যে কাজ এক বছরেও হয়নি, তা-ই হয়ে গেল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে!
মধ্য কলকাতার মুচিপাড়া এলাকার মিনতি ঘোষ পানীয় জলের সংযোগ পেতে দস্তুর মেনে আবেদন করেছিলেন পুরসভার কাছে। কিন্তু তোলাবাজদের দাপটে আটকে যায় সেই কাজ। পুরসভা, পুলিশের কাছে ঘুরেও লাভ হয়নি। শেষে এ নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতির মন্তব্য এবং ওই বৃদ্ধার দুর্দশার কথা আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই জলের সংযোগ পেলেন মুচিপাড়ার গোবিন্দ সরকার লেনের ওই বৃদ্ধা।
কেবল তা-ই নয়, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে শনিবার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সেই কাজের তদারক করলেন তৃণমূলের স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি এবং মেয়র পারিষদ সঞ্চিতা মণ্ডল। তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধেই ওই তোলাবাজদের মদত দেওয়ার অভিযোগ এনেছিল মিনতিদেবীর পরিবার।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর এ দিন বাড়িতে জলের সংযোগ পেয়ে খুশি মিনতিদেবী ও তাঁর পরিবার। ৬৬ বছরের বৃদ্ধা বললেন, “এত দিনের দুর্ভোগ এ বার কাটল।”
গোবিন্দ সরকার লেনের ওই বাড়িতে দাদার সঙ্গে থাকতেন মিনতিদেবী। দাদা-বোনের মধ্যে বাড়ির মালিকানা ভাগ হয়। কলকাতা পুরসভা বাড়িটিকে দু’টি আলাদা হোল্ডিং হিসাবে চিহ্নিত করে। ভাগাভাগির পরে দেখা যায়, বাড়ির পানীয় জলের লাইনটি পড়েছে দাদার অংশে। বাধ্য হয়ে নতুন জলের লাইনের জন্য পুরসভার কাছে আবেদন করেন মিনতিদেবী। |
দুর্ভোগের শেষে মিনতিদেবী। |
দুর্ভোগমুক্তির জন্য তৎপরতা পুরসভার। |
|
কিন্তু পুরসভার জলের সংযোগ পেতে সাধারণ এক গৃহস্থকে হাইকোর্ট পর্যন্ত দৌড়তে হল কেন? সঞ্চিতাদেবীর ব্যাখ্যা, “মিনতিদেবীর বাড়িতে জলের সংযোগ আগেই ছিল। শরিকি বিবাদের জেরে তিনি তা ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারছিলেন না। এ দিন আমি এলাকায় গিয়ে মিনতিদেবীর ওই শরিকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলি আইনি জটিলতা মেটানোর জন্য। তাঁরাও রাজি হয়ে যান। তার পরেই কাজ শুরু হয়।”
ওই পুরপ্রতিনিধি জানান, সংবাদপত্রে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ওই বৃদ্ধার বাড়িতে জলের জোগান বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। শুক্রবার জল সরবরাহ দফতরের অফিসার ও স্থানীয় বরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ দিন সকালেই জল সরবরাহ দফতরের অফিসার ও কর্মীদের নিয়ে সেখানে পৌঁছে যান সঞ্চিতাদেবী।
জলের জন্য ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবেদন করেন মিনতিদেবী। অভিযোগ, ১৪ মার্চ পুরসভার মিস্ত্রি গিয়ে মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু করলে জনা কয়েক যুবক হাজির হয়। কাজ বন্ধ করে দিয়ে তারা বলে, সংযোগ পেতে হলে তাদের ১০ হাজার টাকা দিতে হবে।
মিনতিদেবীর ছোট ছেলে শুভঙ্করবাবুর অভিযোগ, ওই সময় স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সঞ্চিতা মণ্ডলের কাছে সাহায্যের আশায় গেলে তিনিও বলে দেন, তাঁর কিছু করার নেই। যারা এসেছিল, তাদের সঙ্গেই বুঝে নিতে হবে। কাউন্সিলর অবশ্য এ কথা অস্বীকার করেছেন। পুরসভায় ব্যর্থ হয়ে বৃদ্ধা যান মুচিপাড়া থানায়। সেখানে অভিযোগ করেন। পুলিশও তাতে কিছুই করেনি বলে অভিযোগ।
এর পরেই আদালতের দ্বারস্থ হন মিনতিদেবী। বুধবার এই মামলায় রায় দিতে গিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে একটি রাজনৈতিক দলের আশ্রিত তোলাবাজদের দাপটে ৬৬ বছরের এক অসহায় দরিদ্র বৃদ্ধার বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এটা প্রমাণিত যে, প্রশাসন, বিশেষত পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা উৎসাহিত করছে তোলাবাজদের। এক দরিদ্র বৃদ্ধাও তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। মিনতিদেবীর ওই দুর্দশার কথা জনসমক্ষে আনে আনন্দবাজার পত্রিকা।
এত কাণ্ডের পর অবশেষে জলের হাসি বৃদ্ধার মুখে!
|