সম্পাদকীয় ১...
পাণ্ডববর্জিত
লা চলে রাজদণ্ড দেখা দিল, পোহালে শর্বরী, বণিকের মানদণ্ড রূপে। ডেভিড ক্যামেরনের তিন দিনের ভারত সফরে সহযাত্রী ছিলেন শতাধিক ব্রিটিশ কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরা। ইহার আগে কোনও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এত বড় ব্যবসায়ী-গোষ্ঠী সঙ্গে লইয়া আসেন নাই। বস্তুত, ব্রিটিশ শিল্পবাণিজ্য দুনিয়ার একটি উচ্চবর্গীয় প্রতিনিধিদল যেন ভারত সফর করিলেন, নেতৃত্বে ডেভিড ক্যামেরন। ভারতে, বিশেষত পরিকাঠামো, প্রতিরক্ষা এবং বিমা ও ব্যাঙ্কিংয়ের মতো ক্ষেত্রে ব্রিটিশ পণ্য ও পরিষেবার বাজার কী ভাবে বাড়ানো যায়, তাহাই ছিল এই সফরের একটি বড় উদ্দেশ্য। পাশাপাশি ছিল ব্রিটেনে ভারতীয় বিনিয়োগের প্রসার ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পঞ্চাশ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য। অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড হেলিকপ্টার সমস্যা এই সফরের উপর রাজনৈতিক ছায়া ফেলিয়াছে বটে, কিন্তু ব্রিটেনের দিক হইতে সেই সমস্যাও মূলত অর্থনৈতিক স্বার্থের সংশ্লিষ্ট এই ‘কেলেঙ্কারি’র পরিণামে ভারতে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেসাতির সম্ভাবনা যেন কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। পাটোয়ারি বুদ্ধিই সমগ্র পর্বটিতে প্রধান চালিকাশক্তি ছিল। ক্যামেরনের ভারত সফরের আগে ঘুরিয়া গিয়াছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলাঁদ। সেই সফরে বাণিজ্য ছিল অন্তরালবর্তী। তবে সমাজতান্ত্রিক ওলাঁদ যদি ক্যামেরনের প্রতি ‘দোকানদারের জাতি’র ঐতিহাসিক অভিধাটি ছুড়িয়া দেন, তাহা হইবে চতুরতামাত্র, কারণ ফরাসিরাও ভারতে বাণিজ্যের প্রসারে উন্মুখ, বিশেষত প্রতিরক্ষার শিল্পে।
পশ্চিম দুনিয়ার নিকট ভারতের গুরুত্ব বাড়িতেছে, তাহার কারণ এই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি। বাজারের আকর্ষণেই জগৎ আবার ভারতসভায় আসন লইতে আসিতেছে। চার শতাব্দী আগে জাহাঙ্গিরের দরবারে ব্রিটিশ ‘রাষ্ট্রদূত’ টমাস রো-এর আগমনের কাহিনি মনে পড়িতে পারে, তবে তাহার পরিণামে ব্রিটিশ শাসনের ভূত দেখিবার কারণ নাই, পৃথিবী বদলাইয়া গিয়াছে, এখন ব্রিটিশ সংবাদপত্র ব্যঙ্গচিত্র ছাপে: সিংহাসনে আসীন রাজকীয় পোশাক পরিহিত মনমোহন সিংহ ও সনিয়া গাঁধীর সম্মুখে আনত অভিবাদন জানাইতেছেন ডেভিড ক্যামেরন। চিত্রের পিছনে উলটপুরাণের জ্বালা আছে। সূর্যাস্তবিহীন সাম্রাজ্য যখন নিতান্ত এক দ্বীপরাষ্ট্রে পরিণত হয়, তখন অপমানের জ্বালা অস্বাভাবিক নয়।
কলিকাতার কোনও অপমানবোধ নাই, কারণ তাহার সম্মানের বোধ নাই। ডেভিড ক্যামেরন বা ফ্রঁসোয়া ওলাঁদ কেন কলিকাতায় আসিলেন না, তাহা লইয়া এ মহানগর মোটেও ভাবিত নহে। ক্যামেরনের ‘বাণিজ্যিক’ সফর শুরু হইল মুম্বইয়ে, ইহাতেও ভূতপূর্ব সাম্রাজ্যের ‘দ্বিতীয় শহর’-এর ঈর্ষা হয় না। সাম্প্রতিক অতীতে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনায়করা কলিকাতায় আসিয়াছেন, এমন নজির বিরল বলিলে কম বলা হইবে। ২০০৫ সালে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট উগো চাভেস আসিয়াছিলেন, কলিকাতাকে হয়তো সেই স্মৃতি বুকে করিয়াই শতাব্দীর অবশিষ্ট দিনগুলি অতিবাহিত করিতে হইবে। বস্তুত, দুনিয়ার সরকারি প্রশাসন বা বেসরকারি সংস্থার যথার্থ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এই শতকে ভারতের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী হইয়াছেন এবং পশ্চিমবঙ্গ তথা কলিকাতার প্রতি অনেক বেশি উদাসীন। মুম্বই, বেঙ্গালুরু বা চেন্নাই এখন তাঁহাদের সফরসূচিতে থাকে, কলিকাতার কথা তাঁহারা ভাবেনও না। এক কালে কলিকাতা গণ্য এবং মান্য ছিল, এখন নগণ্য। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয় অবশিষ্ট দুনিয়াকে তাহার প্রতি বিমুখ করিয়াছে। এই অবক্ষয় মূলত বামপন্থীদের অবদান। প্রথমে বিরোধী এবং পরে শাসক হিসাবে তাঁহাদের নিরবচ্ছিন্ন নেতির সাধনা রাজ্যকে উত্তরোত্তর অন্ধকারে ঠেলিয়া দিয়াছে। নূতন সরকার সেই পুরানো কীর্তির সহিত নিজকীর্তি যোগ করিয়াছেন, অপাঙ্ক্তেয় পশ্চিমবঙ্গ কার্যত বিবর্জিত হইয়াছে হিলারি ক্লিন্টন ব্যতিক্রমমাত্র। দুনিয়ায় ভারতের গুরুত্ব বাড়িবে, নায়কনায়িকারা ভারতে আরও বেশি আসিবেন। পাণ্ডববর্জিত কলিকাতা আপন কূপে পরিতৃপ্ত থাকিবে। এমনকী, শহরের কৃষ্টি-গর্বিত সুধীমণ্ডলীও এই বিশ্ব-বিচ্ছেদ লইয়া ভাবিত হইবেন না। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট হইতে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট অবধি মহানাগরিকের বিপুলা পৃথিবী, বাকি দুনিয়া তাহাকে লইয়া ভাবিল কি না কী আসিয়া যায়?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.