|
|
|
|
বাম জমানায় ডিলার নিয়োগ: কল্যাণ-বালু কাজিয়া |
দলের নেতার ওকালতি-টানে খাপ্পা মমতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
চটেছেন নেত্রী। ছাঁটবেন ডানা। তাতেও হোলদোল নেই আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দলের চেয়ে পেশাই আপন তাঁর। স্পষ্ট জানিয়েছেন, ৩৩ বছর সরকারের বিরুদ্ধে মামলা লড়েই যা নাম-ডাক হয়েছে তাঁর। দলের জন্য সেই পেশা তিনি ছাড়তে পারবেন না। মানবেন না মক্কেল বাছাইয়ে দলের খবরদারিও।
কিন্তু তা-ই বলে সংসদে যিনি তৃণমূলের চিফ হুইপ, হাইকোর্টে তিনি সিপিএম নেতার জামাইয়ের হয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা লড়বেন, এমনকী এজলাসে দাঁড়িয়ে খাদ্য দফতরের দুর্নীতি ফাঁসে সিবিআই তদন্ত দাবি করবেন দলনেত্রী হিসেবে, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বা তা মানবেন কী করে! ফলে এ নিয়ে বেজায় আলোড়ন এখন দলের অন্দরেও।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বুধবারই খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু) এবং খাদ্যসচিব অনিল বর্মাকে মহাকরণে ডেকে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাকরণ সূত্রের খবর, খাদ্যমন্ত্রীর রিপোর্ট পেয়ে কল্যাণবাবুর উপর চটেছেন মমতা। তাঁকে সমস্ত সরকারি পদ থেকে
ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
কল্যাণবাবুও দমার পাত্র নন। এ দিন হায়দরাবাদ থেকে টেলিফোনে বলেন, “সরকারের যদি কোনও মামলায় আইনজীবী নির্বাচনের অধিকার থাকে, তা হলে আমারও মক্কেল নির্বাচনের সমান অধিকার রয়েছে।” নাম না করে খাদ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে কল্যাণের মন্তব্য, “কোনও মন্ত্রী যদি আমাকে খারাপ প্রতিপন্ন করে নিজে আরও বড় হতে চান, তা হলে আমার কী বলার থাকতে পারে? আমি আইন দফতরের কোনও সরকারি পদে নেই। সরকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছি, রাজ্যের হয়ে আর কোনও মামলা লড়তে চাই না।” |
|
তরজা জমিয়ে দিয়ে খাদ্যমন্ত্রীর পাল্টা বক্তব্য, “কল্যাণবাবু যা ইচ্ছা বলতে পারেন। তবে খাদ্য দফতরের বিরুদ্ধে মামলাকারী এবং তাঁদের নেপথ্য-সঙ্গীদের বিষয়ে সরকার সজাগ রয়েছে। আমরা প্রয়োজনে সর্বোচ্চ আদালতে যাব। নেপথ্যের লোকেদের মুখোশ খুলে দেওয়া হবে।” খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, গত ৩৪ বছরে খাদ্য দফতর ছিল বামফ্রন্টের ‘খাদ্যের’ মূল জোগানদাতা। সেই জায়গা থেকে দুর্নীতি সাফ করতে নেমেছি। তবু দলীয় সাংসদই যদি খাদ্য দফতরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন, তা হলে এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে? সমস্তটাই মুখ্যমন্ত্রী জানেন। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।
কল্যাণবাবুর আচরণে মুখ্যমন্ত্রী এতটাই চটেছেন যে, এখনও সতর্ক না হলে তাঁকে লোকসভায় দলের চিফ হুইপ এবং হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশন (এইচআরবিসি)-র চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলেও প্রশাসনের অনেকে মনে করছেন। আজ, বৃহস্পতিবার এইচআরবিসি-র একটি সেতু উদ্বোধনে ডানকুনিতে কল্যাণবাবুর হাজির থাকার কথা। তার পরে তিনি দিল্লি যাবেন। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, দল করার জন্য পেশা ছেড়ে দিতে তিনি রাজি নন। কল্যাণবাবুর ঘনিষ্ঠ মহলেরও বক্তব্য, পেশা ও সরকারি পদের মধ্যে একটিকে বাছতে হলে কল্যাণবাবু প্রথমটিই বেছে নেবেন। তাতে কোনও সাংসদ বা কোনও চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে হলে তিনি আক্ষেপ করবেন না।
কিন্তু খাদ্য দফতরের বিরুদ্ধে কেন তোপ দাগলেন দলীয় সাংসদ?
সরকারি সূত্রের খবর, চা-শ্রমিক নন, কিন্তু জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ির চা বাগান এলাকায় থাকেন এমন মানুষজনের জন্য ৪১ জন রেশন ডিলার নিয়োগ করা হয়েছিল ২০০৫ সালে। অভিযোগ, সেই নিয়োগে খাদ্য কমিশনারের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। কোনও রকম নিয়ম-কানুন মানা হয়নি। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের একাধিক সুপারিশক্রমে খাদ্য দফতরের স্থানীয় অফিসার রেশন ডিলার নিয়োগ করেছিলেন বলে দাবি করছেন খাদ্য দফতরের বর্তমান কর্তারা। সরকার পরিবর্তনের পর ৪১ জনের বদলে ২১ জন ডিলার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় খাদ্য দফতর। পুরনো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। শিলিগুড়ির এক সিপিএম নেতার জামাই হাইকোর্টে মামলা করেন। সেই মামলাটিই লড়ছেন কল্যাণবাবু। মঙ্গলবার হাইকোর্টে শুনানির সময় এই সূত্র ধরেই খাদ্য দফতরকে ঘুঘুর বাসা মন্তব্য করে সিবিআই তদন্তের দাবি জানান তিনি। খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই ৪১ জন ডিলার নিয়োগের সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে ফের সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১ মার্চ থেকেই টানা এই সমীক্ষা চলবে। খাদ্য দফতরও আদালতে প্রমাণ করতে চায় ঘুঘুর বাসা ভাঙতেই ওই ডিলার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|