়াতেই অযত্নের ছাপ স্পষ্ট। তাই ১১৬৬ মিটার লম্বা এবং ৬০ মিটার চওড়া উড়ালপুলটির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এক বছর আগে নাগেরবাজারে ‘রামকৃষ্ণ পরমহংস উড়ালপুল’ উদ্বোধনের সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল, সেতুর নীচে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট অংশ চিহ্নিত করা থাকবে। উড়ালপুলের নীচের বাকি অংশে বাগান তৈরি করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। অথচ উড়ালপুলের বর্ষপূর্তির মুখে সেখানে গিয়ে নজরে পড়ল, যত্রতত্র রাখা আছে গাড়ি, মিনি ট্রাক। কোথাও চলছে গাড়ি সারাইয়ের কাজ। শহরের সাম্প্রতিক কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ড থেকেও শিক্ষা হয়নি প্রশাসনের। সেখান থেকে ঢিল-ছোড়া দূরত্বে রয়েছে দক্ষিণ দমদম পুরসভার অফিস। তবু সেতুর নীচে কয়েকটি জায়গায় খাবারের দোকানে আগুন জ্বালিয়ে বিপজ্জনক ভাবে চলছে রান্নাবান্না। সেই আগুনের তাপ গিয়ে পড়ছে উড়ালপুলের স্তম্ভে, ছাদের একাংশেও।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক, সেতু বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “রোল-চাউমিন তৈরির দোকানের আগুন থেকে সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা সে অর্থে নেই। তবে এ সবের কারণে যদি সেতুর আশপাশে জল জমতে থাকে, তখন ক্ষতি হতে পারে সেতুর বেয়ারিংয়ের।” যদিও স্থানীয় লোকজনের আশঙ্কা, যে কোনও দিন এর থেকে বড় অঘটন ঘটে যেতেই পারে। |
নাগেরবাজার। ছবি: শৌভিক দে |
আশঙ্কা যে ভিত্তিহীন নয়, মানছেন পুর-কর্তৃপক্ষও। তা হলে কেন বন্ধ হচ্ছে না দোকানপাট? নিরুত্তর পুরসভা।
উড়ালপুলের নীচেই বেআইনি ভাবে তৈরি হয়ে গিয়েছে লেকটাউন-নাগেরবাজার রুটের অটোস্ট্যান্ড। নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও সেখানে পরপর দাঁড়িয়ে থাকে মালবোঝাই গাড়ি। ফলে সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে যশোহর রোডের দু’দিকই। উড়ালপুলের নীচে কিছুটা অংশ লোহার পাইপ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে বাগান করার জন্য। তবে বাগানের বদলে আলু-পেঁয়াজের অসংখ্য বস্তা রাখা থাকে সেখানে। কোথাও কোথাও পড়ে থাকে বাজারের আবর্জনা। তারই আশপাশে বসে ফল, সব্জি, মাংসের দোকান। বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, রাস্তার উপরে বাজার এবং দিনভর অটোর দীর্ঘ লাইন এমনিতেই সঙ্কীর্ণ করে তুলেছিল যশোহর রোডকে। এই উড়ালপুল হওয়ায় সমস্যা কমার কথা ছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অসুবিধা আরও বেড়ে গিয়েছে। যানজট-মুক্ত করা গেল না নাগেরবাজার মতো গুরুত্বপূর্ণ মোড়কে।
যানজটে নাজেহাল নাগেরবাজার মোড়টিকে সমস্যা-মুক্ত করতেই সরোজিনী নাইডু কলেজ থেকে অমরপল্লি বাজার পর্যন্ত উড়ালপুলটি জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের অধীনে তৈরি শুরু হয় ২০০৯ সালে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি এই উড়ালপুলের উদ্বোধন করেন ২০১২ সালের ২৪শে মার্চ।
কিন্তু এক বছরেও কেন করা হল না দক্ষিণ দমদম পুর-এলাকার এই উড়ালপুলটির সৌন্দর্যায়নের কাজ? পুর-প্রধান, তৃণমূলের অঞ্জনা রক্ষিত বলেন, “সত্যি, জায়গাটা ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এতে ব্রিজের ক্ষতি তো বটেই, গাড়ি ও মানুষের চলাফেরাতেও প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। উড়ালপুল তৈরির সুফল মানুষ পাচ্ছেন না। চেষ্টা করছি, দোকানগুলিকে তুলে দেওয়ার। এই অঞ্চলের বিধায়ক ও শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি।” এ প্রসঙ্গে পূর্ণেন্দু বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, “উড়ালপুলটি দক্ষিণ দমদম পুর-এলাকায় পড়ছে। আমার এখানে কিছু করার নেই। যা করার পুরসভাকেই করতে হবে।” |