পাহাড়ে মন্ত্রীর গাড়িতে হামলা |
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের গাড়ি আটকে হামলা করা হল কালিম্পংয়ে। মঙ্গলবার বেলা সওয়া এগারোটা নাগাদ শহরের আট মাইলের কাছে প্রায় পনেরো মিনিট ধরে তাঁর গাড়ির উপরে লাঠির বাড়ি মারা হয়। বিক্ষোভকারীরা ‘বিমল গুরুঙ্গ জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তবে মোর্চার দাবি, এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল অবশ্য সোজাসুজি জানিয়ে দিয়েছেন, “মন্ত্রীর গাড়ির উপরে হামলা করার অভিযোগে সাত মোর্চা সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে।” তৃণমূল সরকারের আমলে পাহাড়ে এই প্রথম কোনও মন্ত্রীকে এমন বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল। বাম সরকারের আমলে সুকনা লাগোয়া এলাকায় তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য একটি জল প্রকল্পের উদ্বোধন করতে গিয়ে মোর্চা সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে একই ভাবে মোর্চা সমর্থকরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন গৌতমবাবুর কোনও চোট লাগেনি। তাঁর গাড়িটিও অক্ষত। |
কালো পতাকা। ফিরে যাও স্লোগান। হামলার মুখে মন্ত্রী গৌতম দেবের গাড়ি। কালিম্পঙে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
মোর্চার সঙ্গে এই সাম্প্রতিক সংঘাতের পর্বে তৃণমূল বরাবরই যে নিচু সুর ধরে রেখেছে, তা বজায় রয়েছে এই দিনও। গৌতমবাবু বলেন, “এ দিনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমাদের একটাই লক্ষ্য পাহাড়ের শান্তি বজায় রাখা এবং উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া।” গৌতমবাবু সরাসরি মোর্চার নামও করেননি। তবে তাঁর ইঙ্গিত কিন্তু মোর্চা নেতাদের দিকেই। তিনি বলেন, “বিক্ষোভকারীদের ব্যক্তিগত ভাবে তো চিনি না। তবে পাহাড়ে এখন মোর্চার প্রভাবই সব থেকে বেশি।” তাঁর বক্তব্য, “গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে কেউ আন্দোলন করতে পারেন। কিন্তু এ দিন যা হয়েছে তা ঠিক নয়। রাজ্য
সরকারের মতোই জিটিএ প্রতিনিধিদেরও পাহাড়ের শান্তি ও উন্নয়নের দায়বদ্ধতা রয়েছে।” মোর্চা নেতারা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন, মন্ত্রীকে এই দিন কালো পতাকা দেখানো হয়েছে। গৌতমবাবুর পাহাড়ে যাওয়া নিয়েও যে তাঁরা খুশি নন, তা-ও স্পষ্ট বলে দিয়েছেন তাঁরা। মোর্চার প্রচার সচিব তথা কালিম্পংয়ের বিধায়ক হরকা বাহাদুর ছেত্রীর বক্তব্য, “মন্ত্রীর গাড়ির উপরে কোনও হামলা হয়নি। এটা মিথ্যে অভিযোগ। মন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখিয়ে ‘গো ব্যাক স্লোগান’ দেওয়া হয়েছে বলে আমি শুনেছি। মন্ত্রী পাহাড়ে এসে রাজনীতি করায় প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।” গত ৯ ফেব্রুয়ারি পাহাড়ে মোর্চার ডাকা বন্ধে সারা দিন দার্জিলিংয়েই ছিলেন গৌতমবাবু। সেই দিনও বারবার চেষ্টা করলেও মোর্চা সভাপতি গুরুঙ্গের সঙ্গে তাঁর কোনও বৈঠক হয়নি। বরং মন্ত্রীর পাহাড়ে যাওয়ার সমালোচনাই করেছিলেন গুরুঙ্গ।
এ দিন সকালে পাঁচ দিন পর কালিম্পংয়ের টাউন হল ও ত্রিকোণ পার্ক থেকে গৌতমবাবুর উপস্থিতিতেই অনশন তুলে নেন লেপচারা। কলকাতায় লেপচা উন্নয়ন পর্ষদের এ দিনই সরকারি ভাবে রেজিস্ট্রেশন করা হল। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এই পর্ষদ ঘোষণার পরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে মোর্চার সংঘাত তীব্র হয়। পর্ষদের দাবিতে কালিম্পংয়ে লেপচাদের একটি সংগঠনের ৩২১ সদস্য অনশন শুরু করেন। গত সোমবার জিলবার্ট লেপচা সহ অনশন মঞ্চের ৮ সদস্য অসুস্থও হয়ে পড়েন। তাঁদের কালিম্পং হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেপচা নেতা এবং কালিম্পংয়ের পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন। অনশন তুলে নিতে অনুরোধ করেন। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেখানে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। লেপচাদের ওই সংগঠনের সভাপতি লেমসং তামসাং বলেন, “রাজ্য সরকারের কাছ থেকে সব সাহায্য পাওয়ার আশ্বাস পেয়ে আমরা অনশন তুলে নিলাম।” |