বনধে যে-সব রাজনৈতিক দল সামিল হয়েছে এবং যারা ভবিষ্যতে বনধ ডাকবে, তাদের নিষিদ্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই বক্তব্যের নিন্দা করে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতারা।
বনধের বিরোধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মহাকরণে বলেন, “আমরা উন্নয়ন চাই, ধ্বংস চাই না। তাই আমরা এই ধরনের বনধ সমর্থন করব না।” তাঁর অভিযোগ, এখন কেউ আর শ্রমিকদের কথা ভাবে না।
নেতারাই সব সিদ্ধান্ত নেন। তার পরেই মমতা বলেন, “আমি মনে করি, এ ধরনের বনধ বন্ধ হওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমার অনুরোধ, যে-সব রাজনৈতিক দল বনধ ডাকবে, মানুষের স্বার্থেই তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য ‘ফ্যাসিবাদী ও অগণতান্ত্রিক’ বলে মন্তব্য করেছেন সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী। তিনি জানান, ধর্মঘট ডাকার অধিকার দিয়েছে সংবিধানই। শ্যামলবাবু বলেন, “দয়া করে উনি ভারতের সংবিধান পড়ুন। ওঁর পাশে যে-সব আইনজ্ঞ আছেন, তাঁদের মতামত নিন। ধর্মঘট ডাকার রাজনৈতিক অধিকার মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। সেই অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারেন না।” কোনও দলকে নিষিদ্ধ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করতে পারেন কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন ওই সিটু
নেতা। শ্যামলবাবু বলেন, “নির্বাচন কমিশন ওঁর এ-সব বাজে কথা শুনবে কেন?” তিনি পরিসংখ্যান দেন, তৃণমূল ২০০৭-’১১ সালের মধ্যে নানা কারণে ২১ বার বনধ বা
ধর্মঘট ডেকেছে। তাঁর মন্তব্য,
পরিস্থিতি যা দাঁড়াচ্ছে, ওঁকে কয়েক বছরের মধ্যেই আবার পথে নেমে আন্দোলন করতে হবে!
এ ব্যাপারে আইনের কথা তোলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার তথা আইনজীবী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্র আছে, যেখানে বিধিভঙ্গ হলে আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি বাতিল হতে পারে। তাঁর কথা, “বনধ সমর্থন করলে বর্তমান আইনে কোনও দলকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব বলে আমার জানা নেই! কেউ নতুন করে আইন করতে চাইলে অন্য কথা!”
এআইটিইউসি নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত সাফ জানিয়ে দেন, নির্বাচন কমিশন কোনও দলকে বেআইনি ঘোষণা করতে পারে না। সেটা পারে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার। তিনি বলেন, “উনি (মমতা) যদি সত্যিই ধর্মঘট ডাকার জন্য শ্রমিক সংগঠনকে বেআইনি বলে ঘোষণা করা উচিত বলে মনে করেন, রাজ্যে সেটা করে দেখান। আমরা জেলে যেতে রাজি।”
আর সিটু নেতা তপন সেনের বক্তব্য, এই ধর্মঘট রাজনৈতিক দল ডাকেনি। শ্রমিক সংগঠনগুলি ডেকেছে। তা হলে দলকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন ওঠে কী ভাবে?
একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “দলকে নিষিদ্ধ করার এই ভাবনাটাই সংবিধান-বিরোধী। এটা কখনও সম্ভব নয়।” এসইউসি, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন প্রভৃতি দলও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা করেছে।যে-সব দাবিতে ধর্মঘট, তাতে তাঁদেরও সমর্থন রয়েছে বলে জানান তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে দিল্লিতে স্পিকারের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে তিনি জানিয়ে দেন, ধর্মঘট করে ওই সব দাবির কোনও সমাধান হবে না। বিশেষত দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় কোনও ভাবেই এই বনধ সমর্থন করা যায় না। |