শাহবাগের ঢাকা
লক্ষ চিঠি উড়ল শহিদের উদ্দেশে, ঠিকানা আকাশ
রুদ্র মহম্মদ শহীদুল্লার কবিতার সেই লাইনটা আজও বাংলাদেশের তরুণদের মুখে মুখে ফেরে ‘ভাল আছি, ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।’ বুধবার শাহবাগের ডাকে শুধু ঢাকা নয়, বাংলাদেশের সর্বত্র লাখো লাখো বেলুন উত্তরপুরুষের চিঠি
নিয়ে চলল মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের আকাশের ঠিকানায়। কোনও চিঠিতে অঙ্গীকার, ‘ঘাতকদের ফাঁসির দাবি ছিনিয়ে তবেই থামা’, তো কোথাও দৃপ্ত প্রতিজ্ঞা, ‘জয় আমাদের হবেই, তোমরা নিশ্চিন্ত থেকো।’
কাল একুশে ফেব্রুয়ারি। যে ভাষা আন্দোলনের চেতনায় বাংলাদেশের সৃষ্টি, আজ তা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে শাহবাগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা পাচ্ছে এ বারের ‘একুশে’। বুধবার সকাল থেকেই হাজার হাজার স্কুল পড়ুয়ার ঢল নামে শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বরে। ইউনিফর্ম পরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই। দুপুরে সেই কিশোর-কিশোরীদের কাঁচা গলার স্লোগানেই গলা মেলায় শাহবাগ চত্বর। তার পরে বিকেল ঠিক চারটে ১৩। ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে মুখর বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম শহর থেকে এক সঙ্গে উড়িয়ে দেওয়া হল লক্ষ বেলুন। প্রতিটি বেলুনে গাঁথা একটি করে চিঠি, শহিদদের উদ্দেশে। ঠিকানা আকাশ। শাহবাগ বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক ইমরান লিখেছেন, ‘তোমরা মেঘের কোলে ঘুমিয়ে থেকো। জেগে আছে প্রজন্ম চত্বর, জেগে আছে বাংলাদেশ। আমাদের অবিচল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপ্রসূত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। এ যুদ্ধের অনুপ্রেরণা তোমরা, দিগ্নির্দেশক তোমরা।’

স্মরণে: ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেখ হাসিনার। বুধবার রাত বারোটায় শহিদ মিনারে।
আর এক সংগঠক সনিয়া লিখেছেন, ‘তোমরা শান্তিতে ঘুমোও, আমরা জেগে আছি’। মাদারিপুর থেকে আসা বৃদ্ধ সেকেন্দর আলির চিঠি তাঁর দুই শহিদ বন্ধুকে, ‘সহযোদ্ধা খোরশেদ ও আলি, তোমাদের হত্যার বিচার হবেই’। ছাত্রী সুমতির আপ্লুত উচ্চারণ, ‘আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম জেগে থাকব, তোমাদের হত্যাকারীদের ফাঁসি না দিয়ে ঘুম নেই’।
একাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসির পাশাপাশি সে দিন পাকিস্তানের সহচর, গণহত্যায় নেতৃত্ব দেওয়া জামাতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে ঢাকার শাহবাগ স্কোয়ারে ১৬ দিন ধরে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের লাখো তরুণ। দেশজুড়ে শাহবাগ যে গণজোয়ার এনেছে, সরকারকেও তার পাশে এসে দাঁড়াতে হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন’-এ সংশোধনী আনতে হয়েছে, যাতে জামাতকে কাঠগড়ায় তোলা যায়। তবে এই দলকে এখনও নিষিদ্ধ করা হয়নি। তার মধ্যেই ‘একুশে’। কাল ফের জনস্রোতে ভেসে যাবে প্রজন্ম চত্বর। আসবেন ভাষা আন্দোলনের সেনানীরা। প্রতি বারের মতো শহিদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরবেন যে সব মানুষ, তাঁরা শাহবাগেও ঘুরে যাবেন। সেখানে ডাকা হয়েছে একটি বড় সভা। সেই মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হবে নতুন কর্মসূচি। তার আগে আজ গানে-স্লোগানে-কবিতায় নতুন উদ্দীপনার আগুন ছোটে প্রজন্ম চত্বরে। ভারত থেকে বহু মানুষ এসেছেন একুশের শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে। তাঁরাও শাহবাগে এসে সংহতি জানান।

লড়াকু তুলি একুশের তোড়জোড়। বুধবার ঢাকার ভাষা শহিদ মিনার চত্বরে।
গণজোয়ারের সঙ্গে সংহতি জানাতে আজ আখাউড়া সীমান্তে সমবেত হন ত্রিপুরার মানুষ। বাংলাদেশের মানুষরাও তাঁদের সঙ্গে হাত মেলান। কবিতা পড়েন ত্রিপুরার তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী অনিল সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বার্তা পাঠ করা হয়।
ছবি: উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী

মলদ্বীপে ভারতীয় প্রতিনিধি
বুধবার মালেতে মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন বিদেশ মন্ত্রকের কিছু ভারতীয় প্রতিনিধি। এই ভারতীয় প্রতিনিধির নেতৃত্বে রয়েছে যুগ্ম সচিব হর্ষবর্ধন শ্রীংলা।মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাসিদের ভারতীয় হাইকমিশনে আশ্রয় নেওয়ার ফলে যে বিক্ষোভ ওঠে তা নিয়ন্ত্রণ আনতেই এই বৈঠক। বুধবার মলদ্বীপের একটি আদালতে মহম্মদ নাসিদের শুনানি ছিল। কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশনে আশ্রয় নেওয়ায় তাঁর শুনানি বাতিল হয়ে যায়। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ অবশ্য জানান, এই পরিস্থিতি দ্রুত মীমাংসা হলে ভারত খুশি হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.