বদলি নিয়ে প্রশ্ন, নন্দিনীর তথ্যসচিবের পদও গেল
শিল্পোন্নয়ন নিগমের দায়িত্ব আগেই কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এ বার তথ্য-সংস্কৃতি দফতর থেকেও সরতে হচ্ছে তাঁকে।
মঙ্গলবার আইএএস অফিসার নন্দিনী চক্রবর্তীকে ফের বদলি করল রাজ্য সরকার। নন্দিনীকে পাঠানো হল উচ্চশিক্ষা দফতরের অধীন পশ্চিমবঙ্গ ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার-এর সম্পাদক পদে। তথ্য সচিব পদে আসছেন অত্রি ভট্টাচার্য। নতুন সরকারের আমলে গোড়ার দিকে ১৯৯৪ ব্যাচের আইএএস নন্দিনী চক্রবর্তী একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর রীতিমতো ঘনিষ্ঠ ও পছন্দের অফিসার বলেই পরিচিত ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য
নন্দিনী চক্রবর্তী
শিল্পোন্নয়ন নিগমের (ডব্লুবিআইডিসি) ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং তথ্য-সংস্কৃতি সচিবের দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনেরই একাংশের মতে তাল কেটে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছিল কিছু দিন আগেই, যখন নন্দিনীকে শিল্পোন্নয়ন নিগম থেকে সরানো হল। মঙ্গলবার তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর অধীন তথ্য-সংস্কৃতি দফতর থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। মহাকরণের আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন, এটা শুধু রুটিনমাফিক বদলি নয়। তুলনামূলক ভাবে অনেক কম গুরুত্বের দফতরে পাঠিয়ে সরাসরি নন্দিনীর ডানা ছাঁটার বার্তাই দিল প্রশাসন। কেন? নানা প্রশ্নে সরকারের কাজকর্মের সঙ্গে মতপার্থক্য এবং সেটাকে আনুগত্যের অভাব হিসেবে গণ্য করেই নন্দিনীকে সরানো হল বলে মনে করছেন তাঁরা।
নন্দিনীদেবী প্রথম নন। সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্যের আরও কয়েক জন আইএএস এবং আইপিএস অফিসারের বদলির নিরিখে সরকারের নীতি এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যেমন, দময়ন্তী সেন। কলকাতা পুলিশের যুগ্মসচিব (অপরাধ দমন) পদে যথেষ্ট দাপটের সঙ্গে কাজ করছিলেন এই আইপিএস অফিসার। পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ তদন্তের সূত্রে তাঁকে সরকারের বিরাগভজন হতে হয় বলে ওয়াকিবহাল সূত্রের বক্তব্য। দময়ন্তীকে বদলি করে দেওয়া হয় ডিআইজি ট্রেনিং (ব্যারাকপুর) পদে। কয়েক মাসের মধ্যেই আবারও বদলির নির্দেশ। এ বারে ডিআইজি (দার্জিলিং) পদে। রাজ্য পুলিশের একাংশের বক্তব্য, অশান্ত পাহাড়ে পাঠিয়ে দময়ন্তীকে কার্যত আরও কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলতে চলেছে সরকার। একই ধরনের অভিজ্ঞতা রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। কয়েক মাস আগে তিনি ছিলেন পুর সচিব। পরে তাঁকে শ্রম দফতরের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। দফতরের কাজ ভাল করে বুঝে ওঠার আগেই ফের বদলি। এ বার আরও গুরুত্বপূর্ণ শিল্প-বাণিজ্য দফতর। হাতে গোনা কিছু দিন কাটানোর পরে আলাপনবাবুকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর হাতে এখন পুর দফতরও নেই।
আর এক আইপিএস অফিসার ভি মুরলীধর নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এডিজি (সিআইডি-১) পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। মাস কয়েক আগে তাঁকে এডিজি (এসসিআরবি) পদে পাঠানো হয়েছে। দায়িত্ব পুলিশের মহাফেজখানা দেখাশোনা করা।
