একুশে ফেব্রুয়ারি ফিরে এল। আর এক বার ‘ভাষা দিবস’ উদযাপন। আর এক বার নৃত্যে-গীতে-কবিতায় মাতৃভাষার প্রতি আবেগে থরথর এক উৎসব। প্রতি বারের মতো এ বারেও সেই ভাষা-শহিদদের স্মরণে বুকভরা ব্যথা, মঞ্চে-ময়দানে সেই গাল ভরা কথায় আবেগের ঝড়, আর দিকে দিকে সেই মরমিয়া গীত ‘আ মরি বাংলা ভাষা...’ অথচ অন্য দিকে দিনে দিনে আমাদের বাংলা ভাষার দীনতা বেড়ে চলেছে।
গত কয়েক বছরে বাংলা ভাষায় পত্রপত্রিকার প্রকাশনা বেড়েছে, সিনেমা সাহিত্যে বাংলা ও ভাষার কদরও ক্রমবর্ধমান। কিন্তু একটা চমকপ্রদ বিষয় হল মৌখিক বাংলা ভাষার অধঃপতন। এর অন্যতম কারণ সম্ভবত মোবাইলের সৌজন্যে অতিকথন, কম দামে হরদম কথা বলার কারণে অধিকাংশ মানুষ খেয়াল করেন না কথার দাম কমে যাচ্ছে, কথার দমও কমে যাচ্ছে। তার পাশাপাশি এ কথাও বলা দরকার যে, চলভাষের কারণে অহরহ মিথ্যে কথা বলার রেওয়াজও বেড়েছে। |
এ ছাড়াও ইদানীং এক শ্রেণির মানুষ বড্ড বেশি কথা বলছেন। দিকে দিকে বক্তার ছড়াছড়ি, বিশুদ্ধ শ্রোতা নেই বললেই চলে। প্রত্যেকে নিজের কথা শোনাতে ব্যস্ত। রাজনৈতিক বক্তৃতা এবং তাকে ঘিরে চায়ের টেবিলে, রোয়াকে আমজনতার আর এক দফা বক্তৃতা, এ তো ছিলই। সম্প্রতি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে প্রায়দিন সন্ধ্যায় যে কথা চালাচালির অনুষ্ঠান হয়, সেখানেও কথা বলার প্রতিযোগিতা এত তীব্র হয়ে ওঠে যে তাকে ‘বাক্বাজার’ বলাই শ্রেয়।
বেশ কয়েক বছর আগে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘বেশি কথা বলা মানেই ভাল কথা বলা নয়, আবার কম কথা বলা মানেই যে ভাল, তা-ও নয়। ভাল কথা বলা একটা অন্য বিষয়, সেটা একটা আর্ট, তার সঙ্গে কম-বেশির সম্পর্ক নেই।’
ইদানীং সর্বত্র যেটা চলছে, সেটা আর যা-ই হোক আর্ট নয়। একমাত্র বক্তাই হয়তো ‘টক-শো’-তে বলতে পেরে আহ্লাদে আটখানা হচ্ছেন, বাকিরা কেউ শুনছেন না। প্রত্যেকের আস্তিনে লুকোনো স্বযুক্তি, কূটজাল প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে মুখের সঙ্গে অবাধে হাত-পা ছোড়াছুড়ি পর্যন্ত। রাজনীতির ময়দানে তো কান পাতাই দায়। কথার খেলাপ বহু পুরনো, ইদানীং যোগ হয়েছে কু-কথার খেউড়। বাস্তবিক, মৌখিক বাংলা ভাষা আজ ব্যাধিগ্রস্ত। ভব্যতার সংকট থেকেই ভাষার এরূপ সংকটজনক পরিস্থিতি।
আমাদের সব কিছুই যখন রাজনীতি-নির্ভর, তখন রাজ্য-রাজনীতির কারবারিদের চিন্তাভাবনাতে শুদ্ধতা না এলে বোধহয় ভাষাতেও বিশুদ্ধতা আসবে না। দিকে দিকে শুধু কথা বলাই সার হবে, কথার পিঠে কথা দিয়ে কুকথার চাপানউতোরে হয়তো হাততালি জমবে, হয়তো বিস্তর বাক্জালে নিজেকে তাৎক্ষণিক বাগ্মী বলেও প্রমাণ করা যাবে। কিন্তু এ সবের ঊর্ধ্বে আমাদের এখন মনে রাখা প্রয়োজন রবীন্দ্রনাথের সেই কালজয়ী কথাটি ‘বাজে কথাতেই মানুষ চেনা যায়’।
আবীর কর। ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর
|
সোমা মুখোপাধ্যায়ের প্রতিবেদন ‘সেবিকা-সঙ্কট’ (২১-১) পড়লাম। ‘আমাদের রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে প্রায় তিন হাজার নার্সের ঘাটতি’। যাঁরা ওয়েস্ট বেঙ্গল নার্সিং কাউন্সিলের পরীক্ষায় ৬৫ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ, তাঁদের নাম বিবেচিত হয় না। অথচ নার্স নিয়োগের ক্ষেত্রে বিচার করা হচ্ছে হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার মার্কশিট! যাঁরা একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির মিলিত সিলেবাস অনুযায়ী উত্তীর্ণ, তাঁদের তুলনায় কেবল দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসের পরীক্ষার্থীরা তো বেশি নম্বর পাবেনই!
যাঁরা পাশ করে ৫-৭ বছর ধরে বেসরকারি হাসপাতালে (সরকারি চাকরির সুযোগ না-পেয়ে) হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে পরিষেবা চালু রেখেছেন, এ বার তাঁদের সরকারি হাসপাতালে সুযোগ দিন। তা না-করে ‘পুরুষ নার্স’ আনার চিন্তা কতটা যৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত?
হরেন্দ্রনাথ গাঁতাইত। কলকাতা-৩২ |