চাঁদনি চকে ফোন কিনতে গিয়ে হাঁ হয়ে গিয়েছিলেন দত্তপুকুরের অসীম দাস। দামী ব্র্যান্ডের বদলে দোকানি তাঁকে দেখালেন একটি নতুন সংস্থার ফোন। দেখতে বা ব্যবহারে আর পাঁচটা নামী মোবাইলের মতোই ক্যামেরা থেকে ই-মেল মিলছে সব কিছুই! এবং দামেও প্রায় অর্ধেক। তাই ফোনের ‘বংশকৌলীন্যের’ কথা মাথায় না-রেখেই আনকোরা ফোনটা কিনে ফেললেন অসীমবাবু।
গোয়েন্দারা বলছেন, অসীমবাবুর মতো অনভিজ্ঞ লোকেরা এই সব ফোন করে নিজেদের অজান্তেই বিপদ ডাকছেন। তাই সতর্কতা বাড়াতে বিজ্ঞাপনে প্রচার শুরু করবে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রক। পাঠানো হবে এসএমএস-ও। কিন্তু কী বিপদ এড়ানোর কথা বলছে মন্ত্রক?
গোয়েন্দারা বলছেন, প্রতিটি মোবাইলে ১৫ সংখ্যার নিজস্ব নম্বর থাকে (আইএমইআই)। কিন্তু এই সব অনামী বা নামগোত্রহীন সংস্থার ফোনে সেই নম্বর জাল করে ব্যবহার করা হয়। কখনও বা একই নম্বরে বহু ফোনও তৈরি হচ্ছে। টেলিকম ও পুলিশ কর্তাদের বক্তব্য, এখন মোবাইলের সূত্র ধরে অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে আইএমইআই নম্বরও গোয়েন্দাদের সহায়ক। কিন্তু একই আইএমইআই নম্বরে বহু ফোন থাকলে নিরীহ মানুষও হয়রানির শিকার হতে পারেন।
মাস তিনেক আগে আইএমইআই-এর এই বিষয়টি নজরে আসে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ)। এসটিএফ সূত্রের খবর, নভেম্বরে জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েক জনের খোঁজে গিয়ে গোয়েন্দারা ৩৫৯১৯০০৩৯৯৭৫৩০০ এই আইএমইআই নম্বরটি পান। কিন্তু গোয়েন্দারা দেখেন, একটি নম্বরে ৮২টি মোবাইল এক সঙ্গে চালু। জানানো হয় কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রকে।
মন্ত্রক সূত্রের খবর, কলকাতার টেলিকম এনফোর্সমেন্ট রিসোর্স অ্যান্ড মনিটরিং সেল-এর একটি সাম্প্রতিক নমুনা সমীক্ষায় গোলমালের ছবিটা পরিষ্কার হয়। কলকাতা সার্ভিস এরিয়ায় একটি বেসরকারি সংস্থার সংযোগগুলি নিয়ে সমীক্ষায় দেখা যায়, ৫০০-রও বেশি ফোন একটি মাত্র আইএমইআই নম্বর নিয়ে চলছে।
টেলিকম এনফোর্সমেন্ট রিসোর্স অ্যান্ড মনিটরিং সেল-এর কলকাতার ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল অতনু ঘোষ বলেন, “নমুনা সমীক্ষাতেই যদি এই তথ্য ধরা পড়ে, তা হলে প্রকৃত বিপদের চেহারাটা ভেবে শিউরে উঠতে হচ্ছে। এই তথ্য দিল্লিতে পাঠাচ্ছি। সেই সঙ্গে এই তথ্য দিয়ে বৈধ প্রস্তুতকারক সংস্থার তৈরি নয়, এমন মোবাইলগুলি বাজেয়াপ্ত করতে পুলিশকে ফের অনুরোধ জানাব। গ্রাহকদের সচেতন ও সতর্ক করে এসএমএস পাঠানো হবে, সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপনও দেব।” মোবাইলের এক জন ক্রেতা যাতে বৈধ প্রস্তুতকারক সংস্থার মোবাইল চিনতে পারেন, সে জন্য সংস্থাগুলির তালিকাও মন্ত্রক তৈরি করবে। মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, অনামী অনেক সংস্থাই বিদেশ থেকে ফোন আমদানি করে বিক্রি করছে। সেগুলির অধিকাংশই আইএমইআই নম্বর জাল।
এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে মন্ত্রক? মন্ত্রক সূত্রের খবর, মোবাইল ব্যবহারকারীদের এই ব্যাপারে সতর্ক করে এসএমএস পাঠানো হবে। সংবাদমাধ্যমে দেওয়া হবে বিজ্ঞাপনও। কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে শীঘ্রই প্রচার হবে বলে মন্ত্রকের এক কর্তা জানান। তা ছাড়া, বৈধ নির্মাণকারী সংস্থার তৈরি মোবাইলগুলি ছাড়া অন্য সব ফোন বাজেয়াপ্ত করার জন্য ফ্যান্সি মার্কেট ও চাঁদনি মার্কেটের মতো এলাকায় অভিযান চালাতে কলকাতা পুলিশের কাছে মন্ত্রক অনুরোধ জানিয়েছে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “নকল আইএমইআই নম্বর থাকা মোবাইল ঠেকাতে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছি।” |