কলঙ্কের শহরকে উপহার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
উন্নয়ন-অস্ত্রে দিল্লি বদলাতে চায় কন্দহরকেও
এক অন্য রকম বদলা! ১৪ বছর আগে যে শহর থেকে দু’জন সঙ্গীকে নিয়ে বিনা বাধায় পাকিস্তানের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছিল মৌলানা মাসুদ আজহার। যে শহরে প্রাণ হাতে করে বসে ছিলেন অপহৃত আই সি ৮১৪ বিমানের ১৭৮ জন ভারতীয় যাত্রী। সেই কন্দহরেই এ বার উন্নয়ন ও শান্তির পতাকা উড়িয়ে পাক-তালিবান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এক সদর্থক বার্তা দিতে চলেছে মনমোহন সরকার।
গত কাল নয়াদিল্লিতে ভারত, আমেরিকা ও আফগানিস্তানের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সিদ্ধাম্ত হয়েছে, আমেরিকার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কন্দহরে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গড়বে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, কাবুলে নয়, উপদ্রুত কন্দহরে এই উন্নয়নমূলক প্রকল্প গড়ার সিদ্ধান্ত, চলতি আফ-পাক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এক তো এটা ইসলামাবাদের প্রতি স্পষ্ট বার্তা যে, আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে ভারত ভবিষ্যতেও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ করবে। দ্বিতীয়ত, আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়েই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে উন্নয়নের তাস খেলার এই কৌশল নিয়েছে ভারত।
ওবামা প্রশাসনের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা রবার্ট ব্লেক, আফগান উপবিদেশমন্ত্রী জাওয়েদ লুদিন এবং সাউথ ব্লকের আফ-পাক বিষয়ক যুগ্মসচিব ওয়াই কে সিনহা এই তিন জনের উপস্থিতিতেই কাল ওই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে ভারতের সাহায্যের অঙ্ক ইতিমধ্যেই ২০ লক্ষ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। জারাঞ্জ-দেলারাম সড়ক নির্মাণ, উত্তর আফগান থেকে কাবুল পর্যন্ত বিদ্যুতের লাইন তৈরির মতো কাজ করলেও কন্দহরের জন্য এমন বড় মাপের সহায়তা প্রকল্প এই প্রথম।
আল কায়দা ও তালিবানের দীর্ঘদিনের ঘাঁটি ও বিশ্বে সন্ত্রাস পাচারের অন্যতম কেন্দ্রকেই কেন বেছে নেওয়া হল এ বার? ১৯৯৯-এর ২৪ ডিসেম্বর কাঠমান্ডু থেকে নয়াদিল্লিগামী বিমান ছিনতাই করে পাক জঙ্গিরা প্রথমে লাহৌরে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই কন্দহরেই বিমানটিকে নিয়ে গিয়ে তারা ছাড়িয়ে নিয়েছিল মৌলানা মাসুদ আজহারের মতো জঙ্গিদের। ভারতের রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা ও কূটনীতির ইতিহাসে সেই দিনটি এখনও একটা কালির ছোপ।
কিন্তু গত ১৩ বছরে পরিস্থিতি বদলেছে অনেকটাই। ওসামা বিন লাদেনের হত্যার পরে পাক-মার্কিন সম্পর্কেও কিছুটা চিড় ধরেছে। আগামী বছর আফগানিস্তান থেকে সেনা ফিরিয়ে নিচ্ছে আমেরিকা-ব্রিটেন। এই টালমাটাল সময়ে স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে অনেক উৎসাহী পক্ষ।
ইসলামাবাদ অবশ্যই তারই একটি। হোয়াইট হাউস ও সাউথ ব্লক দু’তরফেই আশঙ্কা, আবারও তালিবানি সন্ত্রাসের দিনগুলিতে ফিরতে পারে এই দেশ। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদেরও বক্তব্য, মার্কিন-ব্রিটিশ সেনা সরে যেতেই আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ায় পাক ভূমিকা ক্রমশ বাড়বে। ফের মাথাচাড়া দেবে সন্ত্রাসের পাক-তালিবান নেটওয়ার্ক।
ভারতের পক্ষে এটা গভীর উদ্বেগের। সম্প্রতি চেকার্সে আফগান ও পাক প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বৈঠকে নয়াদিল্লির অস্বস্তি বেড়ে যায় আরও। ক্যামেরনের সদ্যসমাপ্ত ভারত সফরে অবশ্য বিষয়টির ফয়সালা করেছে ভারত। তবে এরই সঙ্গে আমেরিকার সঙ্গে এই যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে আফগানিস্তানের ভবিষ্যত প্রক্রিয়ায় নিজেদের ভূমিকা প্রতিষ্ঠা করে রাখল সাউথ ব্লক।
এবং তা করা হল সেই কন্দহরেই, সন্ত্রাস প্রতিরোধে উন্নয়নের দাওয়াই যেখানে সবচেয়ে বেশি জরুরি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.