|
|
|
|
রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা বয়কটের ভাবনা |
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সর্বাত্মক প্রভাব, বলি ১ শ্রমিক নেতা
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা দু’দিনের ধর্মঘটের প্রথম দিনে গোটা দেশে মোটের উপর জনজীবন স্বাভাবিক থাকলেও ধাক্কা খেল মূলত আর্থিক ক্ষেত্র। বিশেষত ব্যাঙ্ক, বিমা, বন্দর, কয়লাখনি এলাকায় কোনও কাজই হয়নি। এমনকী, দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বইতেও বন্ধ ছিল সব ব্যাঙ্ক। গোটা উত্তর ভারতে কোনও পেট্রোল পাম্পে তেল সরবরাহ হয়নি। আগামিকাল ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও তেল সরবরাহ না হলে এর ফল টের পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছে ধর্মঘটী শ্রমিক সংগঠনগুলি। বিশেষত পরিবহণ ক্ষেত্রে যার প্রভাব পড়বে। ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে আজ দিল্লি-সংলগ্ন নয়ডায় হিংসা ছড়িয়েছে। হরিয়ানার অম্বালায় বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় এক শ্রমিক নেতার মৃত্যু হয়েছে।
কংগ্রেস, বাম, বিজেপি— রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে ১১টি শ্রমিক সংগঠন ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। যার যেখানে প্রভাব রয়েছে, সেখানে তেমন ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। শ্রমিক নেতারা মানছেন, আগামিকাল ধর্মঘটের পরিধি আরও কমবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারকে বার্তা দেওয়া গিয়েছে বলেই তাঁদের মত। কারণ, আর্থিক ক্ষেত্র অচল হয়ে থাকার ফলে দেশের অর্থনীতির যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। আগামিকাল বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন। এ দিকে কালই সংসদ চত্বরে শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে ধর্নায় বসছেন বাম-সাংসদরা। এ বিষয়ে সংসদের দুই কক্ষেই আলোচনার জন্য নোটিসও দেওয়া হয়েছে। কাল যৌথ অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা দেওয়ার কথা। তবে ভিতরের খবর, বাম সাংসদেরা সেই বক্তৃতা বয়কট করতে পারেন। কাল সকালে ধর্নার শুরুতে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মিবর্গ দফতরের তরফে ধর্মঘটের দু’দিন সরকারি কর্মচারীদের ছুটি মঞ্জুর না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। দিল্লিতে সরকারি মন্ত্রকগুলিতে উপস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও কর্মচারী সংগঠনগুলি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্মীরা ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। সরকারি, বেসরকারি কোনও ব্যাঙ্কেই কাজ হয়নি। কারণ ব্যাঙ্কের প্রায় সমস্ত কর্মচারী সংগঠনগুলিই ধর্মঘটে অংশ নিয়েছে। তবে এটিএম থেকে নগদ টাকা তুলতে যাতে সমস্যা না হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আজ দিল্লিতে অটো-ট্যাক্সি রাস্তায় না নামায় সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। বাস কম থাকলেও স্বাভাবিক ছিল মেট্রো। কেরল, ত্রিপুরায় স্বাভাবিকভাবেই বামেদের প্রভাবে স্বাভাবিক জনজীবন অচল হয়ে পড়েছিল। শ্রীনগর, পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, কর্ণাটক, বিহার, ওড়িশাতেও ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন শহরেও বনধের প্রভাব পড়েছে। এমনকী গুজরাতেও ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। আমদাবাদের পরিবহণকর্মীরা ধর্মঘটে অংশ নেন। গুড়গাঁওতে গাড়ি শিল্পের কারখানাগুলিতে শ্রমিকরা আজ ধর্মঘটে সামিল না হলেও কাল তারা নামবেন বলে জানিয়েছেন।
এ দিন সব থেকে বেশি গোলমালের খবর পাওয়া গিয়েছে নয়ডা থেকে। এখানকার কয়েকটি রফতানি মূলক বস্ত্র কারখানায় মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। মালিকপক্ষের বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ট্রেড ইউনিয়নগুলির অবশ্য দাবি, যে সব শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়েছে, তারাই ভাঙচুর চালিয়েছে। শ্রমিকদের ক্ষোভে ইন্ধন জুগিয়েছে পুলিশের লাঠিচার্জ। ভাঙচুরের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে এই ঘটনার যুগ্ম বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।
হরিয়ানার অম্বালায় একটি বাস ডিপোর সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন কয়েক জন বনধ সমর্থক। তখনই ডিপো থেকে একটি বাস বার হচ্ছিল। এআইটিইউসি-র স্থানীয় নেতা নরেন্দ্র সিংহ বাধা দিতে গেলে বাসটি তাঁকে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
এর পরেই ক্ষুব্ধ বনধ সমর্থকেরা ওই ডিপোয় ভাঙচুর করেন। ডিপোতে অম্বালার ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের গাড়ি রাখা ছিল। বিক্ষোভকারীরা তাঁর গাড়িও ভাঙচুর করেন। হামলা হয় পাশের একটি থানাতেও। এআইটিইউসি-নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত অভিযোগ করেছেন, “ওই বনধ সমর্থককে কয়েক জন দুষ্কৃতী খুন করেছেন। যদিও অম্বালার ডেপুটি কমিশনার শেখর বিদ্যার্থী জানিয়েছেন, এটা নিছকই একটা দুর্ঘটনা মাত্র। তবে স্থানীয় পরিবহণকর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানান শেখর। আপাতত ওই এলাকায় কার্ফু জারি করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|