নন্দিনী আজ, বুধবার থেকে যে পদে যাচ্ছেন, সেটি উচ্চশিক্ষা দফতরের অধীন একটি বিভাগ। খাতায়-কলমে তাঁর চেয়ে চার বছরের সিনিয়র উচ্চশিক্ষা সচিব বিবেক কুমারের অধীনে কাজ করতে হবে তাঁকে। প্রশাসন সূত্রের খবর, বিভিন্ন জেলার পূর্বাপর তথ্য ও ইতিহাস বই আকারে প্রকাশ করাই ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার বিভাগের মূল কাজ। এক সময় এই বিভাগে ৫০ জনের বেশি কাজ করতেন। এখন কর্মী সংখ্যা কমতে কমতে ১৬-১৭ জন।
কী কারণে নন্দিনীর সঙ্গে মতপার্থক্য হল সরকারের? সূত্রের খবর, রাজকোষ খালি থাকা সত্ত্বেও কথায় কথায় মেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন নন্দিনী। এই ধরনের অনুষ্ঠানে যে অর্থ ব্যয় হয়, তা অনেকটাই যোজনা বহির্ভূত খাতে হয়। নন্দিনী সেটা কমাতে চাইছিলেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর প্রস্তাব ছিল, ব্র্যান্ড হিসাবে পশ্চিমবঙ্গকে তুলে ধরতে একটা বড় ‘ইভেন্ট’ করা হোক। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে নন্দিনী এমন একটি অনুষ্ঠান করেওছিলেন। কিন্তু এই প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ হয়নি।
তৃতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিজ্ঞাপন নীতি নিয়ে নন্দিনী প্রশ্ন তুলেছিলেন। বৃহৎ সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে এমন কিছু সংবাদপত্রে সরকারি বিজ্ঞাপন দেওয়ার ব্যাপারে নন্দিনীর উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ, যেগুলির অস্তিত্ব নিয়েই সন্দেহ ছিল। ফলে মামলা-মোকদ্দমা হলে বিপদে পড়বেন, আশঙ্কায় ছিলেন নন্দিনী। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে মমতার বিজ্ঞাপন দেওয়ার নীতি নিয়ে মামলা হয়েওছে। মামলা করেছে সিপিএমের বাংলা মুখপত্র।
চলচ্চিত্র উৎসব নিয়েও ঝামেলা কম ছিল না। আনুষ্ঠানিক ভাবে নন্দিনী তথ্য-সংস্কৃতি সচিব হলেও কার্যত ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ, উৎসব-কমিটির এক সদস্য। বেশ কয়েকটি বৈঠকে প্রকাশ্যেই তাঁর সঙ্গে নন্দিনীর বিবাদ হচ্ছিল। নন্দিনী প্রশাসনের কাজে এই হস্তক্ষেপ পছন্দ করছিলেন না। কোন উৎসব কোন চ্যানেলে দেখানো হবে, কাদের কোন সম্মান দেওয়া হবে, সবটাই ওই সদস্যের নিয়ন্ত্রণে বলে অভিযোগ উঠছিল। শাহরুখ খানকে নিয়ে বাংলার ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ছবি বানানো নিয়েও নন্দিনী প্রশ্ন তুলেছিলেন। কাকে দিয়ে ছবিটা বানানো হবে, সেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল রাজনৈতিক স্তরে। গুজরাতে অমিতাভ বচ্চনকে দিয়ে যে ছবি বানানো হয়েছে, তাতে অনেক বেশি পেশাদারি নৈপুণ্য রয়েছে। অমিতাভ বচ্চনকে সোমনাথ মন্দিরে, গির অরণ্যে নিয়ে গিয়ে শু্যট করা হয়েছে। আর এখানে শাহরুখের শুধু একটা ‘বাইট’ নিয়ে তার সঙ্গে গ্রাম-বাংলার পুরনো ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আপত্তি করেছিলেন নন্দিনী। ক্ষুব্ধ তথ্যসচিব অনেক দিন ওই সংস্থার টাকাও আটকে রেখেছিলেন। সব মিলিয়ে সরকারের সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক অনেকটাই তিক্ত হয়ে উঠেছিল তাঁর। বদলির নির্দেশ তার উপরেই প্রশাসনিক সিলমোহর বসিয়ে দিল। তবে মহাকরণ সূত্রে জানা যাচ্ছে, নন্দিনী এ ব্যাপারে কোনও কথাই বলবেন না। যে নতুন দায়িত্বভার তাঁকে দেওয়া হচ্ছে, তিনি সেটাই গ্রহণ করবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.