|
|
|
|
রাস্তাঘাট ফাঁকা, পূর্বে ব্যাহত জনজীবন
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস’ দিলেও ঝুঁকি নিল না কেউ। রাস্তাঘাটে যানবাহন না চলায় বুধবার শ্রমিক সংগঠনের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহতই হল পূর্ব মেদিনীপুরে।
স্কুল-কলেজে শিক্ষক-শিক্ষিকারা এলেও পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো কম। সরকারি অফিস খোলা থাকলেও ব্যাঙ্কের শাখা অফিসগুলি বন্ধ ছিল। এমনকী তমলুকের প্রধান ডাকঘর, জেলা আদালতের কাজও বন্ধ ছিল। কাঁথি শহরের বড় ডাকঘরের সামনে ধর্মঘট সমর্থনকারী ডাককর্মীদের সঙ্গে বনধ বিরোধী তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে এক ডাককর্মী আহত হন। আবার ময়নার দেউলি আদর্শ হাইস্কুলে শিক্ষকদের ঢুকতে বাধা দেন সিপিএম সমর্থকেরা। পরে ময়না থানার পুলিশ এসে বনধ সমর্থকদের সরিয়ে শিক্ষকদের স্কুলে ঢোকার ব্যবস্থা করে। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ কুমার জৈন অবশ্য বলেন, ‘‘পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে। বনধকে কেন্দ্র করে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কেউ গ্রেফতার হয়নি।”
এ দিন সকাল থেকে জেলার হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক, খড়্গপুরগামী ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক, হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক-সহ অধিকাংশ রাস্তায় বেসরকারি বাস, ট্যাক্সি বা মালবাহী লরি-ট্রাক চলাচল করেনি।
হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়কে হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি বাস চলে। দিঘা-হাওড়া, হলদিয়া-কুকড়াহাটি রুটে কয়েকটি বেসরকারি বাস চলে মাত্র। বাসমালিকদের বক্তব্য, রাস্তাঘাটে লোকজন ছিল না। ফাঁকা বাস চালালে ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী। ভাঙচুর-ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যতই ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিন না কেন, বাস্তবে তা কার্যকর করা কঠিন বলেই ধারণা বাসমালিকদের। |
এগরা বাসস্ট্যান্ডে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বাস।—নিজস্ব চিত্র। |
তৃণমূল প্রভাবিত পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সুকুমার বেরার দাবি, “প্রশাসন থেকে আমাদের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। সরকার যে ক্ষতিপূরণ দেবে এমন নিশ্চয়তাও আমরা পাইনি। ফলে ঝুঁকি নেননি কেউ। বাসকর্মীরা আর এ দিন আসেননি।” সিটুর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি নির্মল জানার অবশ্য দাবি, “জেলার সমস্ত পরিবহণ কর্মীরা ধর্মঘটে সামিল হওয়ায় পরিবহণ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে।” এ দিন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর, হলদিয়া-পাঁশকুড়া, তমলুক-দিঘা-সহ সমস্ত শাখায় ট্রেন চলাচল করলেও যাত্রী সংখ্যা ছিল যথেষ্ট কম।
জেলা সদর তমলুক শহর-সহ পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, নন্দকুমার, মেচেদা, কাঁকটিয়া, চণ্ডীপুরের মতো এলাকায় বড়-বড় দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে, ছোট দোকান ও সব্জি বাজার বসেছিল অনেক জায়গায়। এগরার মতো বেশ কিছু জায়গায় আবার অধিকাংশ দোকানই খোলা ছিল। হলদিয়া ও কোলাঘাট শিল্পাঞ্চলের কলকারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল বলেই দাবি কর্তৃপক্ষের। জেলার সমস্ত সরকারি অফিস খোলা ছিল। স্কুল-কলেজেও শিক্ষক-শিক্ষিকারা এসেছিলেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মলয় হালদার বলেন, ‘‘সরকারি কর্মীদের গড় উপস্থিতির হার ৮৮ শতাংশ। জেলার কোথাও অফিসে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আসেনি।”
গণ্ডগোল হয় শুধু কাঁথিতে। তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি কাঁথি শহরেও এ দিন বেশ কিছু দোকানপাট বন্ধ ছিল। কাঁথি শহরের বড় ডাকঘরের সামনে গেট অবরোধ করেছিলেন বনধ সমর্থনকারী ডাককর্মীরা। সেই সময় বনধের বিরুদ্ধে তৃণমূলের একটি মিছিল বেরিয়েছিল। মিছিল থেকে ধমকানো হলে ডাককর্মীরা গেট ছেড়ে দেন। পরে মিছিল চলে যাওয়ার পর ফের কিছু ডাককর্মী গেট অবরোধ করেন। তখন তৃণমূল কর্মীরা ছুটে এলে দু’পক্ষে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এতে অজিত রানা নামে এক ডাককর্মী আহত হন। তাঁকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বনধের বিরোধিতা করে কাঁথিতে ফের একটি মিছিল করে তৃণমূল। সেখানে নেতৃত্ব দেন তৃণমূল বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী, জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন, কাঁথির পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী প্রমুখ।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় নামতে বারণ করা সত্ত্বেও মিছিল হল কেন? থতমত মামুদ হোসেনের জবাব, “আমরা মিছিল করেনি। সিপিএমের লোকেরা জোরজুলুম করছে কি না দেখতে রাস্তায় নজরদারি করছিলাম।” |
|
|
|
|
|