|
|
|
|
ঝান্ডা হাতে কেউ রাস্তা আগলে নেই, তবু ছুটিই কাটাল জনতা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পথে নেমে বাস রোখার চিত্র নেই। অফিসে যেতেও বাধা পেতে হয়নি। জোর করে দোকানের শাটার নামাতে দেখা যায়নি কাউকে। তবু সুনসান পথঘাট। পড়ুয়া আসেনি, তাই স্কুল বন্ধ। ফাঁকা স্টেশন চত্বর। দোকানপাটও বন্ধ অনেক জায়গাতেই। বুধবার সারা দিন কালনা, কাটোয়া ও বর্ধমান শহরের অনেক জায়গাতেই ছিল এমন পরিস্থিতি।
বন্ধ উপলক্ষে নিখাদ ছুটি কাটানোর সুযোগ হাতছাড়া করলেন না অনেকেই। শুধু সরকারি দফতরগুলিতে স্বাভাবিক রইল হাজিরা। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “জেলার গ্রামীণ এলাকায় বন্ধকে কেন্দ্র করে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কেউ কোথাও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি। অফিস-কাছারিতে শান্তিতে কাজ হয়েছে।”
বর্ধমান শহরে এ দিন বন্ধে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। বি সি রোড এবং জি টি রোডে দোকানপাট অধিকাংশই বন্ধ ছিল। শহরের কয়েকটি জায়গায় অবশ্য বাজার-দোকান খুলেছিল। সকালে কিছু বাস পথে নামলেও যাত্রী না মেলায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে পড়ে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল অন্য দিনের তুলনায় যথেষ্ট কম। |
|
|
বুধবার বন্ধ ছিল এই স্কুল। পরে মহকুমাশাসকের নির্দেশে খুললেও ক্লাস হয়নি।
(ডান দিকে) সুনসান জি টি রোড। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও উদিত সিংহ। |
|
কালনা শহরও এ দিন ছিল বেশ সুনসান। যে খেয়াঘাট দিয়ে প্রতি দিন বর্ধমান ও নদিয়া জেলার কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন, সেই ঘাট বন্ধ ছিল। অনেক বাসই সারা দিন কালনা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিল। কাজ হয়নি কালনা আদালতেও। অধিকাংশ আইনজীবীই আসেননি। চকবাজার, ইন্দিরা বাজারা-সহ নানা বাজারে নামমাত্র দোকানপাট খোলা ছিল। মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম বাজারে আশি শতাংশ দোকান বন্ধ ছিল। মালডাঙা বাজারেও বহু দোকান খোলেনি। মন্তেশ্বরের নানা রুটে সকালে বাস চলালেও বেলায় বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার বন্ধের সমর্থনে কালনা শহরে সিটু একটি মিছিল করে। কিন্তু এ দিন কাউকে রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। মহকুমার কয়েকটি এলাকায় দোকানপাট খোলা রাখতে পথে নামেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা।
কাটোয়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কুমোরপাড়ায় আর্যবঙ্গ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গোবিন্দচাঁদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা এ দিন গিয়ে দেখে, স্কুল খোলেনি। অভিভাবকেরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। পরে পুলিশ গিয়ে স্কুল খোলার বন্দোবস্ত করে। কুমোরপাড়ার কাজল ঠাকুর, দেবাশিস পালেরা মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানান, ওই স্কুলে একটি অঙ্গনওয়াড়িও চলে। সকালে অঙ্গনওয়াড়ি ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্র খুলেছে দেখে তাঁরা পড়ুয়াদের নিয়ে যান। তাঁদের অভিযোগ, গিয়ে জানতে পারেন, এক শিক্ষক সকালে স্কুলে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি গেট বন্ধ করে চলে গিয়েছেন। মহকুমাশাসকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষয়টি কাটোয়া পূর্ব চক্রের স্কুল পরিদর্শককে খতিয়ে দেখতে বলা হয়। পুলিশ গিয়ে স্কুল খোলার ব্যবস্থা করে। একই রকম ঘটনা ঘটে গোবিন্দচাঁদ প্রাথমিক স্কুলেও। স্কুল পরিদর্শক অন্তরা ঘোষ বিশ্বাসের অবশ্য দাবি, শিক্ষকেরা স্কুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু পড়ুয়ারা না আসায় তাঁরা বাড়ি চলে যান।
কাটোয়ার মুখ্য ডাকঘর দুপুর পর্যন্ত খোলেনি। কিছু কর্মী দফতরের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের কাছে চাবি ছিল না। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের হস্তক্ষেপে ডাকঘর খুললেও গ্রাহকের বিশেষ দেখা মেলেনি। মঙ্গলকোটের নিগন, কৈচর, কেতুগ্রামের কান্দরা বাজার খোলা থাকলেও কাটোয়া শহরে দোকানপাট বন্ধ ছিল। |
ট্রন চললেও বন্ধের সারা দিন ফাঁকা-ফাঁকাই থাকল বর্ধমান স্টেশন |
সরকারি দফতরগুলি অবশ্য এ দিন সচল ছিল। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার কথায়, “সরকারি দফতরগুলিতে এ দিন স্বাভাবিকের থেকেও বেশি হাজিরা ছিল। বাস ও ট্রেন চলাচল করেছে। মানুষজন রাস্তায় বেরিয়ে অসুবিধায় পড়েননি।” কালনা মহকুমাশাসকের দফতরে এ দিন ৭২ জন কর্মীরা মধ্যে আসেননি মাত্র দশ জন। কাটোয়া মহকুমাশাসকের দফতরেও ৯৫ শতাংশ হাজিরা ছিল বলে জানানো হয়েছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, “বন্ধ ব্যর্থ করতে প্রশাসন নজিরবিহীন ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সকালের দিকে কিছু বাস চলেছে। তবে ট্রেন-বাসে যাত্রী ছিল না। মানুষ বাড়ি থেকে না বেরিয়ে বন্ধ সফল করেছেন।” তৃণমূলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথের পাল্টা বক্তব্য, “বাস-ট্রেনের স্বাভাবিক চলাচলই প্রমাণ করে, বন্ধ ব্যর্থ হয়েছে। অফিসে হাজিরাও স্বাভাবিক। বিক্ষিপ্ত কিছু ক্ষেত্রে বন্ধ সমর্থকেরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে মানুষ প্রতিরোধ করেছেন।” |
|
|
|
|
|