মন্ত্রী নীরব
ছাত্রভোট-বিধি তৈরি, চাড় নেই রূপায়ণে
ভোটাভুটি হলেই জয় বা পরাজয়। তাই ঝুঁকি না-নেওয়াই ভাল! বিরোধীরা যদি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে না-পারে কিংবা তা জমা দিতে না-পারে, ভোটাভুটিটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। দখলে আসে ছাত্র সংসদ।
এই ফর্মুলার সফল প্রয়োগে এসএফআই দীর্ঘদিন ধরে কলেজে কলেজে ছাত্র সংসদ দখলে রেখেছে বলে অভিযোগ শোনা গিয়েছে রাজ্যের শিক্ষাজগতে। রাজনৈতিক পালাবদলের পরে একই অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে।
ছাত্রভোটের নামে এ রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির দাপাদাপি নতুন নয়। নির্বাচনী উত্তেজনা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর ছাড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা সরাসরি জড়িয়ে পড়েন তাতে। কিন্তু ছাত্র নির্বাচনকে ঘিরে হিংসার তাণ্ডবে পুলিশকর্মীর মৃত্যু আগে কখনও ঘটেনি। গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবারের এই ঘটনা আসলে পশ্চিমবঙ্গের হিংসার রাজনীতিকেই বেআব্রু করে দিল।
ক্ষমতায় এসেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিমুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বাস্তবে তাঁর দল এর ধারকাছ দিয়েই যাচ্ছে না। স্কুল-কলেজের পরিচালন সমিতির মাথায় আগের মতোই দলের নেতানেত্রীদের বসানো হচ্ছে। যেমন, হরিমোহন ঘোষ কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। অনেক শিক্ষানুরাগীই মনে করেন, পরিচালন সমিতি দখল থেকে শুরু করে ছাত্রভোটে বিরোধীদের মনোনয়নপত্র নিতে না-দেওয়া তৃণমূল সবই করে চলেছে সিপিএমের পথ ধরেই।
ছাত্রভোটকে কেন্দ্র করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিংসা ঠেকাতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত লিংডো কমিশন। কিন্তু এ রাজ্যে আগেকার বাম সরকার সেগুলি রূপায়ণ করেনি। তৃণমূল সরকারও সেগুলি মানতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি। তবে ছাত্র-সংঘর্ষ বাড়তে থাকায় কার্যত জনমতের চাপে অভিন্ন নির্বাচনী বিধি তৈরির জন্য কমিটি গড়ে দেয় উচ্চশিক্ষা সংসদ। একটি মামলার সূত্রে কলকাতা হাইকোর্ট রায় দেয়, পুলিশের সাহায্যে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করাবেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার। যদিও নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দেয়, ওই নির্বাচন পরিচালনা করা তাদের কাজ নয়।

উচ্চশিক্ষা সংসদের কমিটি অবশ্য ছাত্রভোটের একটি বিধি ইতিমধ্যেই তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর না-করে এক বছর অন্তর ছাত্রভোট হোক। যে-সব পড়ুয়া প্রার্থী হবেন, তাঁদের ক্লাসে অন্তত ৭৫% হাজিরা থাকতে হবে। কিন্তু প্রায় সাত মাস আগে সরকারের কাছে পেশ করা হলেও সেই বিধি কার্যকর হয়নি। রাজ্য সরকারের তরফে এই নীরবতা কেন? শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই অভিযোগ, ছাত্র সংসদগুলির দখল নেওয়ার আগে তৃণমূল সরকার ওই বিধি রূপায়ণে উৎসাহ দেখাবে না। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু মঙ্গলবার এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। তবে উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিৎ বলেন, “কোনও কোনও কলেজে ছাত্রভোট ঘিরে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ ছিল। এখন ধীরে ধীরে তা উঠছে। ফলে রাজ্য সরকারও ওই বিধি রূপায়ণে সচেষ্ট হবে।”
এক সময় ছাত্র-সংঘর্ষের জন্য ঘনঘন শিরোনামে আসা শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু) সাম্প্রতিক কালে ছাত্রভোট বন্ধ করে দিয়ে এই ব্যাপারে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত গড়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কর্তৃপক্ষের এই প্রয়াসের ভূয়সী প্রশংসা করেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। এ দিন হরিমোহন ঘোষ কলেজের ঘটনায় উদ্বেগ গোপন করেননি তিনি। রাজ্যপাল সম্মেলনে যোগ দিতে নারায়ণন এখন দিল্লিতে। সেখানে বলেন, “আমি বরাবরই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রাজনীতিকরণ এবং ক্যাম্পাসে হিংসার বিরুদ্ধে। রাজ্য সরকারের এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। যে-কোনও রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে তা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। তবে এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কতটা গুরুতর, তা ফিরে গিয়ে দেখতে হবে।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানান, প্রতিটি কলেজ নিজস্ব বিধি মেনে সংসদের নির্বাচন করে। এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বলার বা করার নেই। তবে একই সঙ্গে সুরঞ্জনবাবু বলেন, “হরিমোহন ঘোষ কলেজের ঘটনা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে রিপোর্ট চাইবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সাধারণত ছাত্রভোটের দিনক্ষণ স্থির হয় কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠকে। কিন্তু ওই কলেজে তা হয়নি। উল্টে গত শনিবার কলেজ ছুটির পরে নির্বাচন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ঝোলানো হয়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিজয় আচার্য এ কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকে নির্বাচনের দিন স্থির করতে অনেক সময় লাগে। তাই গত বারেও বৈঠক করে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়নি। তবে পরিচালন সমিতির সভাপতি ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে আলোচনা করেই সব স্থির হয়েছে।”

অশান্ত শিক্ষাঙ্গন
কবে কোথায় কী ঘটনা
২৯ জুলাই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের হাতে শিক্ষা-কর্মী খুন
২৩ সেপ্টেম্বর জঙ্গিপুর কলেজ অধ্যক্ষের ঘরে ভাঙচুর
২৫ নভেম্বর বহরমপুর কলেজ সংঘর্ষ, অধ্যক্ষের ঘরে তাণ্ডব
১৩ ডিসেম্বর দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ মনোনয়ন রদ ঘিরে সংঘর্ষ, জখম ১৫
২৪ ডিসেম্বর দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়, বনগাঁ বিধায়কের উপস্থিতিতে হাঙ্গামা
২৪ ডিসেম্বর ফকিরচাঁদ কলেজ, ডায়মন্ড হারবার ছাত্র সংঘর্ষ, শহর অবরুদ্ধ
৫ জানুয়ারি রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে লাথি-ঘুঁষি
৬ জানুয়ারি গঙ্গারামপুর কলেজ শিক্ষকেরা তালাবন্দি
৭ জানুয়ারি মাজদিয়া কলেজ অধ্যক্ষকে নিগ্রহ
২০ জানুয়ারি নেতাজিনগর কলেজ ছাত্র-ভোট ঘিরে তুমুল সংঘর্ষ
৬ ফেব্রুয়ারি বিধাননগর গভর্নমেন্ট কলেজ গোলমাল, বিধায়ক উপস্থিত
৭ ফেব্রুয়ারি সরোজিনী নাইডু কলেজ উত্তেজনা, হাজির কাউন্সিলর



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.