বনধে মিশ্র ছবি দুই জেলায়
কোথাও দোকান তালাবন্ধ রেখে ‘ছুটি’র দিন কাটিয়েছেন ব্যবসায়ী। কোথাও রোজকার মতোই খোলা ছিল বাজার। কোথাও স্কুল খোলা থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী কম আসায় ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় স্কুলে। আবার কোথাও পুরোদমে চলেছে স্কুল। রাস্তাঘাটে অন্যদিনের তুলনায় সরকারি বাস বেশি থাকলেও তাতে চড়ার মতো যাত্রীসংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো কম। মুখ্যমন্ত্রীর ‘না এলে বেতন কাটা যাবে, চাকরির মেয়াদ কমে যাবে’ শাস্তির ফরমানে সরকারি অফিসগুলিতে হাজিরা ভাল থাকলেও বেসরকারি ক্ষেত্রে হাজিরা প্রায় ছিল না। বন্ধ ছিল সমস্ত ব্যাঙ্ক ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তবে উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল স্থল বন্দরে সীমান্ত বাণিজ্য অন্যদিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল। হালিশহরের একটি প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া কম আসার কারণে প্রধানশিক্ষককে নিগ্রহ করে বন্ধ বিরোধীরা। বড় ধরনের কোনও গোলমাল না বাধায় মোটের উপরে দুই জেলায় এ দিনটা নির্বিঘ্নেই কেটেছে।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রায় সমস্ত সরকারি দফতরেই দূরদূরান্ত থেকে আসা কর্মীরা মঙ্গলবার বাড়ি ফেরেননি। বুধবার যানবাহনের অনিশ্চয়তায় অফিসে না আসতে পারার আশঙ্কায় অনেকেই নিকটবর্তী আত্মীয়-বন্ধুদের বাড়িতে থেকে যান। অনেকে আবার দলবেঁধে অফিসেই রাত কাটিয়ে দেন। জেলায় কিছু বিশেষ ট্রেন ও সামান্য কিছু বাস চললেও বনধ ছিল সর্বাত্মক। দোকানপাট, বাজারহাট সংস্ত কিছুই ছিল বন্ধ। তবে কোথাও কোথাও খোলাও ছিল। সাধারণ মানুষ বের হয়নি বললেই চলে। তবে দু’ একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে।

বনগাঁ এসডিও দফতরে আগের রাতেই থেকে যান কর্মীরা। ছবি: পার্থসারথি নন্দী
মধ্যমগ্রামে সকাল আটটা নাগাদ পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বনধ সমর্থকদের। হালিশহরে এক প্রধান শিক্ষককে নিগ্রহ করে বনধ বিরোধীরা। হাবরায় এ দিন বন্ধ সমর্থকেরা রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশ তাঁদের হটিয়ে দেয়। নিমতায় সিপিএমের একটি মিছিল ফিডার রোড ধরে যাচ্ছিল। সে সময় কালচার মোড়ের কাছে তৃণমূল সমর্থকেরা সেই মিছিলে হামলা করে বলে অভিযোগ। সিপিএমের নিমতা-১ লোকাল কমিটির সম্পাদক অশোক সরকার জখম হন। নিমতা পোস্ট অফিসের সামনে সিপিএম পার্টি অফিসে তৃণমূল হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ভাঙচুর হয় পার্টি অফিসের চেয়ার-টেবিল। তবে বনধে পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলের সীমান্ত বাণিজ্য। এ বিষয়ে শুল্ক দফতরের সহকারী কমিশনার শুভেন দাশগুপ্ত বলেন, “সীমান্ত বাণিজ্যের কাজে বনধের কোনও প্রভাব পড়েনি। অন্যান্য দিনের মতই স্বাভাবিক ছিল কাজকর্ম। এ দিন দুপুর ১টা পর্যন্ত ১৫০টি পণ্য ভর্তি ট্রাক বেনাপোলে ঢুকেছে। এসেছে প্রায় ৫০টি ট্রাক।” পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্বপন শেঠ বলেন, “এই প্রথম বনধে স্বাভাবিক থাকল সীমান্ত বাণিজ্য। যা নিঃসন্দেহে বন্দরের ভাবমূর্তি বাড়াবে ব্যবসায়ীদের কাছে।”
বনধ উপেক্ষা করে ক্লাস করে নজির সৃষ্টি করল বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালির ন্যাজাট নেতাজি বিদ্যামন্দিরের ছাত্ররা। শিক্ষক-শিক্ষিকা-সহ শিক্ষাকর্মীরাও হাজির ছিলেন স্কুলে। একই ছবি দেখা গিয়েছে উত্তর আখড়াতলা সহদেব মেমোরিয়াল, বাউনিয়া হাইস্কুল, বাদুড়িয়া এম এল গার্লস হাইস্কুলেও। তবে অধিকাংশ যানবাহন বন্ধ থাকায় অনেক স্কুলেই পৌঁছতে অসুবিধার সম্মুখীন হয় ছাত্র-ছাত্রীরা। অনেক জায়গায় আগের দিন থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা থেকে গিয়েছিলেন স্কুলে। বনধে ব্যারাকপুর-কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে প্রায় সব কলকারখানা খোলা ছিল। কিন্তু গণ্ডগোলের আশঙ্কায় ছুটির মেজাজেই কাটিয়েছেন সাধারণ মানুষ। হাজিরা অন্যদিনের তুলনায় কম থাকলেও খোলা ছিল সরকারি অফিস।

সন্দেশখালিতে স্কুল চলছে পুরোদমে। ছবি: নির্মল বসু
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বন্ধের ছবি ছিল কমবেশি একই রকম। ক্যানিং মহকুমায় বাস বন্ধ থাকলেও ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। রাস্তায়, সরকারি অফিসে বা স্কুলে লোকজন ছিল কম। ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ ও দুই মহকুমা এলাকায় দোকানপাট অধিকাংশ ছিল বন্ধ। ছিল হাতে গোনা কিছু সরকারি ও বেসরকারি বাস। ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “৯টি ব্লকের মধ্যে ৪টি ব্লকে ১০০ শতাংশ উপস্থিতি এবং বাকি অফিস-কাছারিগুলিতে ৯০ শতাংশ কর্মীদের হাজিরা দিয়েছেন।” জেটিঘাটগুলিতে ফেরি সার্ভিস চলাচল করলেও যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। অফিস-কাছারিতে সাধারণ মানুষের সংখ্যা ছিল নগণ্য। অনেকেই রাতে থেকে যান অফিসে। একসঙ্গে পিকনিকের মেজাজেও কাটিয়েছেন অনেকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.