দু’তিনটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘটের প্রথম দিন নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ ছিল আর পাঁচটি ছুটির দিনের মতোই। রাজ্য সরকারের অধিকাংশ অফিস কাছারিই খোলা ছিল। সরকারি কর্মীদের হাজিরার হার ছিল স্বাভাবিক দিনের থেকেও বেশি। কিন্তু সেই সব অফিসে দেখা মেলেনি পরিষেবা প্রত্যাশী সাধারণ মানুষের। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাঙ্ক, ডাকঘর, বিমা, ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেডের অফিস খোলেইনি। বন্ধ ছিল অধিকাংশ স্কুল, কলেজ, দোকানপাট, বাজার। বিচ্ছিন্ন ভাবে দু’একটি সরকারি বাস চললেও বেসরকারি বাস পথে নামেনি। তিনটি এলাকায় রেল অবরোধ করা হলেও দ্রুত পুলিশ সে সব তুলে দেওয়ায় ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু ট্রেনও ছিল প্রায় যাত্রীশূন্য। দুই জেলায় মোট তিনটি ঘটনায় মোট ৪১ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার মধ্যে নদিয়া জেলার ৫ জন। বাকি ৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে মুর্শিদাবাদ থেকে।
নদিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন সরকারি কর্মীর হাজিরা ছিল শতকরা ৯৬ ভাগ। জেলাশাসক অভিনব চন্দা বলেন, “চাপড়া ব্লক যুব কল্যাণ দফতরের কর্মীদের হেনস্থা করেন ধর্মঘটের সমর্থকরা। এ ছাড়া এ জেলায় অন্য কোনও ঘটনা ঘটেনি। সরকারি কর্মীদের হারও ছিল অন্য দিনের থেকে বেশি।” জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার নদিয়ায় সরকারি কর্মীর হাজিরার হার ছিল শতকরা ৮১ ভাগ। সেখানে এদিন সরকারি কর্মীর হাজিরার হার ছিল শতকরা ৯৫ ভাগ। নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “জেলায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” |
মুর্শিদাবাদেও একই চিত্র। বহরমপুরের মহকুমাশাসক অধীর বিশ্বাস বলেন, “এ দিন সরকারি কর্মীদের হাজিরা ছিল একশো ভাগ।” পাশের লালবাগ মহকুমাশাসক চিরঞ্জীব ঘোষ বলেন, “এক জন বাদ দিয়ে সব সরকারি কর্মীই এ দিন দফতরে হাজির ছিলেন।” কান্দির মহকুমাশাসক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “হাজিরা শতকরা ৯৮ ভাগ।” জঙ্গিপুর ও ডোমকল মহকুমাতেও সরকারি কর্মীদের হার ছিল কমবেশি একই রকম।
মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “সাগরদিঘিতে ৩০ জন বন্ধ সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বহরমপুরের চুনাখালি এলাকায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ এ দিন সমশেরগঞ্জের বাসুদেবপুর, সাগরদিঘি ও বেথুয়াডহরি মিলিয়ে তিনটি স্টেশনে মোট তিনটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন অবরোধ করা হয়। তবে পুলিশ ধর্মঘটের সমর্থদের দ্রুত সরিয়ে দেয়। কৃষ্ণনগর পালপাড়া মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যে পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়। ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
এ দিন সকালে জঙ্গিপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী সৈয়দ সাদেক রিটু নিজের গাড়িতে করে বহরমপুর যাওয়ার পথে সাগরদিঘিতে ধর্মঘট সমর্থকদের হাতে হেনস্থা হন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় সিপিএমের সাগরদিঘি জোনাল সম্পাদক পরেশ দাস-সহ মোট ৩০ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ইসলামপুর থানা এলাকা থেকে তিনটি গাড়িতে করে তৃণমূল সমর্থকরা রেজিনগর বিধানসভার উপনির্বাচনের মিছিলে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, নিমতলা-চুনাখালির মোড়ে তাঁরা ধর্মঘট সমর্থকদের দ্বারা আক্রান্ত হন। তাঁদের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। |
সিটুর মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক তুষার দে ভাঙচুর ও হেনস্থার ওই দু’টি ঘটনার কথা অস্বীকার করে বলেন, “বিনা কারণে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বন্ধ অসাধারণ সাফল্য লাভ করেছে। মঙ্গলবার থেকে মাইক প্রচার করে বন্ধ ভাঙতে পুলিশ তৃণমূলের ভূমিকা পালন করেছে।” অন্য দিকে তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মহম্মদ আলি বলেন, “বন্ধে আংশিক প্রভাব পড়েছে। রাস্তায় বাস লরি চলেছে। বেশির ভাগ স্কুল কলেজ ছিল খোলা।” নবগ্রামের অমৃতকুণ্ডু হাইস্কুলের শিক্ষক সৌমেন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা চার শিক্ষক বন্ধের আগের রাত স্কুলে কাটিয়েছি। বন্ধের দিন প্রায় দেড়শো ছাত্রছাত্রী নিয়ে সব ক্লাস করেছি।” হরিহরপাড়ার বহড়ান হাইস্কুলের শিক্ষক মুকুল সরকার বলেন, “তালা না খোলায় স্কুলের দরজা থেকে ১৪ জন শিক্ষক বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছি ।” তবে মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার ৫টি ব্লকের অধিকাংশ দোকনপাটই ছিল খোলা।
বেলা বাড়লে কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডে হাজির হন কারিগরি শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস ও রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক গৌরীশঙ্কর দত্ত-সহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। রাস্তার পাশে দীর্ঘ সময় তাঁরা বেঞ্চ পেতে বসে থাকেন। তাঁদের উদ্যোগে যাত্রী বোঝাই হয়ে একটি বাস করিমপুর রুটে রওনা হলেও অন্য রুটে বাস চলতে দেখা যায়নি। মুর্শিদাবাদ জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক তপন অধিকারী ও নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির পক্ষে অসীম দত্ত বলেন, “কর্মীরা ধর্মঘট করায় বাস চালানো যায়নি।” সিটুর নদিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক এস এম সাদি বলেন, “বন্ধ সর্বাত্মক। মন্ত্রীরা রাস্তায় নেমেও সাধারণ মানুষের স্বতঃর্স্ফূত বন্ধকে বানচাল করতে পারেননি।”
|